কমিশনের মাথাব্যথা কোচবিহার, শুধু নিশীথের গড়েই বরাদ্দ ১১২ কোম্পানি আধাসেনা
প্রতিদিন | ১১ এপ্রিল ২০২৪
সুদীপ রায়চৌধুরী: বাংলায় লোকসভা ভোটের প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কোচবিহার কেন্দ্র নিয়েই যাবতীয় মাথ্যব্যথা নির্বাচন কমিশনের। যে কারণে প্রথম পর্বের তিন কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ২৬৩ কোম্পানির মধ্যে সবথেকে বেশি ১১২ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে কোচবিহারেই। বাকি দুই কেন্দ্র জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে মোতায়েন করা হচ্ছে ৭৫ ও ৬৩ কোম্পানি বাহিনী। বাকি ১৩ কোম্পানিকে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের আওতাভুক্ত শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের ডিজি ও রাজ্যের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা)-কে এক নির্দেশে আসন্ন রামনবমী উপলক্ষ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলার জন্য কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিলকুমার শর্মা। এ প্রসঙ্গে তিনি গতবছর রামনবমী উপলক্ষে ঘঠে যাওয়া বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে কমিশন সূত্রে খবর।
মঙ্গলবার কলকাতায় লোকসভা নির্বাচনের ম্যাপ ও গাইডলাইন নিয়ে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক অনিলকুমার শর্মা। এর পর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে বিএসএফ অতিথিশালায় বৈঠকে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। সেই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় আধাসেনা জওয়ান ও রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে রাজ্যে পৌঁছে যাওয়া ১৭৭ কোম্পানির সঙ্গে প্রথম পর্বের আগে ১৫ তারিখের মধ্যে আরও ১০০ কোম্পানি বাহিনী ঢুকে পড়ছে রাজ্যে। মোট এই ২৭৭ কোম্পানির মধ্যে প্রথম দফার জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে ২৬৩ কোম্পানি। যার অর্ধেকের কিছু কম ১১২ কোম্পানি যাচ্ছে কোচবিহারে। এই কেন্দ্রের দিনহাটা ও সংলগ্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহর সমর্থকদের মধ্যে এরমধ্যেই একাধিক অশান্তি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি গত বিধানসভা ভোটে এই জেলার শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিচালনা ও তাতে চার গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনাও বাহিনী মোতায়েনের ফর্মুলা তৈরির সময় মাথায় রাখা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে খবর।
রাজ্যে পৌঁছে যাওয়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটা অংশ ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে চলে গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রুটমার্চও শুরু করেছে জওয়ানরা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাকি ফোর্সও এলাকার উদ্দেশে রওনা দেবে বলে কমিশন সূত্রের খবর। বাকি ১৪ কোম্পানি রাখা হচ্ছে কলকাতা সহ বাকি ১৪টি পয়েন্টে। উল্লেখ্য, কোচবিহারে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লক্ষ ৬৬ হাজার ৮৯৩ জন। আলিপুরদুয়ার ১৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ২৫২ জন এবং জলপাইগুড়িতে ১৮ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৬৩ জন। প্রথম পর্বের মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪ হাজার ৪০৩, মোট বুথের সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৪।
লোকসভা ভোট শুরু হতে বাকি ন’দিন। এসময় কমিশনের দুশ্চিন্তা রয়েছে রামনবমী নিয়ে। প্রথম পর্বের ভোটের দুদিন আগে ১৭ এপ্রিল রামনবমী। প্রতিবারের মতো এবারও যা নিয়ে মিছিল ও পুজোর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন। রাষ্ট্রীয় স্বযংসেবক সংঘের যে শাখার উদ্যোগে এই রামনবমী পালন হয়ে থাকে, সেই হিন্দু জাগরণ মঞ্চের দক্ষিণবঙ্গের সংগঠন সম্পাদক তারক বারিকের দাবি, ?এবছর অযোধ্যায় রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এবার রামনবমী নিয়ে উৎসাহ কয়েকগুণ বেশি।? তিনি জানান, গত বছর রামনবমীর দিন রাজ্য জুড়ে ১ কোটি ২৫ লক্ষ শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। এবার সেই সংখ্যাটা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে সবথেকে বড় মিছিল হবে শিলিগুড়িতে। ইসলামপুরেই বিশাল মিছিল হবে। পশ্চিম মেদিনীরপুরে ২৫ হাজার বাইকের মিছিল করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কলকাতায় বাইক মিছিলে সামিল বহে ১২ হাজার মোটর সাইকেল।