এই সময়: ভোটের আগে তামিলনাড়ুতে একের পর এক জনসভা, রোড-শো করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেখানে ঘুরেফিরে উঠে আসছে কচ্চাতিবু দ্বীপের প্রসঙ্গ। বুধবার তামিলনাড়ুর জনসভায় ফের একবার কচ্চাতিবু দ্বীপ এবং রাহুল গান্ধীর ‘শক্তি’ মন্তব্য নিয়ে আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে দুর্নীতি প্রশ্নে বিঁধলেন তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে এবং তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে।মোদীর কথায়, ‘দুর্নীতির প্রথম কপিরাইট ডিএমকে-র। ওরা পুরো তামিলনাড়ুকে লুট করছে। ডিএমকে ভাষা, ধর্ম, বিশ্বাস এবং জাতপাতের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করছে। মানুষ যেদিন ওগুলো বুঝবে, ডিএমকে একটা ভোটও আর পাবে না। দশকের পর দশক ধরে ডিএমকে যে বিপজ্জনক রাজনীতি করে চলেছে, আমি সেটার পর্দাফাঁস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মোদীর দাবি, তামিলনাড়ুর ড্রাগ মাফিয়াদের সুরক্ষা দিচ্ছে ডিএমকে। টেনে আনেন কচ্চাতিবুর প্রসঙ্গও। বলেন, ‘কংগ্রেস এবং ডিএমকে-র আরও একটা হিপোক্রেসি নিয়ে এখন দেশজুড়ে ডিবেট চলছে। কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, ওরা কচ্চাতিবু দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কোন মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কারা লাভবান হয়েছিল— সে ব্যাপারে কংগ্রেস কিচ্ছু বলেনি। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন মৎস্যজীবী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর এখন কংগ্রেসে ভুয়ো সমবেদনা দেখাচ্ছে!’
মোদীর দাবি, শ্রীলঙ্কার হাতে ধরা পড়া এই মৎস্যজীবীদের ফেরানোর চেষ্টা একমাত্র করেছে এনডিএ সরকার। মোদীর এই মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অবশ্য বিতর্কে জড়িয়েছেন কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিং। দিগ্বিজয়কে বলতে শোনা যায়, ‘কচ্চাতিবু নিয়ে এত কথা কেন? আমি জানতে চাই, ওই দ্বীপে আদৌ কেউ বসবাস করে?’
দিগ্বিজয়ের এই মন্তব্য নিয়ে সরব তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই। তাঁর অভিযোগ, ‘আকসাই চিন নিয়ে কংগ্রেসকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ওখানে একটা ঘাসও জন্মায় না। এখন কচ্চাতিবু নিয়ে কংগ্রেসের প্রশ্ন, ওখানে কে বসবাস করে? এই কথাগুলোই কংগ্রেসের মানসিকতা বুঝিয়ে দেয়।’
ক’দিন আগে এক জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘হিন্দুধর্মে ‘শক্তি’ বলে একটা শব্দ রয়েছে। দেশে আমরাও এখন একটা শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছি।’ রাহুলের মন্তব্যের নিশানায় বিজেপি হলেও নরেন্দ্র মোদীর দলের দাবি, নারীশক্তিকে ধ্বংসের কথা বলেছেন রাহুল। সেই মর্মেই বুধবার ফের আক্রমণ শানান নমো।
তাঁর বক্তব্য, ‘যুবরাজ রাহুল গান্ধী হিন্দুধর্মে উল্লিখিত শক্তি ধ্বংসের কথা বলেছিলেন। কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ডিএমকে-র মানসিকতাও এমনই। ওরা সনাতন ধর্ম সম্পর্কে খারাপ কথা বলে, রামমন্দিরের উদ্বোধন বয়কট করে। ইন্ডি জোটের লোকেরা মহিলাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আম্মা জয়ললিতার সঙ্গে ডিএমকে কী ব্যবহার করেছিল, সে কথা তো সকলেই জানে! আপনারা বিজেপি এবং এনডিএ-কে আশীর্বাদ করলে আমরা সনাতন শক্তি এবং মহিলাদের সম্মান সুরক্ষিত করব।’
মোদীর দাবি, ডিএমকে তিনটি নীতির ভিত্তিতে চলে— পরিবার-রাজনীতি, দুর্নীতি এবং তামিল-বিরোধী সংস্কৃতি। জবাবে মুখ খুলেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও। দুর্নীতি বা কচ্চাতিবু প্রশ্নে জবাব না দিয়ে সরাসরি ‘মোদীর গ্যারান্টি’কে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন ডিএমকে প্রধান।
তামিলনাড়ুতে অবিলম্বে বিপর্যয় মোকাবিলার ত্রাণ বিতরণ, জাতপাতভিত্তিক জনগণনা, নির্বাচনী বন্ড বিতর্কে তদন্ত, চিনের দখল করা ভূখণ্ড ফেরানোর দাবি তুলেছেন স্ট্যালিন। সেই সঙ্গে স্ট্যালিনের খোঁচা, ‘শীতে যেমন পরিযায়ী পাখি আসে, তেমনই নির্বাচনী মরশুমে প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ু ঘুরতে আসেন। তবে, স্পেস সেক্টর এবং উৎপাদনশিল্পে তামিলনাড়ুর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মোদী।
তাঁর মতে, ‘ভারত বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে এবং তামিলনাড়ু সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আমি নিশ্চিত, তামিলনাড়ুতে যে ডিফেন্স করিডর তৈরি হচ্ছে, তা তামিলনাড়ুকে আরও উন্নত স্তরে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রপুঞ্জে এক পর আমি তামিলে কথা বলার চেষ্টা করব, যাতে বিশ্ববাসী জানতে পারে, তামিল বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ভাষা।’