নয়াদিল্লি: এর আগেও মামলাকারীদের অন্তত তিন বার সতর্ক করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে দায়ের করা মামলায় দিল্লি হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হলো প্রাক্তন সাংসদ সন্দীপ কুমারকে। পাশাপাশি বিচারপতির মন্তব্য, 'এটা কোনও জেমস বন্ডের সিনেমা নয়, যে পর পর সিক্যুয়েল হতেই থাকবে!'মঙ্গলবারই দিল্লি হাইকোর্ট কেজরির গ্রেপ্তারি 'বৈধ' বলে রায় দিয়েছে। সেখানে বিচারপতি স্বর্ণকান্তা শর্মা তাঁকে রীতিমতো তুলোধনা করে বলেন, 'উনি শুধু অপরাধ সম্পর্কে জানতেন তাই-ই নয়, উনিই সব কিছুর মূলে। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে উনি অপরাধ আড়াল করারও চেষ্টা করেছেন।' তার পর দিনই এ দিন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে তৃতীয় মামলা শুনতে বসে দিল্লি হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহন ও বিচারপতি মনমিত প্রীতম সিং-এর ডিভিশন বেঞ্চ।
এই মামলা শুনতে গিয়ে বেঞ্চ বলে, একই বিষয়ের উপরে মামলা আমরা শুনেছি। যা বলার আগেই বলা হয়েছে। তাও মামলা করছেন। এটা কি 007 সিরিজ় যে সিক্যুয়েল হতেই থাকবে!' তার পরেও সন্দীপের হয়ে তাঁর আইনজীবী বলেন, 'কেউ যদি সংবিধান মেনে কাজ না করে, সরকার যদি তা নাম মানে, আমরা তা হলে কোথায় যাব!' এতে আরও রেগে যান দুই বিচারপতি, মামকারী সন্দীপকে ৫০ হাজার টাকে জরিমানা করে বলেন, 'আমাদের রাজনীতিতে জড়াবেন না। তা করতে হলে রাস্তার ধারে গিয়ে বক্তৃতা দিন। আর এর পরেও যদি আপনি সওয়াল চালিয়ে যান, তা হলে যত কথা বাড়াবেন ফাইনের অঙ্ক তত বেড়ে যাবে।'
ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অ্যাক্টিম চিফ জাস্টিস বলেন, 'এর আগে এই আদালতই একই আবেদন সংক্রান্ত মামলা দু'বার খারিজ করেছে। তার পরও একই মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা যাতে নিয়মিত না ঘটে তাই জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে।' গত সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে কেজরিকে সরানোর দাবি জানিয়ে সন্দীপ হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন।
সেই মামলার শুনানিতে তাঁর কাছে দিল্লি হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মনমোহন জানতে চান, 'সুপ্রিম কোর্ট বা দেশের কোনও হাইকোর্ট কি আজ পর্যন্ত কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করেছে? যদি করে থাকে তা আমরা জানতে চাই।' এর পরে বেঞ্চ জানায়, কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে, তবে তাতে অনেক সাংবিধানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। তাই এই ব্যাপারেও তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হোক। এর পরেই সন্দীপের করা মামলা খারিজ করে দেয় দিল্লি হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ কেজরির গ্রেপ্তারিকে বৈধ বলার পরে তিনি বুধবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাসে রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে, শীর্ষ কোর্ট মামলা গ্রহণ করলেও জরুরি আবেদনের আর্জি শোনেনি।
এ দিকে, আপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দল ও মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন দিল্লির আপ সরকারের তফসিলি জাতি ও উপজাতি দপ্তরের মন্ত্রী রাজ কুমার আনন্দ। কারণ হিসেবে দুর্নীতিকেই দায়ী করেছেন তিনি। আনন্দ বলেন, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই দেখেই আমি আম আদমি পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম। আর আজ সেই দলই নিজেদের দুর্নীতির মাঝে খুঁজে পেয়েছে। সেই কারণেই আমি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
দুর্নীতির পাশাপাশি আপ নেতাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগও করেছেন আনন্দ। তিনি দাবি করেন, 'আম আদমি পার্টিতে দলিত সম্প্রদায়ের কোনও ব্যক্তিকে আপের নেতৃত্ব পদ দেওয়া হয় না। আমি বাবাসাহেব আম্বেদকরের নীতিতে বিশ্বাস করি। যদি আমি দলিতদের জন্য কাজই করতে না পারি তা হলে দলে থেকে লাভ নেই।' এর পরেই আপ নেতৃত্ব বলেন, সকলে তো সঞ্জয় সিং হন না। তিনি আবগারি দুর্নীতিতে ৬ মাস পর সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
এ দিন আপের সেই নেতা বলেন, 'তিহাড় তো গ্যাস চেম্বার। হিটলার জমানার সঙ্গে কোনও পার্থক্য নেই। এ ভাবে মোদী সরকার কেজরিওয়াল ও আপকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে।'