Lok Sabha Election : বং হেরিটেজ! মিটিং-মিছিলে দেশে নাম্বার টু
এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৪
তাপস প্রামাণিক
বাম জমানায় কলকাতাকে ডাকা হতো ‘মিছিল নগরী’ হিসাবে। শুধু কলকাতা কেন, গোটা রাজ্যেই মোটের উপর ছবিটা ছিল একইরকম। তার পরে সময় বদলেছে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কথায় কথায় শহর অচল করে মিটিং-মিছিল ডাকার প্রবণতা বদলেছে রাজ্যের শাসক দল। তবে লোকসভা ভোটের মরশুমে দেখা যাচ্ছে, প্রার্থীদের সমর্থনে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলের ক্ষেত্রে দেশের বেশিরভাগ রাজ্যকেই টেক্কা দিচ্ছে বাংলা।নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, ভোটের মিটিং-মিছিলের জন্য তামিলনাড়ুর পর সবথেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই। এ ব্যাপারে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলা। লোকসভা ভোটের প্রচারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলি যাতে সহজে মিটিং-মিছিলের আবেদন জানাতে পারে তার জন্য ‘সুবিধা’ অ্যাপ চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলি অনলাইনেই পাচ্ছে মিটিং-মিছিলের পারমিশন।
ফলে কোন দল, কোথায়, কখন মিটিং-মিছিল করতে চায়, তার হিসাব রাখতেও কমিশনের সুবিধা হচ্ছে। সেই রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, মিটিং-মিছিলের ব্যাপারে বাংলা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, লোকসভা ভোটের প্রথম পর্বে এখনও পর্যন্ত মিটিং-মিছিলের জন্য গোটা দেশ থেকে মোট ৭৩ হাজার ৩৭৯টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে শুধু বাংলা থেকেই এখনও ১১ হাজার ৯৭৬টি আবেদন এসেছে।
তবে এই নিরিখে সবার উপরে রয়েছে তামিলনাড়ু। সে রাজ্য থেকে মোট ২৩ হাজার ২৩৯টি আবেদন জমা পড়েছে। দেশের সবথেকে বেশি লোকসভা আসন রয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে লোকসভা আসন ৪২, সেখানে উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাটা ৮০। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ থেকে মাত্র ৩ হাজার ২৭৩টি আবেদন জমা পড়েছে মিটিং-মিছিলের জন্য। মধ্যপ্রদেশ থেকে আবেদন এসেছে ১০ হাজার ৬৩৬টি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটে মোট ৬৪৮টি আবেদন জমা পড়েছে। বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ওডিশা থেকে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৯২টি।
এই প্রবণতা দেখে অনেকে মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও ভোট প্রচারে মিটিং-মিছিলের অপরিহার্যতা এতটুকু কমেনি, অন্তত কয়েকটি রাজ্যে। সেই কারণেই রাজনৈতিক দলগুলি মানুষের কাছে পৌঁছনোর জন্য মিটিং-মিছিলের উপরই এখনও ভরসা রাখছে। মিটিং-মিছিলের পাশাপাশি ভোটের প্রচারের জন্য দেওয়াল লিখনকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটের আগে দেওয়াল দখলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেটা করতে গিয়ে অবশ্য অনেকে কমিশনের নিয়ম ভাঙছেন। তা নিয়ে রোজ অজস্র অভিযোগ জমা পড়ছে কমিশনে।
কমিশনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত নির্বাচনী বিধি ভাঙার জন্য কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় সবমিলিয়ে মোট ৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৪৬টি দেওয়াল লিখন মোছা হয়েছে। কমিশনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘এবার লোকসভা ভোট হচ্ছে এমন একটা সময়ে, যখন বেশ গরম পড়ে গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় তাপমাত্রা ৪০ পার করে ফেলেছে। মাঝে ক’দিনের জন্য মেঘলা আবহাওয়ায় গরমে লাগাম পড়েছে ঠিকই, তবে ১ জুনে যখন শেষদফার ভোট হবে, তারমধ্যে গরমের বড় মরশুম পেরোতে হবে। তারমধ্যে প্রচারে বেরিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তা সত্ত্বেও ভোটের মিটিং-মিছিল কমেনি।’
মিটিং-মিছিলের গুরুত্ব নিয়ে শাসক-বিরোধী এখানে অনেকাংশেই একমত। বিজেপি নেতা শিশির বাজোরিয়ার ব্যাখ্যা, ‘এখানে এখনও মিটিং-মিছিলের গুরুত্ব রয়ে গিয়েছে। এটা বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই আছে। এতে জনসংযোগ বাড়ে।’
তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলা এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলি রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি সচেতন। মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর কথা শুনতে চায়। সেই মতো তারা ভোটে সিদ্ধান্ত নেয়। উত্তরপ্রদেশের মতো গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে মানুষ ততটা রাজনৈতিক সচেতন নয়। সেখানে বিজেপি হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির উপরই বেশি ভরসা করে। তারা চায় না, মানুষ রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হোক।’