Calcutta High Court : আদালতে চিকিৎসকের সাক্ষ্যদান হোক অনলাইনে, দাবি সংগঠনের
এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: ফৌজদারি মামলায় সরকারি চিকিৎসকের সাক্ষ্যদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সাক্ষ্য দিতে গিয়ে প্রায়ই ঝক্কি পোহাতে হয় সরকারি চিকিৎসকদের। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় রোগী পরিষেবার। আবার চিকিৎসক সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসতে না পারলে দীর্ঘায়িত হয় মামলাও। এবার সেই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল সাক্ষ্যদান অনুমোদন করার আর্জি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন চিকিৎসকরা। কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি লিখে প্রধান বিচারপতির সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে চাইলেন তাঁরা।
গত বছর জুলাইতেই এ বিষয়ে প্রথম আবেদন জানিয়েছিল সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স (এএইচএসডি)। কিন্তু সেই লিখিত আবেদনে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। তাই সংগঠনের তরফে বুধবার চিঠি দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট মেলে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের।এএইচএসডি-র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘দ্রুত বিচার, একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার স্বার্থে আমাদের তোলা টেলি-এভিডেন্সের দাবি সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত। এতে চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত না করেই একজন চিকিৎসক ডিউটিরত অবস্থাতেই প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য দিতে পারেন।’ সংগঠনের তরফে দাবি হয়েছে, তাঁদের প্রস্তাব দ্রুত মেনে নেওয়া হোক। মানসবাবু জানান, প্রয়োজনে চিকিৎসককে সাক্ষী হিসেবে কোর্টে যেতে হবে এটাই দস্তুর। দ্রুত বিচার শেষ করার স্বার্থে আদালত যে দিন ডাকবে, সেই দিনই যাওয়ার ব্যাপারেও বিরোধ নেই।
কিন্তু গোল বাঁধে তখন, যখন সেই দিনগুলো কোনও চিকিৎসকের আউটডোর বা অপারেশন থাকে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ভর্তি হওয়া রোগীর অপারেশন বাতিল হলে বা আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে না পারলে, যে কোনও রোগীর সমস্যা হতেই পারে। এ রকম ঘটনাও আকছার ঘটে। চিকিৎসকরা বলছেন, বিশেষ করে সার্জেন বা ফরেন্সিক মেডিসিনের চিকিৎসকদের সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সাক্ষী দিতে যেতে হচ্ছে। বেশির ভাগ সময়ে আদালত তাঁর কর্মক্ষেত্র থেকে অনেকটা দূরেই হয়।
ভার্চুয়াল সাক্ষ্যদানের পক্ষে সায় দিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম (এসডিএফ)-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘মামলায় সাক্ষ্যদান সরকারি কাজ হওয়া সত্ত্বেও চিকিৎসককে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় পুরোপুরি ব্যক্তিগত স্তরে। এমনকী, রেল বা বাসের টিকিটের খরচও নিজেকে বহন করতে হয়। তাই পুরো প্রক্রিয়াটা অনলাইন হলে, তা ভালো হবে।’
সজলবাবু জানাচ্ছেন, বদলিজনিত কারণে বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে কোর্টের সমন পৌঁছয় না। অনেক সময়ে চিকিৎসকের জরুরি কাজ থাকায় তাঁরা কোর্টে হাজিরও হতে পারেন না। ফলে কোর্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে দেয় এবং নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যের মতো অনলাইন সাক্ষ্যদানের ব্যবস্থা থাকলে এ সব ঝক্কি এড়ানো সম্ভব। তাঁদের আরও দাবি, কোনও চিকিৎসককে সমনের আগে তার পুর্বনির্ধারিত জরুরি কাজগুলির কথা মাথায় রেখেই তারিখ নির্ধারণ করলে ভালো হয়, রোগীরা বঞ্চিত হন না।
এসডিএফ-এর মতোই এএইচএসডি-র চিঠিকে সমর্থন করছে চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম (ডবলিউবিডিএফ)। সংগঠনের সভাপতি কৌশিক চাকী বলেন, ‘শুধু সরকারি চিকিৎসকই নয়, প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্যও অনলাইন সাক্ষ্যদানের ব্যবস্থা থাকলে সব পক্ষেরই সুবিধা হয়। কেননা, চিকিৎসকদের সাক্ষ্যদান আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সাক্ষ্যদানের মতো বিষয় নয়। সেখানে বিশেষজ্ঞের মতামত জড়িয়ে থাকে। তাই শুনানি মিস হলে সব পক্ষেরই অসুবিধা।’