এই সময়: ২০১৯-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভোররাতে পাকিস্তানের বালাকোটে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়ে পাক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। ১৪ ফেব্রুয়ারির পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গিহানার বদলা ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোট স্ট্রাইক।ভোটের ঠিক আগে পাকিস্তানকে মুখের মতো জবাব আর দেশপ্রেমের জিগির ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে অ্যাডভান্টেজ পাইয়ে দিয়েছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই পুরোনো বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক এবং ২০১৬-এর উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ উস্কেই কি ২০২৪-এর ভোটে লাভ তুলতে চাইছে বিজেপি?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গা-গরম করা সব মন্তব্যে এমন আভাসই পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। ঠিক যেমন বৃহস্পতিবার উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে দাঁড়িয়ে নমোকে বলতে শোনা গেল, ‘মজবুত মোদী সরকারের আমলে আতঙ্কবাদীদের ঘরে ঢুকে মারা হয়।’ একই দিনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথের হুঁশিয়ারি, ‘পাকিস্তান যদি সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভারতে অশান্তি ছড়াতে চায়, ফল ভালো হবে না। তবে পাকিস্তান যদি নিজেদের মাটি থেকে সত্যিই সন্ত্রাস মুছে ফেলতে চায়, কিন্তু না পারে, তা হলে ভারত তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত...।’
বিজেপি নেতাদের এই পাক-হুঁশিয়ারিতে ভোটের গন্ধই পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ক’দিন আগেই বিদেশি মিডিয়ার একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সাহায্যে পাকিস্তানের মাটিতে তাদের ২০ জন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিকে মেরেছে ভারত। অন্য দেশের মাটিতে ঢুকে কাউকে খুন করা ভারতের নীতি নয় বলে বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি জারি করলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কিন্তু সরাসরি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেননি।
উল্টে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘এদেশে সন্ত্রাসহানা চালিয়ে জঙ্গিরা যদি পাকিস্তানে পালিয়ে যায়, তবে ভারত পাকিস্তানে ঢুকেই জঙ্গিদের মেরে আসবে।’ রাজনাথের এই মন্তব্য আদতে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের জঙ্গি খতমের অভিযোগকেই মান্যতা দেয় বলে সরব হয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু তাতে ভারতের যে বিশেষ কিছু যায় আসে না, তা বুঝিয়ে দিল মোদীর বৃহস্পতিবারের মন্তব্য।
উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনী সভা থেকে এদিন মোদীকে বলতে শোনা গেল, ‘এখন ভারতে শক্তিশালী সরকার রয়েছে। তাই আতঙ্কবাদীদের ঘরে ঢুকে মারা হয়। ভারতীয় তেরঙা যুদ্ধক্ষেত্রেও নিরাপত্তার গ্যারান্টি হয়ে উঠেছে। সাত দশক পরে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করেছে এই সরকার, তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন এনেছে। দেশে যখন দুর্বল সরকার ছিল, শত্রুরা তার পুরোদস্তুর সুযোগ নিয়েছে। কংগ্রেসের শাসনে সেনারা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটও পেতেন না। শত্রুদের বুলেট থেকে আমাদের সেনাকে বাঁচানোর কোনও ব্যবস্থা ছিল না। বিজেপি সরকারই ভারতে তৈরি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ভারতীয় সেনাকে দিয়েছে, তাঁদের প্রাণ বাঁচিয়েছে। আজ আধুনিক রাইফেল থেকে যুদ্ধবিমান— সব ভারতেই তৈরি হচ্ছে।’
পরে রাজস্থানের নির্বাচনী সভাতেও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ তোলেন মোদী। ২০১৬-এর ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের উরি আউটপোস্টে হামলা চালিয়ে ১৯ জন ভারতীয় সেনাকে মেরেছিল পাক জঙ্গিরা। তার জবাবে ২৯ সেপ্টেম্বর নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে পাক জঙ্গিদের নিকেশ করে ভারতীয় সেনা।
সেই প্রসঙ্গ তুলে রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে মোদীর খোঁচা, ‘কংগ্রেসের যুবরাজ সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ চেয়েছিলেন, এটাই ওদের দেশপ্রেম! কংগ্রেসই প্রথম ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর পাশে দাঁড়িয়েছিল।’ সন্ত্রাস এবং পাকিস্তান প্রশ্নে একই রকম কড়া রাজনাথও। বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘পাকিস্তানকে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। পাকিস্তান যদি মনে করে তারা সেটা করতে অক্ষম, তা হলে ভারতের সাহায্য নিতে পারে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় পাকিস্তানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত ভারত। ওরা আমাদের প্রতিবেশী। সন্ত্রাস থামানোর ব্যাপারে ওদের মানসিকতা যদি স্বচ্ছ হয় এবং ওরা যদি মনে করে নিজেরা সেটা পারবে না, ওরা ভারতের থেকে সাহায্য নিতেই পারে। আমরা দুই দেশ মিলে সন্ত্রাসকে নির্মূল করতে পারি। তবে সিদ্ধান্ত ওদের, আমি পরামর্শ দিতে পারি মাত্র...’
২০২৪-এর নির্বাচনে পাকিস্তান, দেশপ্রেম, হিন্দুত্ব যে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে, সেটা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপি। তবে কংগ্রেসের দাবি, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধির ভারতে বিজেপির এই অস্ত্র বিশেষ কাজে দেবে না।