• মাটির কাছাকাছি থাকেন প্রকাশ, সেটাই ইউএসপি?
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: তাঁর রাজনৈতিক জীবন অনেকটা সিঁড়িভাঙা অঙ্কের মতো। এক একটা ধাপ টপকে উপরে ওঠা। তবে প্রকাশ চিকবরাইকের উত্থান বেশ চমকপ্রদ। বিরোধীরাও মানে, চা-বাগানের রাজনীতি থেকে উঠে আসা প্রকাশ কখনও শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। উত্থানের মতোই আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে রাজ্যের শাসকদলের প্রার্থী হওয়া কম চমকের নয়।কারণ মাত্র ছ'মাস আগেই দল তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল। সেই তাঁকেই এবার লোকসভা ভোটে করা হয়েছে প্রার্থী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, এ হলো সরল পাটিগণিতে তৃণমূলের মাস্টারস্ট্রোক। প্রার্থী নিয়ে বিজেপির অন্দরে কোন্দলের সুযোগ নিয়ে এক সময়ে চা-বাগানের শ্রমিককেই নামিয়ে দেওয়া যুদ্ধে।

    গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে পদ্ম-কাঁটা বিঁধেছিল আলিপুরদুয়ারে। জেলার পাঁচটি আসনে হারে জোড়া ফুল। এরপর আদিবাসী মুখ প্রকাশকে জেলা সভাপতি করা হয়। হাতেনাতে ফল মেলে। তাঁর নেতৃত্বে জেলার দু'টি পুরসভার দু'টিতেই জয়ী হয় রাজ্যের শাসকদল। সাফল্য আসে পঞ্চায়েত ভোটেও। চা-বলয়ে প্রকাশের প্রতিপত্তি যে ক্রমে বেড়েছে, সেটাও বিলক্ষণ জানেন দলীয় নেতৃত্ব।

    প্রায় আট মাস হয়ে গেল তিনি এমপি। কিন্তু জীবনযাত্রায় তেমন বদল আসেনি প্রকাশের। আগের মতো সহজেই দেখা মেলে। যাতায়াতের পথে চেনা লোক দেখলে দু'দণ্ড সুখ-দুঃখের কথাও বলেন। প্রচারেও অন্যথা হচ্ছে না। ফলে দেরিও হয়ে যাচ্ছে পথে। লেট হলে কর্মীদের অক্লেশে সরি বলছেন।

    পরিচিতরা বলেন, প্রকাশ এতটাই ডাউন-টু-আর্থ। এমনিতে নিরামিষ খাবার পছন্দ করেন। ডাল-আলু সেদ্ধ-ভাতই রোজকার খাবার। কিন্তু প্রচারে নিয়ম মানা যাচ্ছে না। দলীয় কর্মীরা যা দিচ্ছেন, তা-ই খাচ্ছেন। বেশিরভাগ দিনই ডিমের ঝোল আর ভাত। দলের কর্মীদের সঙ্গেই প্রকাশ মাঠে বসে পড়ছেন থালা পেতে।

    রাজ্যের প্রান্তিক ব্লক কুমারগ্রামের নিউল্যান্ডস চা-বাগানের আদি বাসিন্দা, শ্রমিক পরিবারের ছেলে প্রকাশ এখনও সেখানেই থাকেন। বাবা ছিলেন কংগ্রেস নেতা। বাংলার পাশাপাশি প্রকাশ নেপালি ও সাদ্রি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। প্রকাশ বলেন, 'চা-বলয়ের মানুষ বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ। গত পাঁচ বছরে বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা চা-শ্রমিকদের জন্য কিছুই করেননি। শ্রমিকরা সবসময়ে আমাদের পাশে পেয়েছেন। তাই এখানকার মানুষ এই আসন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দেবেন।'

    বিরোধীদের আক্রমণ করতে গিয়ে হয়তো কিছু কড়া কথা বলতে হচ্ছে। তবে প্রকাশ পরিচিত বিনয়ী হিসেবেই। বলছেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনহিতকর প্রকল্পের কথাও। তবে লড়াই যে সহজ নয়, সেটাও মাথায় রাখছেন। বলছেন, 'কোনও লড়াই সহজ হয় না। তবে জনতা সঙ্গে থাকলে কোনও লড়াই আবার অসম্ভবও নয়। আমার শক্তি তো ওঁরাই।'
  • Link to this news (এই সময়)