স্টিল টাউনশিপের বাসিন্দা ববিতা চৌধুরী। বেনাচিতি বাজারে চৈত্র সেল থেকে সস্তায় কিছু জামাকাপড় ও বিছানার চাদর কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। পাশের বাড়ির এক দিদিকে বলে রেখেছিলেন, সোমবার বিকেলে সেলের কেনাকাটা করতে বাজারে যাবেন। দুপুরে মোবাইলে মেসেজ আসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। এই মেসেজেই কেনাকাটার বাজেট গেল বেড়ে।ববিতা বলেন, ‘নিজের জন্য একটি কুর্তি, ছেলের একটি টি-শার্ট, বিছানার চাদর কেনার কথা ছিল। অতিরিক্ত টাকা পেয়ে দু’টি করে কুর্তি আর বিছানার চাদর কিনে ফেলেছি।’ ববিতা একা নন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক হাজার টাকা হাতে পেয়ে অনেকেই জমিয়ে চৈত্র সেলে কেনাকাটা করছেন।
কীর্তি আজাদ ও দিলীপ ঘোষের বাগ্যুদ্ধে ভোটের বাজার যেমন জমে উঠেছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক হাজার টাকার দৌলতে সেলের বাজারের গ্রাফও তেমন ঊর্ধ্বমুখী। বেনাচিতি, চণ্ডীদাস, মামড়া সমেত প্রতিটি বাজারে সন্ধ্যা হলেই ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ছে। বিশেষ করে মহিলাদের ভিড় নজরে পড়ার মতো।
লোকসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁরা এক হাজার টাকা পেতেন তাঁরা পাবেন বারোশো টাকা। এপ্রিল মাস পড়তেই এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে বর্ধিত টাকা। আর তাতেই জোয়ার এসেছে চৈত্র সেলের বাজারে।
এ নিয়ে বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোডুইয়ের মন্তব্য, ‘মানুষের হাতে অতিরিক্ত টাকা এলে হয় সঞ্চয় করবে না হলে কেনাকাটা করবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে ঘটা করে প্রচার করছে তৃণমূল কিন্তু, মনে রাখতে হবে এটা জনগণের ট্যাক্সের টাকা।’ বেনাচিতি বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন সিনহা মহিলাদের টি-শার্ট, কুর্তি, নাইটি, ফ্রক বিক্রি করেন। একশো থেকে আড়াইশো টাকার মধ্যে দাম।
বলেন, ‘ভোটের সময়ে বাজার খুব একটা ভালো হয় না। পাড়ায় মিটিং-মিছিল, প্রচারে ব্যস্ত থাকেন অনেকে। কিন্তু এবার উপভোক্তারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক হাজার টাকা পাওয়ায় বাজার বেশ ভালো।’ সেলের ব্যবসা যে রমরম করে চলছে তা বোঝা যাচ্ছে সন্ধ্যা ৬টার পরে বাজারে পা রাখলে। ছোট থেকে বড় প্রতিটি দোকানের সামনে পোশাকের সম্ভার। ক্রেতা টানতে চড়া সুরে হাঁকছেন দোকানের কর্মীরা।
বাজার করতে আসা সঙ্গীতা সিং বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা জমা পড়েছে। আজ টাকা তুলে সেলের বাজারে এসেছি।’ নিউ টাউনশিপের বাসিন্দা সবিতা কর্মকারের স্বামী বেসরকারি কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের এক হাজার টাকা হাতে পেয়ে বলেন, ‘ফ্রিজ় কেনার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে হচ্ছিল না। জমানো কিছু টাকার সঙ্গে ইএমআইয়ে ফ্রিজ় কিনলাম। সাড়ে আটশো টাকা করে প্রতিমাসে শোধ করতে হবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে এবার থেকে মাসে এক হাজার টাকা পাব। সেই টাকায় ফ্রিজে়র কিস্তিও শোধ হয়ে যাবে।’