এই সময়: ক'দিন আগেই নাগপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিভিন্ন মামলার রায় এবং বিচারাধীন মামলা বিষয়ে সমাজমাধ্যম, গণমাধ্যমে আইনজীবীদের একাংশের যেমনখুশি মন্তব্যের প্রবণতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। আইনজীবীদের আরও সতর্ক ও সংযত হওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি।এ বার সুপ্রিম কোর্টে একটি আদালত অবমাননা মামলায় বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চও প্রায় একই সুরে অসন্তোষ জানাল সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন মামলার বিষয়ে নানা জনের আলটপকা মন্তব্য নিয়ে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বহু বিচারাধীন বিষয়ে বিকৃত তথ্যও হাজির করা হচ্ছে সমাজমাধ্যমে মন্তব্যে।
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, কোনও রায় বা নির্দেশের সমালোচনা শোনার মতো উদারতা আদালতের আছে। কিন্তু বিকৃত বা অসত্য তথ্য পরিবেশন বরদাস্ত করা হবে না। বিচারপতি বসু ও বিচারপতি ত্রিবেদীর বেঞ্চের বক্তব্য, 'ইদানীং সমাজমাধ্যমের অপব্যবহার ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছেছে। বাক-স্বাধীনতার নামে নানা বার্তা, মন্তব্য, নিবন্ধ পোস্ট হচ্ছে বহু বিচারাধীন বিষয়ে--যা বহু সময়ে আদালতের এক্তিয়ারকে খর্ব করার সমতুল।
বিকৃত তথ্য, ব্যাখ্যা হাজির করা হচ্ছে। বিচার-প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে। যা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসেছে।'
অসমের বিধায়ক তথা অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের নেতা করিম উদ্দিন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রাক্তন বিজেপি নেতা আমিনুল হক লস্করের দায়ের করা আদালত অবমাননার মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি বসু ও বিচারপতি ত্রিবেদীর বেঞ্চ সমাজমাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
লস্করের অভিযোগ ছিল, গত ২০ মার্চ ফেসবুক পোস্টে করিম উদ্দিন দাবি করেছিলেন, তিনি শীর্ষ আদালতে মামলা জিতেছেন। অথচ, ঘটনা হলো, সে দিন করিম উদ্দিনের মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল। আদৌ রায় ঘোষণা হয়নি। যদিও ৮ এপ্রিল রায়ে করিম উদ্দিন সত্যিই মামলায় জেতেন। কিন্তু তিনি তার ঢের আগেই নিজের জয়ের দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন বলেই সাব্যস্ত করেছে বিচারপতি বসু ও বিচারপতি ত্রিবেদীর বেঞ্চ।
আদালতের বক্তব্য, এ ভাবে কোনও মামলায় রায়দানের আগে কোনও পক্ষের, বিশেষত, মামলায় সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষের তরফে মিথ্যে দাবি সমাজমাধ্যমে প্রচার গর্হিত কাজ। নিয়ম অনুযায়ী নিজেদের নির্দেশের প্রতিলিপি দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পাঠানোর কথা জানিয়েছে বেঞ্চ। চার সপ্তাহ পরে অবমাননা মামলাটির শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতিই ঠিক করবেন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, বুধবারই অবসর নিয়েছেন বিচারপতি বসু। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে অসমের সোনাই কেন্দ্রে জিতেছিলেন করিম উদ্দিন। হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়ানো লস্কর। পরে আরটিআই করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লস্কর দাবি করেন, করিম উদ্দিন ভোটের আগে কমিশনে হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিয়েছেন।
গুয়াহাটি হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন ফাইল করে লস্কর সোনাই কেন্দ্রে করিম উদ্দিনের নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান। করিম উদ্দিন ওই ইলেকশন পিটিশন খারিজের দাবি করলেও হাইকোর্ট তা নাকচ করে দেয়। তিনি সু্পিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালতে করিম উদ্দিন জিতলেও আদালত অবমাননার দায়ে বেজায় বিড়ম্বনায় পড়লেন।