• সুপ্রিম কোর্টে দ্বিতীয় বাঙালি বিচারপতি কে, জোর জল্পনা
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • সুপ্রিম কোর্টে তাঁর পাঁচ বছরের কর্মজীবন বুধবার শেষ করলেন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু। তিনি অবসর নেওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টে নতুন কোনও বাঙালির অভিষেক হচ্ছে কিনা, সেই জল্পনা প্রবল হয়ে উঠেছে। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সবচেয়ে সিনিয়র হিসেবে এই মুহূর্তে সিকিম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে থাকা বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারেরই সিনিয়রিটির দিক থেকে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে বেশি বলে মনে করেন কলকাতা হাইকোর্টের অনেক আইনজীবী।এমনিতে সিকিমে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ অন্তত আগামী বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০০৬-এ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হয়েছিলেন। কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবেও তাঁকে পেয়েছে কলকাতা। পরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট হয়ে প্রথমে মেঘালয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং ২০২১-এর অক্টোবর থেকে সিকিম হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তিনি। যদিও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর সঙ্গেই বছর দু’য়েক আগে তাঁর দেশের শীর্ষ আদালতে যাওয়ার জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বাস্তবে তা হয়নি।

    বিচারপতি দত্তর সঙ্গে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল। তা-ও বাস্তবে ঘটেনি। ২০৩০-র মধ্যে দুই বাঙালির দেশের প্রধান বিচারপতি পদে বসার সুযোগও শেষ হয়েছে। আদৌ বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর পরে দেশের শীর্ষ আদালত এবং কেন্দ্র বাংলার আর কোনও নামে সিলমোহর দেবে কিনা, তা নিয়েও সংশয়ে বহু আইনজীবী।

    বিচারপতি বসুর পরে কে? এই প্রশ্নে কলকাতা হাইকোর্টের অলিন্দে অবশ্য সবচেয়ে বেশি ঘোরাফেরা করছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর নাম। ২০১১-য় কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০২১-এ মাস দশেকের জন্যে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে বিচারপতি হয়েছিলেন। সে বছরই ফেরেন কলকাতায়। এখনও কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হননি।

    এমনিতে তাঁর বিচারপতি হিসেবে কার্যকাল রয়েছে আরও বেশ কয়েক বছর। তবে এখনই যদি তাঁকে শীর্ষ আদালতে উন্নীত করতে হয়, দেশজুড়ে অন্তত ৩০ জন সিনিয়র বিচারপতিকে এড়িয়ে তা করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টেও অন্তত ৫ জন রয়েছেন তাঁর চেয়ে সিনিয়র। বিচারপতি বাগচী আইনজীবী পেশার শুরুর দিকে আন্দোলনরত কানোরিয়া জুটমিলের শ্রমিকদের গ্রেপ্তারির প্রেক্ষিতে তাঁদের জামিনের জন্যে লড়াই করেছেন।

    আবার চারু মজুমদারের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় দীর্ঘ তিন দশক বাদে দায়ের জনস্বার্থ মামলায় অন্ধ্রপ্রদেশের মানবাধিকারকর্মী তথা বিদগ্ধ আইনজীবী কেজি কান্নাভিরনের সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টে সওয়াল করেছেন (সওয়ালকারী ছিলেন অনিরুদ্ধ বসুও)। ভিখারি পাসোয়ান-সহ বহু হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনের তরফে দায়ের মামলায় আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করেছেন বাগচী। হেতাল পারেখের ধর্ষণ-খুনে সাজাপ্রাপ্ত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি রদে ২০০৪-এ সওয়াল করেছেন সুপ্রিম কোর্টেও।

    তসলিমা নাসরিনের বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ এ রাজ্যে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মানবাধিকারকর্মী সুজাত ভদ্রর মামলাতেও আইনজীবী হিসেবে সফল লড়াই ছিল তাঁর। অনেক আইনজীবীর বক্তব্য, আইনজীবী হিসেবে বরাবর মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই করার ইতিহাস সামনে এনে বিচারপতি বাগচী বিশেষ ভাবনার মানুষ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা রয়েছে কোনও কোনও তরফে।

    যদিও সেই তিনিই কিন্তু রিজওয়ানুর রহমানের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় টোডিদের হয়ে মামলা লড়েছেন। তখন মানবাধিকারকর্মীদের অনেকে আবার তাঁর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার পরেও সমাজের প্রান্তিক মানুষদের পক্ষে তাঁর অতীতের লড়াইকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কী ভাবে দেখছে, তা নিয়ে চিন্তিত তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তাঁদের কেউ কেউ মনে করাচ্ছেন, এক সময়ে আইনজীবী হিসেবে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন এবং শ্রমিকদের পক্ষে লড়াই করার ইতিহাস বা দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কয়েকটি অস্বস্তিকর রায় বিচারপতি মুরলীধরের সুপ্রিম কোর্টে উন্নীত হওয়ার পথ আটকেছে।

    এই অবস্থায় বিচারপতি সমাদ্দার নাকি বিচারপতি বাগচী--কোন বাঙালি নামে কেন্দ্রের মন গলে, সে দিকে তাকিয়ে আইনজীবীরা।
  • Link to this news (এই সময়)