• প্রাচীন ‘হংসবাহন’ শিবের গাজনে সামিল হতে ভোটপ্রচারে ছুটি
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়, কৃষ্ণনগর: ভোটের ভরা বাজার। তবু রাধেশ্যাম, বৃন্দাবন, আশোক, রাজু, বাবন, সন্তু, ভীমরা দলীয় প্রার্থীর প্রচারে সামিল হতে পারছেন না ক’দিন। রাজনৈতিক কর্মী পরিচয় ভুলে গাজনের সন্ন্যাসী হতে যে যাঁর দলের স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে যেন ক্যাজুয়াল লিভ নিয়েছেন। নবদ্বীপ থানার মাজদিয়া গাজনতলার গাজন বলে কথা!অদ্ভুতদর্শন পাথরের মূর্তি ‘হংসবাহন শিব’কে ঘিরে গাজন উৎসব হয় এই এলাকায়। আসলে যে পাথরের খণ্ডটি শিব রূপে পুজো পায়, তার আকৃতি একেবারে হাঁসের মতোই। শুধু মাথার অংশ ভাঙা। সরস্বতীর সঙ্গে হাঁস দেখে অভ্যস্ত ভক্তরা বলেন, মেয়ের (সরস্বতী) বাহন বাবার কাছে। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের ব্যাখ্যা, সরস্বতীর বাহন যেমন হাঁস, তেমনি ব্রহ্মার বাহনও হাঁস।

    বহু আগে নবদ্বীপের এই গ্রামে ব্রহ্মার মন্দির ছিল। কালের গ্রাসে সে মন্দির হারিয়ে যায়। পরে এই পাথরখণ্ড মেলে। লোকদেবতা হিসেবে পুজো শুরু হয়। এলাকার গোপ সম্প্রদায়ের মানুষ এই পাথরকে শিব জ্ঞানে পুজো শুরু করেন। চৈত্রের শেষ সপ্তাহে সেই হংসবাহন শিবকে ঘিরেই জমজমাট গাজন উৎসব হয়ে আসছে এলাকায়।’

    নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ ও তৃণমূল নেতা তপন ঘোষ এই হংসবাহন শিব পুজো কমিটির সহ-সভাপতি। তপন বলেন, ‘দলের ভোট প্রচারে যাওয়া জরুরি। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার মূল ও বড় উৎসব হওয়ায় এখানে থাকতেই হচ্ছে। আগে অলকানন্দার বিলে বছরভর এই শিবকে ডুবিয়ে রাখা হতো। শুধু উৎসবের কয়েক দিন ডাঙায় তুলে রাখা হতো অস্থায়ী মন্দিরে। কয়েক বছর আগে চালামন্দির গড়া হয়েছে। এখন সেখানেই সারা বছর দেবতাকে রাখা হচ্ছে।’

    বৃহস্পতিবার দুপুরে সে মন্দিরের সামনে প্রায় তিন তলা উঁচু বাঁশের মাচা থেকে ধারালো বঁটি ভরা বস্তার উপরে ঝাঁপ দিয়েছেন গাজনের সন্ন্যাসীরা। আজ, শুক্রবার ভোররাতে রীতি মেনে মন্দিরের চালে, খড়ের গাদায় আগুন ছোড়া হবে। কেউ কেউ শরীরে ত্রিশূল বিদ্ধ করবেন।

    এ বার গাজনের সন্ন্যাসীর সংখ্যা সব মিলিয়ে ৯০ জন। তাঁরা আলাদা রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক হলেও এই মুহূর্তে সবার একটাই পরিচয়, হংসবাহনের ভক্ত। এ প্রসঙ্গে তপন বলেন, ‘শিবভক্ত হিসেবে আর সামাজিক উৎসবে রাজনৈতিক জনসংযোগ দুটোতেই আছি।’

    ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’ প্রবাদ মাজদিয়ার গাজনতলায় খাটে না তা বোঝা গেল!
  • Link to this news (এই সময়)