• Nepal Protest: হিন্দুরাষ্ট্রের দাবিতে রাস্তায়, নেপালে আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ পুলিশ
    এই সময় | ১২ এপ্রিল ২০২৪
  • রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু। এটাই আধুনিক যুগের যেন এক অপরিহার্য শাখা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের যে দেশগুলিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকত রাজারাজরাদের হাতে তা ক্রমে তুলে দেওয়া হয় জনগণের হাতে। তবে সম্ভবত নেপালে সেই 'ক্ষমতার চাকা' ঘুরছে উলটো দিকে। আজ থেকে বছর ষোলো আগে হিমালয়ের কোলে দেশটিতে রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। দাবি উঠেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। সেই বিক্ষোভের ঠেলায় সিংহাসন ছাড়তে হয় রাজাকে। পরিষ্কার হয় প্রজাতন্ত্রের পথ। কুর্সি ছাড়েন তৎকালীন নেপালি রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ। বর্তমানে ফের জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। এবার অবশ্য উলটো দবি, 'পুরোনো সময়কে' ফেরানোর দাবি। দাবি উঠেছে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে এনে নেপালকে ফের হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করার দাবি।মঙ্গলবার নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে চলে বিক্ষোভ। প্রস্তুত ছিল পুলিশ। আগেভাগেই ব্য়ারিকেড করে দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী ব্য়ারিকেড ভেঙে নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পালটা লাঠিচার্জ, জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

    কারা এই রাজতন্ত্রের দাবি করছে?

    নেপালের সংসদে পঞ্চম বৃহত্তম দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি)। ডানপন্থী দল হিসেবেই পরিচিত এই দল। এই দলের তরফেই রাজতন্ত্রকে সমর্থন জোরদার হয়েছে। দলের কর্মী-সদস্যরাই তারাই এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাজধানীতে মিছিল করে স্লোগান দেন। তাদের একটাই দাবি, প্রজাতন্ত্রের অবসান এবং রাজতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের। বিক্ষোভ চরম আকার নিলে পুলিশও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এরপর আরও ক্ষেপে যান বিক্ষোভকারীরা। উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রবি লামিছনের পদত্যাগও দাবিও জোরদার হয়।

    এই নতুন নয় এর আগেও একাধিকবার দেশের রাজধাী কাঠমাণ্ডুতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন রাজতন্ত্রের সমর্থকরা। তাঁদের অভিযোগ, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সবগুলিই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং শাসন পরিচালনায় ব্যর্থ। দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের নিয়ে হতাশ তারা। নেপালবাসীদের একাংশ তাই রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং হিন্দু ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে ফিরিয়ে আনার দাবিকে সমর্থন করছেন। উল্লেখ্য, ২০০৫ সাল পর্যন্ত জ্ঞানেন্দ্র শাহই নেপালের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তবে, তাঁর কোনও কার্যনির্বাহী বা রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু, সেই সময় সরকার ও সংসদ ভেঙে রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের বন্দি করে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে, সেনার সাহায্য়ে তিনি দেশের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

    এর পরের বছরই রাজা তাড়ানোর আন্দোলন শুরু হয় নেপাল জুড়ে। হাজার হাজার লোকের বিক্ষোভের মুখে পড়ে, শাহ সংসদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। দুই বছর পরে নেপালি সংসদ ভোট দিয়েছিল রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পক্ষে। সেই থেকে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে সাধারণ জীবনযাপন করেন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই আম নেপালিদের একাংশের মনে প্রজাতন্ত্র নিয়ে ক্ষোভ-হতাশা তৈরি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অনুপস্থিতি। রাজতন্ত্রের অবসানের পর গত ষোল বছরে তেরোটি সরকার দেখেছে নেপাল। নেপালি জনগণের একাংশ দেশের অর্থনৈতিক অবনতি এবং ব্যাপক দুর্নীতির জন্যও রাজনীতিবিদদেরই দায়ী করছে। তাঁরা মনে করছেন, নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র ক্ষমতাভোগে আগ্রহী। সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের জোরই দেন না তাঁরা। আর এসবের কারণে নেপালের একাংশের মানুষ ফের রাজতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হয়েছেন।
  • Link to this news (এই সময়)