রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রামে যাওয়া বাম ভোট ফেরাতে মরিয়া সিপিএম। প্রচারের স্ট্র্যাটেজিতেও বদল। জনসংযোগ বাড়াতে বাড়ি বাড়ি ভোটার পিছু মার্কিংয়ের কৌশল। পাড়া ও মহল্লায় ?রাউন্ড দ্য ক্লক? জনতার দুয়ারে। বড় মিছিল-মিটিং নয়, পাড়া বৈঠকেই নজর সিপিএমের। লোকসভা নির্বাচনের(Lok Sabha 2024) প্রচারে রাজ্যে আপাতত এই কৌশলেই এগোতে চাইছে আলিমুদ্দিন। আর অলি-গলিতে চলবে পাঁচ—দশজনকে নিয়ে স্কোয়াড।
একুশের বিধানসভা ভোটে প্রাপ্ত আসন ছিল শূন্য। আর তাই চব্বিশের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বঙ্গ সিপিএম (CPM)। মেরেকেটে একটা বা দুটো আসনও যদি পাওয়া যায় কংগ্রেসকে (Congress) সঙ্গে নিয়ে সেদিকেই তাকিয়ে আছে আলিমুদ্দিন। দু’মাস আগে ব্রিগেডে দলের যুব সমাবেশ হয়েছিল। তাতে উল্লেখযোগ্য ভিড়ও ছিল। কিন্তু মীনাক্ষী, সৃজন, কলতান, প্রতীক-উর-রহমানদের সেই ব্রিগেডে লক্ষাধিক জনতার ভিড়কে ভোট-বাক্সে আনা যাবে কি না সেটা নিয়েই মূলত চিন্তিত সিপিএম নেতৃত্ব। তাই পরিবারপিছু জনসংযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের শাখা কমিটিকে।
একই সঙ্গে বিজেপিতে চলে যাওয়া ভোট যাতে ফের বামেদের বাক্সে ফিরিয়ে আনা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে দলের সমর্থক বলে পরিচিত নয় এরকম ভোটারদের বাড়িতে আরও বেশি করে নজর দেওয়ার নির্দেশ নিচুতলার কমরেডদের দিয়েছে আলিমুদ্দিন। শাসকদলের বিরুদ্ধে সিপিএমের যে প্রচার সেটাকে অনেকটাই ‘হাইজ্যাক’ করে নিয়েছে বিজেপি। একুশের বিধানসভা ভোটের ছবি প্রমাণ করেছে, সিপিএম ও কংগ্রেসকে প্রচারের আলো থেকে কৌশলে সরিয়ে বিরোধী ভোট বাক্সে জাঁকিয়ে বসেছে বিজেপি। বামেদের পিছনে ফেলে এখন রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে গেরুয়া শিবির। সিপিএমের একাংশ মনে করছে, বিজেপিকে পিছনে ফেলে আগে এগোনো দরকার। তারপর তো তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে কার্যত ভুলেই গিয়েছে এ রাজ্যের সিপিএম। পাহাড় থেকে সাগর ইনসাফ যাত্রার (Insaaf Yatra) পর ব্রিগেড সমাবেশ এই ভোটে কতটা বামেদের পক্ষে প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার সন্দেশখালি ইস্যুকে সিপিএম ধরার চেষ্টা করলেও বারাসতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে সভা করিয়ে সেখানেও সিপিএমকে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার সময়ে সিপিএমের সেই ভোট মেশিনারিটাই আর নেই। মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় না নেতাদের। পুরনো নেতা বা কর্মীরা অনেকেই বসে গিয়েছেন। ফলে হাতেগোনা কর্মী নিয়ে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ ও পুরনো প্রচার কৌশল ফিরিয়ে এনে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে।
পার্টির অনেকেই এটা মেনে নিচ্ছেন যে, মাঠে নেমে ভোট করানোর মতো আগের সেই নেতাদের অভাব রয়েছে। ফলে সংগঠনেও ক্ষয় ধরেছে। তাই ব্রিগেডে লক্ষাধিক সমাবেশ করার পরও তাকিয়ে থাকতে হল কংগ্রেসের দিকে। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে হচ্ছে। তৃণমূলও কটাক্ষ করেছে যে, সিপিএমের একা লড়ার মুরোদ নেই। আবার কংগ্রেসের হাত ধরতে গিয়ে শরিকদলের নেতাদেরকেও চটিয়েছে সিপিএম নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ আসনে এবার নতুন মুখ এনেছে আলিমুদ্দিন। যাদবপুরে সৃজন ভট্টাচার্য, শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধররা লড়াইয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। এবার অধিকাংশ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী পরিচিতি নিয়ে লিফলেট ভোটারদের হাতে হাতে তুলে দিচ্ছে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। কারণ, প্রায় সব আসনেই কার্যত নতুন প্রার্থী। তাই পরিচয়ের পালাও সারতে হচ্ছে। সিপিএম সূত্রে খবর, শাখাস্তরের কমরেডদের পরিবার পিছু যাওয়ার জন্য দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাও হাতে গোনা কর্মী। সব এলাকায় যাওয়ার লোক কম।