• পোষ্য হারিয়েছে? চিন্তা নেই, খুঁজে দেওয়ার দায়িত্বে Pawlice
    এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: পুলিশ নন, ওঁরা ‘Pawlice’। ওঁদের কাজ হারানো পোষ্যদের খুঁজে দেওয়া। অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থা সুইগির নতুন সার্ভিস, কারও পোষ্য হারিয়ে গেলে অ্যাপে সেটা জানালে সেই পোষ্যকে খুঁজে দিতে উদ্যোগ নেবেন সংস্থার ডেলিভারি পার্টনাররা।

    সদর দরজাটা হয়তো ঠিকমতো বন্ধ ছিল না। বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার পরেও বাড়িটা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত দেখে একটু অবাকই হয়েছিলেন অপর্ণা। এতক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পাত্র তো ডোডো নয়! এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করেও প্রিয় পোষ্যকে দেখতে না পেয়ে চিন্তা বাড়ছিল তাঁর। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তখনই নজর পড়ে, সামান্য ফাঁক হয়ে থাকা সদর দরজাটার দিকে। তাতেই বুকটা কেঁপে উঠেছিল অপর্ণার। তবে কি ওই দরজা গলেই বেরিয়ে গিয়েছে ডোডো?

    কী ভাবে কসবা পূর্বাচলের ওই বাড়ি থেকে চার বছরের দেশি কুকুর ডোডো বেরিয়ে গিয়েছিল, সেটা বুঝে উঠতে পারেননি অপর্ণারা। স্ত্রীর ফোন পেয়ে রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়ে আগেই বাড়ি ফিরে এসেছিলেন অপর্ণার স্বামী শুভজিৎবাবু। তারপর প্রতিবেশীদের নিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা তল্লাশি চলে। কিন্তু না, সাদা-কালো ছোপের ডোডোকে পাওয়া যায়নি। পরের দিন সকালে বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাব ও বাড়ির দেওয়ালে ‘সন্ধান চাই’ লেখা পোস্টারও লাগিয়ে এসেছিলেন ওঁরা।১০ বছরের ছেলে রনির কান্না থামেনি সারা রাতেও। বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর তো বটেই, ডোডোকে খুঁজে দিলে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কারের কথা পর্যন্ত লেখা ছিল পোস্টারে। তবে কসবা পূর্বাচলের রায়চৌধুরী বাড়িতে আর কখনও প্রিয় পোষ্যের দুষ্টুমি-ভরা ডাক শোনা যায়নি। শেষ পর্যন্ত তার যে কী হয়েছিল, পথ হারিয়ে বাড়ির কুকুর শেষ পর্যন্ত কি পথের কুকুর হয়ে গেল নাকি গাড়িচাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছিল ডোডোর—সেটা জানা যায়নি।

    কুকুর হোক বা বিড়াল—ডোডোর মতোই প্রিয় পোষ্যর হারিয়ে যাওয়া এখন নিতান্তই আকস্মিক ঘটনা নয়। আর পোষ্যদের যাঁরা নিজের সন্তানের মতো পালন করেন, তাঁদের মনে এমন ঘটনা সারা জীবনের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে থেকে যায়। বহু ক্ষেত্রেই প্রিয় পোষ্যের এমন নিরুদ্দেশ হওয়া তার বাড়ির লোকজনের কাছে ভয়াবহ মানসিক ধাক্কার কারণ হয়ে ওঠে। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে এবার তার জন্যই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এই অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থা।

    সরকারি তো বটেই, এমনকী বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এখন ২৬ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক। অনেক প্রতিষ্ঠান সদ্যোজাত এবং তার মায়ের দেখাশোনার জন্য পিতৃত্বকালীন ছুটিও মঞ্জুর করে। তবে পোষ্যর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার জন্য ছুটি! হ্যাঁ, সুইগি কিছু দিন আগেই তার কর্মীদের জন্য এমন ছুটি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিল। পেট পেরেন্টিং বা পোষ্য-অভিভাবকত্বের দুনিয়ায় এমন ছুটি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। সত্যিই তো, বাড়িতে নতুন পোষ্য এলে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কিছুটা সময় তো দিতেই হয়। তাই এই ব্যবস্থা।

    পেট পেরেন্টিংয়ে ছুটি দিয়ে নজির গড়ার পরই ফের চমক এই অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থার। তাদের ঘোষণা, কারও পোষ্য হারিয়ে গেলে সেই বিষয়ে অ্যাপে রিপোর্ট করলে সব রকমের সাহায্য করবেন সংস্থার ডেলিভারি পার্টনাররা। এই প্রসঙ্গে সুইগির সিইও রোহিত কাপুর বলছেন, ‘আমার বাড়িতেও পোষ্য রয়েছে। আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারি ওরা হারিয়ে গেলে বাড়ির লোকজনের কতটা চিন্তা এবং কষ্ট হয়। তাই এই উদ্যোগ।’

    ওই সংস্থা জানাচ্ছে, অ্যাপে কোনও পোষ্যর হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জমা পড়লে যে এলাকার অভিযোগ, সেই এলাকার ডেলিভারি পার্টনারদের কাছে খবর যাবে। তাঁরা চলাফেরার সময়ে একটু চোখ-কান খোলা রাখবেন। হারানো পোষ্যকে দেখতে পেলে তাঁরা সংস্থার অন্য একটা টিমকে খবর দেবেন। তখন উদ্ধারের ব্যবস্থা হবে।'

    কলকাতায় পোষ্যদের নিয়ে কর্মরত সংস্থা প’ কমিউনিটির পক্ষ থেকে সায়ন বণিক বলছেন, ‘ওরা হারিয়ে গেলে যে শুধু আমরা চিন্তায় পড়ি তা নয়, বাড়ির পরিচিত এবং নিরাপদ আশ্রয় থেকে হারিয়ে গেলে ওরাও অত্যন্ত ভয় পেয়ে যায়। অপরিচিত পরিবেশে অন্য কুকুর বা বিড়ালের আক্রমণের মুখে পড়ার ভয় থাকে। ঠিকমতো খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা তো থাকেই। এর উপর পথে-ঘাটে চলতে অনভ্যস্ত বাড়ির কুকুর-বিড়ালদের গাড়িচাপা পড়ার ভয়ও থাকে পুরোমাত্রায়। কাজেই এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’

    পশুদের নিয়ে কর্মরত সংস্থা, পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যালসের (পেটা) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সদস্য বিয়াস মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘প্রতিদিন গোটা দেশে বহু পোষ্য হারিয়ে যায়। বেশির ভাগেরই খোঁজ পাওয়া যায় না। আসলে খোঁজার পর্ব শুরু হয় অনেকটা দেরিতে। সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট হলে ওদের ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি থাকে।’
  • Link to this news (এই সময়)