Iran Israel War : ইজরায়েলে যে কোনও মুহূর্তে হামলা ইরানের! ভারতীয়দের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি
এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: ইজ়রায়েলে ইরানের হামলার আশঙ্কা যত জোরদার হচ্ছে, ততই গাজ়ায় হামলার ঝাঁজ বাড়াচ্ছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ।শুক্রবার সেন্ট্রাল গাজ়ার বাসিন্দারা জানালেন, রাতভর ইজ়রায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত তারা। ৬১ বছরের মহম্মদ অল-রায়েস জানালেন, সেন্ট্রাল গাজ়ার নুসেইরাতে বৃহস্পতিবার সারা রাত শেলিং এবং আকাশপথে হামলা চলেছে। কোনও ক্রমে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। রায়েসের কথায়, 'চারদিকে শুধু বিস্ফোরণের শব্দ। রাস্তায় লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে।' অন্য বাসিন্দা, বছর চল্লিশের লায়লা নাসিরের বক্তব্য, 'নুসেইরাতের অবস্থাও বোধহয় খান ইউনিসের মতো করবে ইজ়রায়েলি সেনা।' গত সপ্তাহেই খান ইউনূস থেকে বাহিনী সরিয়েছে ইজ়রায়েল। গাজ়ার এই শহরে প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। এবার তাদের টার্গেট রাফা।
এদিকে, ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে। প্যালেস্তাইনপন্থী ইরান জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলার বড়সড় মাসুল চোকাতে হবে নেতানিয়াহুর দেশকে। এই পরিস্থিতিতে ইরান ইজ়রায়েল বা তার কোনও বন্ধুরাষ্ট্রের বুকে বড়সড় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা। সূত্রের খবর, পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করে ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদোল্লাহিয়ানকে ফোন করেছিলেন জার্মানি, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী। ইরানের বিদেশমন্ত্রী বৃহস্পতিবার 'এক্স' প্ল্যাটফর্মে লেখেন, 'তিন দেশের বিদেশমন্ত্রীর ফোন পেয়েছিলাম। তাঁদের স্পষ্ট জানিয়েছি, ইজ়রায়েল যদি কূটনৈতিক সৌজন্য বজায় না রেখে হামলা চালায় এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ যদি তার কোনও নিন্দাই না করে তা হলে আত্মরক্ষার স্বার্থে হামলা চালানো ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও উপায় নেই। যুদ্ধের পরিধি বিস্তার করা ইরানের উদ্দেশ্য নয়।'
প্রসঙ্গত, ইরানের হুমকির মুখে ইজ়রায়েলের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইরানের হামলার মুখে ইজ়রায়েলকে যতটা সম্ভব সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করবে তারা। এমনকী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার ইজ়রায়েল সফরে গিয়েছিলেন ইউএস সেন্ট্রাল কম্যান্ড চিফ, জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি, পেন্টাগন সূত্রে খবর তেমনই। ফ্রান্স শুক্রবারই তাদের নাগরিকদের ইরান, ইজ়রায়েল, লেবানন, প্যালেস্তাইনে যাওয়ার উপর নিধেষাজ্ঞা জারি করেছে। ইজ়রায়েলের মার্কিন দূতাবাস তাদের কূটনীতিকদের চলাফেরার উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ চাপিয়েছে। মস্কো এবং বার্লিনও তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। জার্মান এয়ারলাইন্স লুফথানসা আপাতত তেহরানের সঙ্গে তাদের সব রকম বিমান পরিবহণ বন্ধ রেখেছে।
এদিকে, ক্রমাগত ইজ়রায়েলি হামলায় গাজ়ার অবস্থাও খারাপ। হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতিতে যাওয়ার ব্যাপারে ইজ়রায়েলের উপর চাপসৃষ্টি করছে ইউএস। কিন্তু নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইজ়রায়েলি সব পণবন্দিকে হামাস না ছাড়লে সংঘর্ষবিরতির প্রশ্নই উঠছে না। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্টের দাবি, গাজ়ায় হামাসকে নিকেশ করার জন্য হামলা চালালেও সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণের সব রকম জোগান রেখেছে তারা। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ বৃহস্পতিবারও জানিয়েছে, গাজ়ায় ত্রাণের জোগান বিপুল ভাবে বাড়াতে হবে, তা না হলে গাজ়ার অস্তিত্বই মুছে যেতে পারে!
ভারতীয়দের সফরে নিষাধাজ্ঞাযে কোনও মুহূর্তে ইজ়রায়েলের বুকে হামলা চালাবে তারা, হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভারতীয় যাতে ইরান এবং ইজ়রায়েল সফরে না যান, সে ব্যাপারে সতর্ক করল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি মাসেই সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলা চলেছে। তেহরানের অভিযোগের তির ইজ়রায়েলের দিকে। এই পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলে বড়সড় হামলা চালানোর কথা ঘোষণা করেছে ইরান। আর তাই প্রতিটি দেশই তাদের নিজেদের নাগরিককে নিয়ে সতর্ক। ভারতের পাশাপাশি আমেরিকা এবং রাশিয়াও তাঁদের নাগরিকদের উদ্দেশে ট্যাভেল অ্যাডভাইজ়ারি জারি করেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক নাগরিকদের বলেছে, ওই দুই দেশ সফর যদি করতেই হয়, তবে নিজেদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘুরে-বেড়ানো যাবে না।' এদিকে, ইরানের হামলা ঠেকানোর সব চেষ্টা জারি রেখেছে ইউএস। ইজ়রায়েলের সঙ্গে কথা বলে অশান্তি মেটানোর ব্যাপারে ইরানকে রাজি করাতে চায় তারা। আর তাই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাহি, কাতার, ইরাকের সরকারকে অনুরোধ করেছে আমেরিকা, অবশ্য সাড়া মেলেনি।