দীপালি সেন: কোথাও মাংস-ভাত। কোথাও পোলাও, আলুর দম। কোথাও ফ্রায়েড রাইস ও ডিমের কষা। কোথাও আবার শেষ পাতে পড়বে পায়েস বা মিষ্টি।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের পাতে পড়তে চলেছে নানা রকম বিশেষ পদ। বাংলা বছরের প্রথম দিন রবিবার, স্কুল ছুটি। তাই পরের দিন, সোমবার পড়ুয়াদের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে স্কুলে স্কুলে। কোনও স্কুলের শিক্ষকরা ছাত্রসম সন্তানদের জন্য পকেটের টাকা খরচ করবেন। কোথাও স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, অন্য খাতের খরচ বাঁচিয়ে পড়ুয়াদের মিষ্টিমুখ করানোর।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের শুরু হয় বাংলা নববর্ষের হাত ধরেই। আবার এবারই প্রথম পয়লা বৈশাখ দিনটিকে ‘রাজ্য দিবস’ হিসাবে পালন করা হবে। যা দিনটির গুরুত্বও অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে দিনটিকে পড়ুয়াদের কাছে স্মরণীয় করে তুলতে স্কুলগুলিকে উৎসাহিত করছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। বলা হয়েছে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ১৫ এপ্রিল মিড-ডে মিলে বিশেষ মেনু পরিবেশন করতে। স্পেশাল মেনু বলতে প্রতিদিনের রুটিন মেনুর ব্যতীত কিছু। তা কী হবে, সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের সুবিধা মতো ঠিক করবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের রাজ্যের মিড-ডে মিল তথা পিএম পোষণ প্রকল্পের অধিকর্তা পারমিতা রায় বলেন, “রোজকার বাঁধাধরা মেনুর বাইরে গিয়ে কোনও স্কুল যদি নববর্ষ উপলক্ষে বাচ্চাদের বিশেষ কিছু খাওয়ায়, আমরা তাতে উৎসাহ দিচ্ছি। স্কুলের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যে স্কুল যেভাবে করতে পারবে।”
সেই মতোই জেলা স্তর থেকে স্কুলগুলির কাছে নির্দেশ পৌঁছনো শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৫ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে স্কুলে বিশেষ মিড-ডে মিল মেনু করতে হবে। এবং সেই সম্পর্কে আগে থেকেই ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের জানিয়ে দিতে হবে। তবে, এর জন্য বাড়তি কোনও বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। তাতে অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের কপালে ভাঁজ পড়লেও বহু স্কুল আবার নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছে। অনেক স্কুলে ইতিমধ্যেই মেনু স্থির হয়ে গিয়েছে। কিছু স্কুল আজ, শনিবার আলোচনার করে সিদ্ধান্ত নেবে। কলকাতার সব স্কুল পড়ুয়ার পাতে পড়তে চলেছে ফ্রায়েড রাইস, ডিমের কষা, আলুর দম ও একটি করে মিষ্টি। কলকাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না বলেন, “কলকাতা জেলার সব স্কুলে ওইদিন ডিমের কষা আর ফ্রায়েড রাইস দেওয়া হবে। থাকবে আলুর দমও। তার সঙ্গে একটা করে মিষ্টি দেওয়া হবে।” শহর কলকাতার স্কুলগুলির মিড-ডে মিলের রান্না হয় ক্লাস্টার কিচেনে। এক-একটি রান্নাঘরে একসঙ্গে অনেক স্কুলের রান্না করেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। সেই রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় স্কুলে স্কুলে। ইতিমধ্যেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কাছে ১৫ এপ্রিল বিশেষ মেনু রান্না করার নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে।
রাজ্যের মিড-ডে মিল প্রকল্পের অধিকর্তা জানিয়েছেন, বছরের অন্যান্য বিশেষ দিনেও বিশেষ মেনু চালু করা হতে পারে। তাঁর কথায়, “আমরা দেখব, কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তার উপর ভিত্তি করে শিশু দিবস, শিক্ষক দিবস-এর মতো অন্যান্য বিশেষ দিনেও বিশেষ মেনু চালু করার কথা ভাবা হতে পারে।” যে যে এলাকার পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার কমের দিকে, সেই এলাকাগুলিতে এই বিশেষ মেনুর প্রভাব কতটা, সেদিকেই নজর থাকবে রাজ্যের।