• Hindu Temple Demolished In Pakistan : দেশভাগের পর থেকে বন্ধ পুজার্চনা, পাকিস্তানে ভাঙা হল ঐতিহাসিক হিন্দু মন্দির
    এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৪
  • পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে ভেঙে ফেলা হল ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দির। বদলে সেই অংশে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের এই ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে।১৯৪৭ সালের পর থেকে এই এলাকার মন্দিরটি বন্ধ পড়ে রয়েছে বলে খবর। এই এলাকার হিন্দুরা সকলেই দেশভাগের পর ভারতে চলে এসেছেন। ফলে নিত্য পুজার্চনা সেখানে বন্ধ। আর সে কারণেই মন্দিরটি ভেঙে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

    খাইবার মন্দির নামে পরিচিত এই হিন্দু দেবালয়টি সীমান্ত শহরের লান্ডি কোটাল বাজার এলাকায় অবস্থিত। বছরের পর বছর ধরে পুজো বন্ধ থাকায় মন্দিরটির ইট ধীরে ধীরে খসে পড়ছিল বলেও জানা যাচ্ছে। একাধিক অংশে ধসেও পড়েছিল। ১০ থেকে ১৫ দিন আগে এই মন্দিরটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে খবর। ইতিমধ্যেই সেই ধ্বংসস্তূপের উপর নতুন কমপ্লেক্সের গাঁথনিও শুরু হয়েছে।

    যদিও এই মন্দির ভাঙা নিয়ে কোনও প্রশাসনিক আধিকারিকই সেভাবে মন্তব্য করতে চায়নি। কারও মতে ওই অংশে যে কোনও খাইবার মন্দির ছিল তা তাদের জানা নেই। আবার কেউ বলছেন, নিয়ম মেনেই নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

    লান্ডি কোটাল এলাকার একজন পাক সাংবাদিক ইব্রাহিম শিনওয়ারি বলেন, 'লান্ডি কোটাল বাজারের মধ্যমণি ছিল এই খাইবার মন্দির। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সাল থেকে এই মন্দির আর খোলা হয়নি কখনও। এলাকার হিন্দুরা সকলেই পাত্তারি গুটিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন সে সময়। আংশিকভাবে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছিল। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় এখানকার কিছু ধর্মগুরু এই খাইবার মন্দির নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন।' শিশু বয়সে বিষয়গুলির সাক্ষী ছিলেন বলে জানান এই সাংবাদিক। তাঁর কথায়, 'বাপ-ঠাকুরদার থেকে এই মন্দির সম্পর্কে প্রচুর গল্প শুনেছি। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, এখানে হিন্দু মন্দির ছিল। লান্ডি কোটাল এলাকার বিখ্যাত খাইবার মন্দির সম্পর্কে সকলেই জানেন।'

    পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে হারুন সরবদিয়ালের বক্তব্য, স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের উচিত ছিল অ-মুসলিমদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ঐতিহাসিক সৌধগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা। তাঁর কথায়, 'আর্কিওলজি এবং মিউজিয়াম বিভাগ, পুলিশ, সাংস্কৃতিক বিভাগ, স্থানীয় সরকার ২০১৬ অ্যান্টিকুইটি আইন অনুযায়ী এই ধরণের মন্দির সংরক্ষণ করতে বাধ্য। যে সকল স্থাপত্যে অ-মুসলিমরা পুজার্চনা করেন, সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিরই দায়িত্ব।'

    পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লান্ডি কোটালের অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার মহম্মদ ইরশাদ এই গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছিলেন। তিনি বলেন, 'লান্ডি কোটাল বাজারের সম্পূর্ণ জমি সরকারের। এখানে কোনও মন্দির ছিল বলে উল্লেখ করা নেই সরকারি নথিতে। খাইবার ট্রাইবার ডিসট্রিক্ট নথিতেও এর উল্লেখ নেই।' লান্ডি কোটাল বাজার এলাকার কিছু পুরনো দোকানে সংস্কারের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে বিল্ডারকে।

    তেহসিল মিউনিসিপ্যাল অফিসার শাহবাজ খান বলেন , 'এলাকায় সমস্ত বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য অনুমতি দেয় স্থানী প্রশাসন। খাইবার জেলার আসন রেকর্ড যদিও আমাদের কাছে নেই।' প্রাক্তন তেহসিল মিউনিসিপ্যাল অফিসার আবদুস সামাদের আমলেই খাইবার মন্দিরের অংশে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, অনুমতি দীর্ঘদিন আটকে ছিল। লান্ডি কোটাল পাটওয়ারি জামাল আফ্রিদি জানান, তিনি এই নির্মাণ কাজ সম্পর্কে অবগত নন। তবে রেভিনিউ রেকর্ড মন্দিরের কোনও উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, 'সংখ্যালঘুদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে যদি সরকার ব্যর্থ হয় তবে শীঘ্রই মন্দির এবং ঐতিহাসিত স্থাপত্য ভ্যানিশ হয়ে যাবে। হতে পারে লান্ডি কোটাল বাজার এলাকার কিছু প্রবীণ নাগরিক এই খাইবার মন্দির সম্পর্কে পুরনো কাহিনি জেনে থাকতে পারেন।'

    পাকিস্তানের হিন্দু মন্দির ম্যানেজমেন্ট কমিটির হারুন সরবদিয়াল বলেন, 'অ-মুসলিমদের উপাসনালয়গুলি, যেগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, সরকারের উচিত সেগুলির সংস্কার করে কোনও সামাজিক কাজে ব্যবহার করা। ধ্বংস করে দেওয়া উচিত নয়।'
  • Link to this news (এই সময়)