Sikkim First Railway Station : কবে থেকে ট্রেনে চেপে সরাসরি সিকিম ভ্রমণ? ঘোষিত দিনক্ষণ
এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৪
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দারুন খবর। সিকিম ভ্রমণ করার জন্য আর নিউ জলপাইগুড়িতে নামার ঝক্কি নেই। এবার সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে পড়শি রাজ্যে। কবে থেকে শুরু হচ্ছে সেবক-রংপো রেললাইন? কবে থেকে সোজাসুজি ট্রেনে সিকিম? জানা গেল সময়।
সিকিমে রেল পরিষেবা কবে শুরু?ইতিমধ্যেই ১৪টির মধ্যে ১০টি টানেল তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে সেবক-রংপো রেল প্রজেক্টের কাজ আরও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, রেলের পক্ষ থেকে এই লাইন তৈরির জন্য ২০২৫ সালের অগাস্ট মাসকে ডেডলাইন ধরে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর পুজোর ছুটিতেই সরাসরি ট্রেনে সিকিম ভ্রমণে পৌঁছে যেতে পারবেন পর্যটকরা।এই প্রথমবার সেবক-রংপো রেল প্রজেক্টের মাধ্যমে গোটা দেশের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ স্থাপন হবে সিকিমের। যা সে রাজ্যের পর্যটন ব্যবসাকে আরও উন্নত করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত এই রেললাইন তৈরির কাজ চলছে। যা মোট ৪৪.৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। এর মধ্যে থাকবে ১৪টি টানেল, ২২টি ব্রিজ (১৩টি বড় এবং ৯টি ছোট)। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিম যাওয়ার পথে ট্রেন এই লাইনে মোট পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে থামবে। তালিকায় রয়েছে সেবক, রিয়াং, তিস্তা বাজার, মেল্লি এবং রংপো।
ব্রিজ-টানেলের মধ্যে দিয়ে রেললাইনএই রেল প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, 'এতদিন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুয়াহাটিগামী সমস্ত ট্রেন সেবক দিয়েই যাতায়াত করত। এবার সেই সেবক থেকেই সিকিমের রংপো পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। তৈরি হচ্ছে নতুন রুট। ১৪টি টানেলের মধ্যে ১০টি টানেলের খননকার্জ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। চারটি টানেলে রেললাইন পাতার কাজও হয়ে গিয়েছে। বাকি ছ'টিতে কাজ চলছে। এই ১৪টি টানেলের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ৫.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। সবচেয়ে ছোটটি ৫৩৮ মিটারের।' আধিকারিকের সংযোজন, '১৩টি মূল ব্রিজের মধ্যে ১২টিরই প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। ১৭ নম্বর ব্রিজটির পায়ারের উচ্চতা সর্বাধিক (৮৫ মিটার)। যেটি তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। এই গোটা রেল প্রজেক্টের চ্যালেঞ্জ হল ৮৬ শতাংশ রেললাইন টানেল এবং পাঁচ শতাংশ ব্রিজের উপর দিয়ে যাবে। খোলা আকাশের নীচে রেললাইন কেবলিমাত্র নয় শতাংশ।'
রেলপথ নির্মাণে কী কী চ্যালেঞ্জ২০২৫ সালের অগাস্ট মাসের মধ্যে কি সিকিমে রেল চলাচল শুরু হয়ে যাবে? এ প্রসঙ্গে ওই আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'পাথরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সে কারণে দুর্যোগের জন্য বারবার কাজ পিছিয়ে দিতে হয়েছে। সিমেন্টের প্রলেপ, গ্রাউটিং, প্রাথমিক ডিজাইনের ক্ষেত্রে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক আমাদের নির্মাণকাজের গতি বেশ কিছুটা শিথিল। তার মূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পাথর খারাপ অবস্থা। এর জন্য নানাবিধ বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা। স্পেশ্যালাইজড সাপোর্ট মেথড ব্যবহার করা হচ্ছে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায়।'
দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড রেল স্টেশন হবে তিস্তা বাজার। সেখানে এখন শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে বলেও জানা গিয়েছে। ইরকন নির্মাণ সংস্থার আধিকারিক বলেন, 'রংপোতে টানেল ১৪ থেকে আমরা রেললাইন পাতার কাজ শুরু করব। মে মাসের শেষ থেকে এই কাজ শুরু হবে। ঢালু এলাকা এবং প্রাকৃতি দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়াররা কাজে অগ্রগতি এনেছেন। সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার দরুন কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। পাশাপাশি গত চার মাসে একাধিকবার মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে কাজ ব্যাহত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর তিস্তা নদীতে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতেও রেল প্রজেক্টের গতি স্লথ হয়েছে।'
উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ সালে এই রেল প্রজেক্ট অনুমোদন পেয়েছিল। জমি এবং বন দফতরের পক্ষ থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছুটা দেরি হয়। মহানন্দা বনসংরক্ষণ কেন্দ্রের উপর দিয়ে এই রেললাইন যাবে বলে সেই অনুমতির প্রয়োজন ছিল। কার্শিয়ং, দার্জিলিং, কালিম্পং এবং পূর্ব সিকিম বন দফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার পর ওই অংশে কাজে এগোয়।
কোভিড অতিমারির সময়ও একাধিকবার কাজ থেমে যায়। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাধিকবার বন্ধ করে দিতে হয় রেলপথের নির্মাণকাজ।