এক-দুই নয়, ৮৭ বেআইনি বাড়ির খোঁজ! কাঠগড়ায় পুরসভা
এই সময় | ১৩ এপ্রিল ২০২৪
অশীন বিশ্বাস, কামারহাটি
কামারহাটি পুরসভার এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে বেআইনি নির্মাণের ছড়াছড়ি। পুলিশ ও পুরসভাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ। ছোট ছোট ঘুপচি ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছেন একাধিক ভাড়াটিয়া৷ না আছে বিল্ডিং প্ল্যান, না আছে পুলিশের কাছে একটা বড় অংশের ভাড়াটিয়ার প্রামাণ্য নথি।ফলে একদিকে যেমন বেআইনি নির্মাণ ভেঙে গার্ডেনরিচের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন অনেকে, তেমনই বেআইনি বিল্ডিংয়ে ভাড়াটিয়ার আড়ালে সমাজবিরোধী কার্যকলাপে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভোটের মুখে বিরোধীদের প্রশ্ন, শাসকের মদত ছাড়া এসব সম্ভব? পুরসভা কী করছে? পুলিশের ভূমিকাই বা কী? কামারহাটি পুরসভা দাবি করছে, ইতিমধ্যে তারা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র কামারহাটির এক থেকে সাত নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে ৮৭টি বেআইনি নির্মাণের খোঁজ মিলেছে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই ধারণা। ৮৭ টির মধ্যে শুধু এক নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩টি বেআইনি নির্মাণ পুরসভার নজরে এসেছে। কোনওটি পাঁচতলা, কোনওটি চারতলা আবার কোনওটি তিনতলা।
যেমন স্থানীয় সূত্রে খবর, সাত নম্বর ওয়ার্ডের ধোবিয়াবাগানের একটি পাঁচতলা বিল্ডিং পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই হয়ে গিয়েছে। এই এলাকারই একটি স্কুলের পাশে পাঁচতলা বেআইনি নির্মাণ হেলে গিয়েছে। তিন নম্বর ওয়ার্ডের চিংড়িতলাব এলাকায় তিনতলা বেআইনি বিল্ডিং তৈরির সময় ফাটল ধরেছে পাশের বাড়িতে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ষষ্ঠীতলায় হেলে রয়েছে একটি চারতলা বাড়ি।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে কামারহাটিতে বিদ্যুৎ গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা। আরও অভিযোগ, শাসক দলের একাংশের মদতেই এই নির্মাণ চলছে। নেই কোনও নজরদারি। তারই আড়ালে ভাড়াটিয়া সেজে কখনও কখনও দাগি দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিচ্ছে। উল্লেখ্য, জগদ্দলে বিক্কি যাদব খুন হোক কিংবা ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে ডাকাতিতে বাধা পেয়ে খুন-সহ পরপর কয়েকটি ঘটনায় কামারহাটির যোগ পায় পুলিশ।
এখানেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে। কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আসলে পুরসভা বাধা দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেনি। সবটাই শাসক এবং সমাজবিরোধীদের মদতে হচ্ছে। প্রোমোটাররা তার সুযোগ নিচ্ছে। আমরা আগেও বিক্ষোভ দেখিয়েছি। নিশ্চিত ভাবে আবারও বিষয়টি বড় করে সামনে আনা হবে।’
দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত বলেন, ‘পুরসভা সব জেনেশুনে চুপচাপ বসে আছে কেন? আদালতের নির্দেশ থাকলেও কেন বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হচ্ছে না? আসলে এ সবের পিছনে রয়েছে শাসক দলের নেতাদের কাটমানির খেলা৷’ কামারহাটির পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, ‘বিরোধীরা মিথ্যে অভিযোগ করছে। তবে কামারহাটি অঞ্চলে কিছু বেআইনি নির্মাণ হয়েছে ঠিকই। সেগুলি চিহ্নিত করার কাজ আগেই আমরা শুরু করেছি। ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও আগে থেকেই শুরু হয়েছে।’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ৮৭টি বেআইনি নির্মাণ এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত হয়েছে তার সবকটিকে পুরসভার তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছে। ১১টি নির্মাণ ভাঙতে বলা হয়েছে। ছ’টির ক্ষেত্রে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ৩১টি বিল্ডিংকে পুলিশ নোটিস দিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, যে ক’টি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত পাঁচটি অতি সম্প্রতি তৈরি হয়েছে।