• লুকিয়ে থাকতে রাজ্যকে ব্যবহার করেছে জঙ্গিরা
    আনন্দবাজার | ১৩ এপ্রিল ২০২৪
  • এটা নতুন নয়। ভিন্‌ রাজ্যে অপরাধ করে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিদের গা-ঢাকা দেওয়ার ইতিহাস সুদীর্ঘ। তালিকায় কখনও উঠে এসেছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তৈবা, আল কায়দার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম।

    গোয়েন্দা কর্তাদের মতে, এর কারণ মূলত নজরদারিহীন বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত পেরিয়ে চলে যাওয়ার সুবিধা। দুই, উত্তর-পূর্ব ভারতে সহজে যাতায়াতের সুবিধা। তিন, কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহরে নাম-পরিচয় বদলে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাওয়ার সুবিধা।

    বেঙ্গালুরুর কাফেতে বিস্ফোরণ কাণ্ডে শুক্রবার দিঘার হোটেল থেকে দুই জঙ্গি ধরা পড়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, দিঘা-সহ রাজ্যের জনবহুল পর্যটন কেন্দ্রগুলিও কি এ বার গা-ঢাকা দিতে ব্যবহার হচ্ছে? পুলিশের মতে, দিঘায় লক্ষ লক্ষ পর্যটকের ভিড়ে মিশে থাকাটা সহজ। দিঘার পাশেই ওড়িশা। হেঁটে বা সাইকেলেও সেখানে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। দিঘা বা কাঁথি থেকে রসুলপুর কিংবা পেটুয়াঘাট হয়ে জলপথে বাংলাদেশ অথবা সুন্দরবনও পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব নয়।

    পুলিশ কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই বেঙ্গালুরুতেই ২০০৭-এর গোড়ায় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় নাশকতার ঘটনায় উঠে এসেছিল জঙ্গি সংগঠন ‘আল বদর’-এর নাম। তার সদস্য ধৃত ফৈয়াজ়কে জেরায় জানা যায়, সে একসময়ে কলকাতায় ছিল। লালবাজারের কাছেই বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি ঠিকানায় পাসপোর্টও বানিয়েছিল সে।

    প্রসঙ্গত, জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়াসিন ভটকল শুধু লুকিয়েই থাকেনি, কলকাতা থেকে বিস্ফোরকও নিয়ে গিয়েছিল। পুণের জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ছিল ইয়াসিন। আবার লস্কর-ই-তৈবার বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ আবদুল করিম টুন্ডাকে এ রাজ্য থেকেই ২০১৩-তে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ।

    বছর দশেক আগে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ কাণ্ডে উঠে আসে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ (জেএমবি)-এর নাম। জানা যায়, বাংলাদেশের নাগরিক কওসর ওরফে বোমা মিজান, হাবিবুর এবং জেএমবির চিফ সালাউদ্দিন সালে এ রাজ্যে দীর্ঘদিন থেকে সংগঠন তৈরির পাশাপাশি বিস্ফোরক তৈরিও করছিল। তার অনেক পরে ২০২১-এ কলকাতার উপান্তে হরিদেবপুর থেকে তিন জেএমবির নেতা ধরা পড়ে এসটিএফ-এর হাতে। তারা নাম ভাড়িয়ে এখানে সংগঠন তৈরির চেষ্টা করছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আল কায়দার উপমহাদেশীয় শীর্ষ নেতা আবু তালহা বহু দিন কোচবিহারে লুকিয়ে ছিল। সেখানে ভোটার কার্ড-সহ অন্য পরিচয়পত্রও বানিয়ে নিয়েছিল সে। উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সূত্রেই গত বছর বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। এক পুলিশকর্তা জানান, ২০২২-এ মধ্যপ্রদেশে ধৃত আল কায়দা-র উপমহাদেশীয় শাখার কয়েক জন বাংলাদেশিকে জেরায় জানা যায়, কুড়ি জন জঙ্গি উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে ঢুকে কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। পরে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে তারা। রাজ্য পুলিশের এসটিএফ পরে তাদের কয়েক জনকে গ্রেফতার করে।

    ২০১৭-য় বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তদেরও এ রাজ্য থেকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে আশ্রয় নেওয়া মুফাক্কির নামে এক বাংলাদেশি জঙ্গিকে ২০২৩-এ গ্রেফতার করে এনআইএ। এক পুলিশ কর্তার কথায়, এ রাজ্যে জঙ্গিদের আনাগোনা নতুন কিছু নয়। ২০০৯-এ পাক গুপ্তচর সন্দেহে শাহবাজ ইসমাইলকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করেছিল এসটিএফ। বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এ রাজ্য হয়ে দিল্লি যাওয়ার পথে সে গ্রেফতার হয়।

    শুধু জঙ্গি নয়, এ রাজ্যে লুকিয়ে থেকেছে পঞ্জাবের গ্যাংস্টাররাও। এ রাজ্যে একাধিক বার তাদের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। ২০২১-এ নিউটাউনে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা যায় পঞ্জাবের এমন দুই গ্যাংস্টার জয়পাল ভুল্লার এবং যশপ্রীত জসসি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)