গরমা গরম জুমলা পকোড়া লিজিয়ে! সাথ মে বেরোজগারি চায়ে ওর বকওয়াস চাটনি— মহিলা কণ্ঠে এমন আজব সেল-এর হাঁক, তা-ও আবার ভোটের বাজারে? খাস রাজধানী দিল্লির বুকে সাম্প্রতিক কালে এমন আজব অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।প্রকাশ্য দিবালোকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের চার নম্বর গেটের সামনে কিন্তু সেটাই করছেন এক তরুণী। স্টলে লাগানো মেনু-র উপরে লেখা— ‘PhD পকোড়াওয়ালি’। কেসটা কী? দেখলেই বোঝা যায়, তিনি নেহাত পকোড়া বিক্রেতা নন। তা হলে তাঁর দাবিটা কী?
দিল্লিবাসী, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাই বা কেন হুমড়ি খেয়ে কেন কিনছেন তাঁর পকোড়া-চায়ে? খুবই টেস্টি নাকি! উত্তরের খোঁজে সরাসরি পৌঁছনো গেল ঘটনাস্থলে৷ প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে পকোড়াওয়ালি এগিয়ে এসে হাতজোড় করে নমস্কার করে বললেন, ‘আমার নাম ডঃ ঋতু সিং৷ পিএইচডি করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতাম৷ জাতপাতের বৈষ্যম্যে চাকরিটা গিয়েছে৷ তারপর থেকে সুবিচারের আশায় ঘুরে বেড়িয়েছি দোরে-দোরে। এখন আমি শুধুই PhD পকোড়াওয়ালি৷ ভোটের আবহে নিজের বঞ্চনা তুলে ধরাই আমার প্রধান লক্ষ্য৷’
কিছু বলার আগেই ভাঙা বাংলায় প্রশ্ন করলেন পকোড়াওয়ালি, ‘দাদা, চা খাবেন? লিকার, না দুধ চা? বেরোজগারি চায়ের সঙ্গে আমার স্পেশাল ‘রিক্রুটমেন্ট ড্রাইভ’ পকোড়া টেস্ট করতে পারেন৷ টক টক, ঝাল ঝাল লাগবে, বকওয়াস চাটনিও নিতে পারেন সঙ্গে৷’ বোঝা গেল, প্রত্যাবর্তন বনাম পরিবর্তনের ভোটযুদ্ধের প্রতিবাদের উত্তাপ ছড়াতে তৈরি সাইকোলজিতে ডক্টরেট ঋতু।
ঠেলাগাড়িতেই নিজের সারাজীবনের যাবতীয় সার্টিফিকেট সাজিয়ে রেখেছেন ঋতু৷ একদা দৌলতরাম কলেজের অধ্যাপিকা ঋতুর অভিযোগ, তিনি শুধু দলিত বলেই তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে৷ বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। অভিযোগ, তারপর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্র।
২০১৯ সালে অ্যাড হক কন্ট্র্যাকচুয়াল অধ্যাপিকা পদে নিয়োগের এক বছরের মধ্যেই ঋতুকে তাঁর পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ কেন রিনিউ হলো না তাঁর এগ্রিমেন্ট, কলেজ কর্তৃপক্ষ এই মর্মে কোনও কথাই বলতে চাননি৷ তবে সূত্রের খবর, আরএসএসের সঙ্গে বিবাদে জড়ানোই কাল হয়েছে তাঁর।
ঋতুর কথায়, ‘আমি সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত থামব না৷ আইনের চৌকাঠে পৌঁছে গিয়েছি৷ পাশাপাশি এ ভাবে পকোড়া বিক্রি করে জনজাগরণের চেষ্টা চালিয়ে যাব৷ দিল্লি পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, আমি নাকি রাস্তা আটকে, সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অসুবিধের সৃষ্টি করছি৷ গাড়ি তুলে দিতেও চেয়েছে। তারপরেও আমি দমিনি, দমব না।’
কিন্তু খাবারের এমন সব অদ্ভুত নাম কেন? পকোড়াওয়ালির যুক্তি— ‘গোটা দেশেই তো এখন জুমলা চলছে৷ বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আজ বেকারত্ব নিয়ে একটা কথাও বলে না। শুধু ভোট চাই ওদের৷ মাঝে মাঝে রোজগার মেলার আয়োজন করে কিছু লোকের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে ‘স্পেশাল রিক্রুটমেন্ট ড্রাইভ’-এর মিথ্যে প্রচার করে।
আসল তথ্যটা চাপাই থাকে। এই সব সত্যি তুলে ধরার জন্যই আমার পকোড়ার নাম ‘জুমলা’ আর ‘স্পেশাল রিক্রুটমেন্ট ড্রাইভ’, সঙ্গে রেখেছি বেরোজগারি চায়ে৷’ কথায় কথায় কখন যে পকোড়াওয়ালির ‘বেরোজগারি চা’ যে হাতেই ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে, টের পাওয়া গেল না৷ চমক ভাঙল ঋতুর মোবাইলের রিং টোনে। একটানা বাজছে— ‘হম হোঙ্গে কামিয়াব। হোঙ্গে কামিয়াব। এক দিন... মন মে হ্যায় বিশ্বাস... হম হোঙ্গে কামিয়াব...’