ধুঁকে মৃত্যু মা হাতির, শাবক বাঁচলেও বড় চিন্তা জলসঙ্কট
এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
এক মাসের ব্যবধানে দু’বার! আবার দুধের শিশুর সামনে মা হাতির মৃত্যু এবং শাবককে অন্য হাতির পালের সঙ্গে জোড়ার চেষ্টায় নামতে হলো তামিলনাডুর বন দপ্তরকে। দু’টি ঘটনারই সাক্ষী এই রাজ্যের সত্যমঙ্গলম টাইগার রিজ়ার্ভ ও স্যাংচুয়ারির বনকর্মীরা।মার্চের প্রথম সপ্তাহের ঘটনায় এআই প্রযুক্তি, ড্রোন এবং থার্মাল স্ক্যানার কাজে লাগিয়েও শাবক হাতিকে অন্য কোনও হাতির পালের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া যায়নি। তবে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে মা মরা শাবককে একটি হাতির পালে সফল ভাবে জুড়তে পেরেছেন বনকর্মীরা। তবে শাবককে ওই হাতির পাল কত দিন সঙ্গে রাখে, সে দিকেও কড়া নজর রাখছেন তাঁরা।
গোটা পরিস্থিতিতে বন্যপ্রেমীদের একাংশ কাঠগড়ায় তুলছেন দক্ষিণ ভারতের প্রবল গরম, তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিকে। এমনকী এ প্রসঙ্গে উঠে আসছে বেঙ্গালুরুর জলশূন্যতার সঙ্কটের কথাও। তামিলনাডুর অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি সুপ্রিয়া সাহু জানাচ্ছেন, ক’দিন আগে সত্যমঙ্গলম জঙ্গলের বনকর্মীরা দেখেন, একটি মা হাতি মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।
পাশেই দাঁড়িয়ে তার দু’বছর বয়সী শাবক। ৪ জন পশু চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে টানা ২৪ ঘণ্টা শুশ্রূষা করেও বাঁচাতে পারেননি মা হাতিকে। কিন্তু শাবকের কী হবে? প্রবল গরমে গায়ে ক্রমাগত জল ছিটিয়ে তাকে প্রথমে সুস্থ করেছেন বনকর্মীরা। তার পর কাছাকাছি জঙ্গলে অন্য একটি হাতির পালের সঙ্গে তাকে মিশিয়ে দেওয়া গিয়েছে।
সেখানে একাধিক হস্তিনী থাকায় সৎ মায়ের অভাব হবে না শাবকের— আশা করছেন বনকর্মীরা। তবে যেহেতু মার্চেও উদ্ধার হওয়া শাবককে একাধিক বার অন্য হাতির পালে জুড়ে দেওয়ার পরেও ক’দিন পরে তাকে একা ছেড়ে দিয়েছিল বাকিরা, তাই এবারও প্রাথমিক সাফল্যেই নিশ্চিন্ত হচ্ছেন না তামিলনাডুর বনকর্মীরা। বরং থার্মাল ড্রোন ক্যামেরা এবং অভিজ্ঞ এলিফ্যান্ট ট্র্যাকারদের দিয়ে সেই হাতির পালে ক্রমাগত নজর রাখছেন তাঁরা।
সুপ্রিয়ার কথায়, ‘মার্চের প্রথমে উদ্ধার হওয়া মা মরা হাতি শাবকটি ছিল মাত্র ১২০ দিনের। ওকে যে কোনও পরিস্থিতিতে বাঁচানোই আমাদের প্রায়োরিটি। তাই একাধিক হাতির পাল ওকে রিজেক্ট করার পরে আমরা শাবকটিকে মুদুমালাইয়ের জঙ্গলে রেসকিউ সেন্টারে রেখেছি। সেখানে ওর খাবার বা চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এবারও বনকর্মীরা দেখছেন, শাবকটিকে হাতির পাল কত দিন সঙ্গে রাখে।’
তবে এরমধ্যে চিন্তা বাড়াচ্ছে কর্নাটক-সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় ক্রমশ বাড়তে থাকা জলসঙ্কট। এপ্রিলের প্রথমেই বেঙ্গালুরু শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিমি দূরে, রামনগর এলাকায় জলের অভাবে দু’টি বয়স্ক হাতির মৃত্যুর খবর মেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছর এবং ১৬ বছর বয়সী দু’টি পুরুষ হাতি জঙ্গলে প্রায় ৫০ কিমি এলাকা চষে ফেলেও জল পায়নি। রামনগরের কণকপুরা এবং তার সংলগ্ন বেত্তাহাল্লি এলাকায় উদ্ধার হয় দু’টি হাতির মৃতদেহ।
প্রাথমিক ভাবে বনকর্মীদের সন্দেহ, ডিহাইড্রেশন এবং হিটস্ট্রোকেই মারা গিয়েছে দু’টি হাতি। কর্নাটক বন দপ্তর সরাসরি সে কথা স্বীকার না করলেও আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরু শহরের মতোই সংলগ্ন জঙ্গল এলাকাতেও জলের অভাব তীব্র। তার প্রভাব পড়ছে বন্য জীবজন্তুর জীবনেও।
এই পরিস্থিতিতে অভিনব সাজেশন দিচ্ছেন বন্যপ্রেমীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, জঙ্গলের দিকে দিকে তৈরি করা ওয়াটারবডিতে সোলার পাওয়ার বা উইন্ডপাওয়ার পরিচালিত পাম্পের সাহায্যে জল ভরা হোক। কারণ, জঙ্গলের গভীরে ওই এলাকায় জলের ট্যাঙ্কার বা কোনও গাড়ি যেতে পারবে না।
যদি ক্যামেরার সাহায্যে সেখানকার বোরহোলের জলের পরিস্থিতি জানা যায়, তবে সোলার বা উইন্ড পাওয়ারে পাম্প চালিয়ে সহজেই জঙ্গলে জীবজন্তুর জলের চাহিদা কিছুটা মেটানো সম্ভব। নইলে আগামী দু’মাসের সম্ভাব্য তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে আরও জীবজন্তুর মৃত্যুর খবর আসতে থাকবে, আশঙ্কা করছেন তাঁরা।