• Nisith Pramanik : পাখির ডাকে ঘুমোতে যান কনফিডেন্ট নিশীথ
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়, কোচবিহার: সে পাঁচ বছর আগের কথা। শহরের সাগরদিঘির জলে তখন উথালপাথাল ঢেউ। সেই রাজনৈতিক ঝড়ে শক্ত হাতে বৈঠা ধরে রেখে নাও ভাসিয়ে রাখাই ছিল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে উতরে গিয়েছিলেন কোচবিহারের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মুখ নিশীথ প্রামাণিক। নিজের পুরোনো দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে দিঘির জলে পদ্ম ফুটিয়েছিলেন বহিষ্কৃত নিশীথ।কোচবিহারের এমপি-কে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডেপুটি করা হয়েছিল। এবার ভোটের ময়দানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে লড়তে নেমেছেন নিশীথ। স্বাভাবিক ভাবেই সাংসদ হিসেবে পাঁচ বছরের পারফরম্যান্সের সঙ্গে মন্ত্রীত্বের ভারও বইতে হচ্ছে তাঁকে। এবারের লড়াই নাকি কিছুটা কঠিন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।

    ২০২১-এ বিধানসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়ানো তৃণমূল নিজেদের হারানো জমি কিছুটা ফিরিয়ে নিয়ে পাল্টা লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি শুনিয়ে রেখেছে। কিন্তু প্রার্থী নিশীথের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখে মালুমই হচ্ছে না যে, লড়াইটা তেমন কঠিন। কারণ, শেষ লগ্নেও দিনমান প্রচারে চোখেই পড়ছে না মন্ত্রীমশাইকে। নিশি জাগরনের পরে দিনভর নাকি ঘুমোচ্ছেন তিনি! তবে তাঁর বাড়ির অফিস কিন্তু সারাদিন সরগরম।

    এমনকী, মধ্যরাত পার করেও মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, কর্মীদের সঙ্গে ভোররাত পর্যন্ত বৈঠক করছেন। কেউ দেখা করতে এলে বাড়ির উঠোনে বুফে ডিনারের ব্যবস্থা করেছেন এমপি সাহেব। নিশীথের ঘনিষ্ঠেরা জানাচ্ছেন, যে সব ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীরা নিশীথের বাড়িতে থাকছেন, রান্নার ভার নিয়েছেন তাঁরাই।

    নিশীথ কি তা হলে ‘ওভার কনফিডেন্ট’? নিশীথ মুখে অবশ্য তা বলছেন না। এমনকী, চড়া রোদে ত্বক বাঁচাতে দিনের প্রচার এড়াচ্ছেন বলেও স্বীকার করছেন না। তিনি রীতিমতো ‘কুল মুডে’। গতবারে তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল ৭৪ হাজারের কিছু বেশি। নিশীথের কথায়, ‘আসলে তীব্র গরমে রাস্তাঘাটে লোকজন তেমন থাকছে না। সেই জন্যই বিকেলের দিকে প্রচার করছি। মানুষ আমাকে জানে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাঁরা চান। ফলে আমাকেই তাঁরা ভোট দেবেন।’

    বলতে গেলে এক রকম রকেট গতিতেই উত্থান তাঁর। মাত্র চার বছরে কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সদর দপ্তরে। ২০১৫ সালের পরেই তৃণমূলে যুব সংগঠনে শোনা গিয়েছিল তরুণ নেতা বিট্টুর নাম। দলের তৎকালীন যুব সংগঠনের সভাপতি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ছিল বলেই জনশ্রুতি।

    কিন্তু গোল বাধে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা টিকিট না পাওয়ায় তাঁদের নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়ে সিংহভাগকে জিতিয়ে আনেন নিশীথ। দলের সঙ্গে সংঘাতের সেই শুরু, যার শেষ তাঁর বহিষ্কার দিয়ে। সেই নিশীথেই ২০১৯-এ বাজি ধরেছিল বিজেপি।

    এবার তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা তো বটেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভোট প্রচারে এসে নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে সরাসরি একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর একসময়ের ঘনিষ্ঠ, গ্রেটার কোচবিহারের নেতা, বর্তমানে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজকেও বিজেপির হয়ে সেভাবে নামতে দেখা যাচ্ছে না। নিশীথ কিন্তু সে সব গায়েই মাখছেন না।

    তিনি আছেন নিজের মেজাজেই। মুম্বইয়ের শিল্পীদের দিয়ে প্রচারের গান তৈরি করিয়েছেন। প্রচারের মাঝে রাজপ্রাসাদে ফটোশুটও করছেন। সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর অনুগামীরা জানাচ্ছেন, ভোরের পাখির ডাক শুনে তবেই দাদা ঘুমোতে যান।
  • Link to this news (এই সময়)