মস্কোর অস্ত্রভাঁড়ার ভরাচ্ছে বেজিং! ইউএস দাবি ঘিরে উদ্বিগ্ন ভারতও
এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: চিন ও রাশিয়ার বন্ডিং দিনে-দিনে যে ভাবে বেড়েই চলেছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। সম্প্রতি এক রিপোর্টে ইউএস দাবি করেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ ভাবে অত্যাধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করছে চিন। নিশ্চিত ভাবেই যার প্রভাব পড়বে ইউক্রেন যুদ্ধে। যা কার্যত গোটা বিশ্বের কাছেই ভয়ের কারণ।তাই আমেরিকার নয়া দাবি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না-করলেও ঘটনা পরম্পরার উপর কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি। দিন পাঁচেক আগেও কিন্তু অন্য সুর শোনা গিয়েছিল বেজিংয়ের তরফে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারা চিনের কাছে অস্ত্র কিনতে চেয়েও পারেনি। চিন রাজি হয়নি।
কেন? রাশিয়ার বন্ধু বলে! মুখে অবশ্য সে বার চিনা বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘রাশিয়া হোক বা ইউক্রেন, কোনও পক্ষের কাছেই অস্ত্র বিক্রি করবে না বেজিং।’ ঘটনাস্থল জার্মানির মিউনিখ শহর। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোট মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের মঞ্চে ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার সঙ্গেই এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছিল চিনের বিদেশমন্ত্রীকে।
সূত্রের খবর, সম্মেলনের ফাঁকে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কুলেবা ওই অস্ত্র কেনার প্রস্তাব দেন চিনের বিদেশমন্ত্রীকে। যা কার্যত সরাসরিই নাকচ করে দিয়ে ওয়াংকে বলতে শোনা যায়, ‘চিন কখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে প্রাণঘাতী অস্ত্র বিক্রি করে না। কারণ বেজিং বিশ্বাস করে, সংঘাত কবলিত এলাকায় অস্ত্র বিক্রি করা আগুনে ঘি ঢালারই সামিল।’
আমেরিকান রিপোর্টে কিন্তু সেই চিনের বিরুদ্ধেই রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশে ভয়ঙ্কর সব যুদ্ধাস্ত্র বানানোর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠল। ইউএসের চ্যানেল সিএনএন-র এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউএস প্রশাসনের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক দাবি করেছেন, চিনের মদতেই রাশিয়ায় ফুলেফেঁপে উঠছে অস্ত্র তৈরির কারখানা। সোভিয়েত আমলের পরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের রাশিয়ায় এত বড় সম্প্রসারণ এর আগে কখনও হয়নি।
বেজিং-মস্কো হাতে হাত মিলিয়ে বানিয়ে চলেছে মারাত্মক সব ড্রোন, মিসাইল, ট্যাঙ্ক। শুধু তাই নয়, গত দু’বছরে চিন-রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কও অনেকখানি মজবুত হয়েছে। আমেরিকার দাবি, গত বছর রাশিয়া ৯০ শতাংশ ইলেকট্রনিক পণ্য চিন থেকেই আমদানি করেছে। এর একটা বড় অংশ যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও দাবি আমেরিকার।
কিন্তু কেন হঠাৎ প্রতিরক্ষা সম্প্রসারণে এতখানি মরিয়া রাশিয়া? ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা যুদ্ধে কিইভের মতো মস্কোর অস্ত্র ভাঁড়ারেও টান পড়েছে। আমেরিকা-সহ পশ্চিমের বেশ কিছু দেশ ধারাবাহিক ভাবে অস্ত্র যোগাচ্ছে ইউক্রেনকে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে সে দিকটা অনেকখানি সামলে দিচ্ছে চিনই।
চিনের লক্ষ্য মুনাফা কামানো। আর রাশিয়া চাইছে, ইউক্রেনকে গুঁড়িয়ে দিতে। কিন্তু এর মাঝে পড়ে বিশ্বের বাজার যে ভাবে মার খাচ্ছে, তাতেই ভয় পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল। এই পরিস্থিতিতে ভারতের আতঙ্কের কারণও অমূলক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। গত বছরের মাঝামাঝি মস্কো সফরে গিয়েছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছিল— চিনা সখ্যের জেরে এ বার কি দীর্ঘদিনের ‘বন্ধু’ ভারতের সঙ্গে বেইমানি করবে রাশিয়া। কার্যত আশ্বাস দেওয়ার মতো করেই মস্কো সে বার জানিয়েছিল, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবু আশঙ্কা একটা থাকছেই।
ওয়াকিবহাল মনে করিয়ে দিচ্ছে, লাদাখ ক্রাইসিস নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে একটি কথা না বলা রাশিয়া কিন্তু ভারতকেই ‘শান্তিপূর্ণ আলোচনায় সমাধান’-এর পথ বাতলেছিল!