সে দিন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই শীর্ষ নেতা ডি রাজার সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কথোপকথনে দেখা গিয়েছিল সম্প্রীতির দৃশ্য। সূত্রের দাবি, রামলীলায় 'ইন্ডিয়া'র ওই জনসভায় ডি রাজাকে নাকি নিচু গলায় রাহুল জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'মিঃ রাজা, আপনি নাকি আমার উপরে রেগে আছেন, ওয়ানাড়ে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াই করছি বলে?' উত্তরে সজোরে হেসে উঠে রাহুলকে বুকে জড়িয়ে ধরেন রাজা৷এ দৃশ্য দেখলে মনে হতেই পারে 'আল ইজ় ওয়েল।' কিন্তু বাস্তব বলছে, এ দৃশ্যের পরেও দেশের সাদার্ন ফ্রন্টে 'অল কোয়ায়েট' নয়। কেরালায় সিপিএম-সিপিআই-কংগ্রেসের পারস্পরিক দ্বৈরথ নাকি চরমে পৌঁছেছে। এ নিয়ে প্রবল সরব তিরুবনন্তপুরম লোকসভা আসনে হাত শিবিরের প্রার্থী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্তমান সাংসদ শশী থারুর। যদিও বাম বা কংগ্রেসের বেশিরভাগ নেতাই এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
বাজারে খবর কিন্তু অন্য। জানা যাচ্ছে, কেরালায় দুই শিবিরের তিক্ততা এমনই জায়গায় গিয়েছে যে বিরোধী-ভোট ভাগ করে গেরুয়া শিবিরকে সুবিধে করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরাসরি বামেদের নিশানা করেছেন থারুর৷ আবার, ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়নকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশন৷ তাঁর অভিযোগ, 'পিনারাই বিজয়নের আসল উদ্দেশ্য বিজেপিকে সহায়তা করা৷ তাই তিনি লাগাতার কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে যাচ্ছেন৷' থারুরের সঙ্গে বামেদের টক্কর নতুন নয়৷ আগেও তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা৷ এ বার সেই টক্করই তীব্রতর আকার ধারণ করেছে বলে অনেকের মত৷
এমনিতেই তিরুবন্তপুরম কেন্দ্রে এ বার থারুরের কঠিন লড়াই৷ তাঁর বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী হেভিওয়েট বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সিপিআই প্রার্থী পি রবীন্দ্রনের চ্যালেঞ্জ৷ এতে নাকি বেজায় চটেছেন থারুর৷ তাঁর প্রশ্ন, 'বামেরা বারবারই বলে থাকে যে তারা বিরোধী-ঐক্য মজবুত করার জন্য সদা সচেষ্ট৷ তা হলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাকে হারানোর জন্য ওরা এত উঠেপড়ে লাগল কেন?' থারুরের সংযোজন, 'তিরুবনন্তপুরমে বামেদের পুরো প্রচারই হচ্ছে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে। ওরা বিজেপিকে আক্রমণ করছে না, তাদের সমালোচনা করছে না৷ ওদের এই পদ্ধতি আখেরে বিজেপিকেই লাভবান করতে পারে৷'
এখানেই থামেননি থারুর৷ ওয়েনাড় কেন্দ্রে রাহুলের লড়াই প্রসঙ্গে বামেদের নীতি ও ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন৷ তাঁর যুক্তি, 'ওয়েনাড়ে যখন রাহুল গান্ধী প্রার্থী হলেন, তখন বামেরা প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী ঐক্য নিয়ে৷ এখন ওরা কী করছে? আমাকে মুসলিম-বিরোধী বলে প্রচার করছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অবাস্তব৷'
পরপর তিনবার এই তিরুবনন্তপুরম আসনে জিতেছেন থারুর৷ এ বারও তিনি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী জানিয়ে বলেন, 'আমি তো ওপেন ডিবেটের প্রস্তাব দিয়েছিলাম৷ কেউ আসেনি৷ এখানে গত ১৫ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার খতিয়ান দেবো আমি৷ অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে জবাব চাইব বিজেপি নেতানেত্রীদের কাছে৷ দেখবেন এখানকার মানুষ কী বলে৷ তিরুবনন্তপুরমের জনতার উন্নয়ন, বিকাশ নিয়ে আমি ভেবেছি। লাগাতার কাজ করেছি। এখনও করছি৷ এ কারণেই মানুষ তাদের হাত উপুড় করে আমাকে আশীর্বাদ করেছে৷ এ বারও সেই আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হব না৷'
যদিও দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বামেদের সঙ্গে দোস্তির পরে কেরালায় এই পারস্পরিক মতপার্থক্যের জেরে তৈরি কুস্তির পটভূমিতে একটি শব্দও খরচ করতে রাজি নন কংগ্রেস ও বামেদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ দুই শিবিরই চাইছে, কেরালার দ্বন্দ্ব সেখানেই সীমাবদ্ধ থাক৷ কেরালার স্থানীয় নেতৃত্বও থারুরের অভিযোগ ও এই দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে মুখ খুলতে নারাজ।