Electoral Bond : ঘুষ নিয়ে তদন্তে CBI, BJP-র সর্বোচ্চ দাতা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর নামে FIR
এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তার মধ্যেই লোকসভা ভোটের প্রথম দফার ঠিক ৬ দিন আগে, শনিবার, আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে 'মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (MEIL) -এর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল সিবিআই। শুরু হয়েছে তদন্তও। ঘটনাচক্রে হায়দরাবাদের এই 'মেঘা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ়' বিজেপিকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে সর্বাধিক অনুদান দিয়েছিল। তারা দেশের শাসক দলকে ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ডের মাধ্যমে মোট ৬৬৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল, তার মধ্যে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং-ই দিয়েছিল ৫৮৪ কোটি টাকা। বাকি ৮০ কোটি টাকা দিয়েছিল এই গ্রুপেরই সাবসিডিয়ারি 'ওয়েস্টার্ন ইউইপি পাওয়ার ট্রান্সমিশন কম্পানি।'শনিবার সিবিআই-এর এফআইআর প্রকাশ্যে আসার পর জানা গিয়েছে, জগদলপুর ইন্টিগ্রেটেড স্টিল প্লান্টে একটি প্রকল্পের বরাত পেয়েছিল মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। অভিযোগ, সেই প্রকল্পের জন্য মোট ৩১৫ কোটি টাকা ঘুষ দেয় সংস্থাটি। দেশজুড়ে পাইপলাইন, পাম্প হাউস ও কুয়ো তৈরি নিয়ে ছিল এই বরাত। প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছিল গত বছরের অগস্টে। ১৮ মার্চ সিবিআই-কে ঘুষ মামলার এফআইআর করার কথা সুপারিশ করা হয়। সেই এফআইআর হয় ৩১ মার্চ।
সিবিআই NISP ও NMDC-র মোট আট জনের নাম রেখেছে ওই এফআইআর-এ। তাঁরা কেউ এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর, কেউ ডিজিএম, কেউ ফিনান্সের সিজিএম, কেউ ডেপুটি ম্যানেজার পদমর্যাদার অফিসার। অভিযোগ, মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং তাঁদের মোট ৭৩.৮৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছিল। দাবি করা হয়েছে, জগদলপুরের ওই স্টিলপ্লান্ট-সংক্রান্ত ১৭৪ কোটি টাকার বিল ক্লিয়ার করাতে এই ঘুষ দিয়েছিল হায়দরাবাদের সংস্থাটি।
নির্বাচনী বন্ড তথ্য ইসিআই তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করার পরে দেখা গিয়েছে, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং। তারা কিনেছে ৯৬৬ কোটি টাকার বন্ড। বিজেপি ছাড়াও এই সংস্থা কেসিআর-এর বিআরএসজ-কে ১৯৫ কোটি, ডিএমকে-কে ৮৫ কোটি, জগন রেড্ডির দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস, টিডিপি ও কংগ্রেসকেও অনুদান দিয়েছে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং।
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, বিজেপিকে মোটা টাকা অনুদান দেওয়ার বিনিময়ে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বড় পাঁচটি প্রকল্পের বরাত পেয়েছিল সংস্থাটি। তার মধ্য ২৫ হাজার কোটি টাকার কাশ্মীরের জো জি়লা-র অল ওয়েদার টানেল অন্যতম।
তথ্য ও পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে একটি বিশ্বস্ত নাম। এই সংস্থার মালিক অন্ধ্রপ্রদেশের এক প্রান্তিক কৃষকের পঞ্চম সন্তান পামিরেড্ডি পিচি রেড্ডি (PPR)। তাঁর এই সংস্থার ভ্যালুয়েশন এখন ৬৭,৫০০ কোটি টাকা। PPR-এর ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণ১৯,২৩০ কোটি টাকা। তিনি হায়দরাবাদে যে বাড়িতে থাকেন, তাকে মানুষ 'ডায়মন্ড হাউস' বলে জানে। এমনকী পর্যটকরাও ভিড় করেন! এ হেন নামের কারণ বাড়িটি হিরের আকারে তৈরি। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে হায়দরাবাদের বালানগরে 'মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্টারপ্রাইসেস' নামে সংস্থা শুরু করেন একটা খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর থেকে। ২০০৬ সালে সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় MEIL।
এ বার প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন আগে থেকে 'তদন্ত' শুরু হলে হঠাৎ এত পরে এফআইআর কেন? অনেকেই মনে করছেন, বন্ডের তথ্য প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার পরে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে কারণ বিজেপি 'প্রমাণ' করতে চায় মোদী সরকার অনুদানের পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে কোনও ফেভার করেনি।