ব্লাড মানি ৩৪ কোটি! রহিমকে বাঁচাতে ধর্ম ভুলেই ক্রাউডফান্ডিং
এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
এই সময়: খুনের মামলায় ১৮ বছর ধরে সৌদি আরবের জেলে বন্দি কেরালার বাসিন্দা আব্দুল রহিম অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছে। দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৮-য় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল সৌদির আদালত। পরে স্থগিতাদেশ মিললেও, কেরালার ওই পরিবারে চূড়ান্ত স্বস্তি ছিল অধরাই। গত বছরের শেষে ভিক্টিম ফ্যামিলি সাফ জানিয়ে দেয়-রহিমকে তাঁরা ক্ষমা করতে রাজি। তবে তার জন্য 'ব্লাডমানি' হিসেবে ৩৪ কোটি টাকা দিতেই হবে। রহিমের পরিবারের সেই সামর্থ্য ছিল না। তবে ডেডলাইন ছোঁয়ার আগে টাকাটা কিন্তু উঠেই গেল। সৌজন্যে, ক্রাউডফান্ডিং। নাম কিংবা ধর্মের তোয়াক্কা না-করেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কেরালিয়ানরা হাত উপুড় করলেন রহিমের জন্য। খবরটা শেয়ার করে নিজের অফিশিয়ার এক্স হ্যান্ডেল থেকে বড় পোস্ট দিলেন বাম-শাসিত কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। ঘুরিয়ে গেরুয়া শিবিরের 'হেট প্রোপাগান্ডা'কে একহাত নিয়ে লিখলেন- 'দ্য রিয়েল কেরালা স্টোরি। মানবতার স্বার্থে যাঁরা একজোট হয়ে ক্রাউডফান্ডিংয়ে এগিয়ে এলেন, তাঁদের সকলকে জানাই অভিনন্দন। একজনের প্রাণ বাঁচাতে, একটা পরিবারের চোখের জল মোছাতে কেরালা ভালোবাসার এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এ ভাবে আগামী দিনেও আমরা একজোট হয়ে এমন অনেক সত্যি আর সহমর্মিতার কেরালা স্টোরি শোনাব গোটা দুনিয়াকে। 'ব্যাপারটা কিন্তু সহজ ছিল না মোটেই। কোঝিকোড়ে রহিমের এলাকার বাসিন্দারাই মূলত উদ্যোগ নিয়ে প্রথমে 'সেভ আব্দুল রহিম' নামের একটি অ্যাপ তৈরি করেন। সেই অ্যাপের মাধ্যমে তোলা হতে থাকে 'ব্লাড মানি'। প্রাথমিক ভাবে ক্রাউডফান্ডিয়ে ভালো সাড়া মিললেও, মাঝখানে ভাটা পড়ে উৎসাহে। গত সপ্তাহেও দেখা যায়, তহবিলে জমা পড়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। কিন্তু ভিক্টিমের ফ্যামিলি যে ১৬ এপ্রিলের ডেডলাইন দিয়ে রেখেছে! স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ বাড়ে। অ্যাপের মাধ্যমেই নতুন করে রহিমকে বাঁচানোর আর্জি তোলা হয়। নিমেষে তা ভাইরালও হয়ে যায়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ক্রাউডফান্ডিংয়ে এগিয়ে আসেন রাজ্যের রাজনীতিক, সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে প্রবাসীদের নানাবিধ গ্রুপও। ম্যাজিকের মতো দেখা যায়, ডেডলাইন ছোঁয়ার তিন দিন আগেই ভায়া অ্যাপ জমা পড়েছে ৩৫ কোটি ৪৫ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮০৯ টাকা। খবরটা পাওয়া মাত্রই চোখে জল নেমেছে রহিমের মা ফতিমা বিবির। তাঁর কথায়, 'আমি তো ভেবেছিলাম, ছেলেটাকে আর কোনও দিন ফেরতই পাব না। ভেবেছিলাম, আমার নির্দোষ ছেলেটা বিদেশেই বেঘোরে মরবে। ৩৪ কোটি টাকা তোলা কি চাট্টিখানি ব্যাপার? কিন্তু মানুষ পাশে দাঁড়ানোয় সেটাও সম্ভব হলো। ছেলের নবজন্ম হলো। এর চেয়ে ভালো ইদের উপহার আর পাইনি জীবনে।' রহিমের 'ব্লাড মানি' জোগাড়ের জন্য তৈরি কমিটির আহ্বায়ক কে কে আলিকুট্টির কথায়, 'ফান্ডিংয়ে সবচেয়ে বড় টাকাটা এসেছে অটোচালক, মুটে মজুরের মতো একেবারের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
কোঝিকোড়ের কোদামপুঝা এলাকায় অটো চালিয়ে সংসার চালাতেন পরিবারের একমাত্র ছেলে রহিম। কিন্তু অভাব মেটে না। ২০০৬-এ তাই শেষমেশ এক সৌদি নাগরিকের পার্সোনাল ড্রাইভারের চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি দেন রহিম। তাঁর কাজ ছিল মূলত ওই পরিবারের এক বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানের দেখভাল করা এবং প্রয়োজন মতো তাকে গাড়িতে করে যাতায়াত করা। সৌদি আরবে আসার মাসখানেকের মধ্যেই অনর্থ ঘটে যায়। রহিমের দাবি, চলন্ত গাড়িতে কোনও কারণে বাচ্চাটি ভীষণ উৎপাত শুরু করে। তাকে থামানোর চেষ্টা করছিলেন রহিম। কোনও ভাবে তাঁর হাতের ধাক্কা লাগে বাচ্চাটির গলায় লাগানো টিউবে। প্রাথমিক ভাবে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। যার জেরে প্রথমে জেল ও পরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কেরালার মধ্য তিরিশের যুবককে।