১৪ এপ্রিল ভারতীয় সংবিধাননের স্থপতি ডঃ বি আর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী। আম্বেদকর ছিলেন একজন সমাজসংস্কারক। একজন প্রকৃত জ্ঞানী বক্তি যিনি সমাজের হতাশগ্রস্ত শ্রেণীকে সমাজের উপরের স্তরে পৌঁছনোর জন্য উৎসর্গ করেছিলেন নিজেকে। দেশের কিছু অংশ আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী দিনটি পালন করা হয় 'সমতা দিবস' হিসেব।স্বাধীনতার পর, বাবা সাহেব ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর ভারতকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সংবিধান প্রণয়নের তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। সংবিধানের খসড়া কমিটির প্রধান ছিলেন আম্বেদকর। ১৯৪৯ সালে ২৬ নভেম্বর গৃহীত হয় এটি। এরপর ১৯৫০ সাল তা কার্যক হয়। ভারতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় সেই বছরই।
সংবিধান কার্যকরের মাত্র তিন বছরের মাথায় সংসদে সংবিধান পোড়ানোর কথা বললেন আম্বেদকর। বলেছিলেন, তিনি হবেন প্রথম সেই ব্যক্তি যিনি সংবিধান পোড়াবেন। বাবা সাহেবের জন্মবার্ষিকীতে জেনে নেওয়া যাক কেন এমন কথা বলেছিলেন তিনি।
রাজ্যসভায় বিতর্কের সময় বিষয়টি উত্থাপিত হয়
দিনটা ঠিল ১৯৫৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর। সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়ে রাজ্যসভায় বিতর্ক চলছিল। বাবা সাহেব রাজ্যপালের ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে অনড় ছিলেন। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায়ও তিনি ছিলেন অনড়। এই বিতর্কের সময়, বাবা সাহেব বলেছিলেন, নিম্নশ্রেণীর মানুষজন সবসময় এটা ভেবে ভয়ে ভয়ে থাকে সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাদের ক্ষতি করতে পারে। আমরা বন্ধুরা আমায় বলেছিল বলে সংবিধান তৈরি করেছি আমি। আমি হব আবার সেই প্রথম ব্যক্তি যে এই সংবিধান পোড়াব। এটা কারও জন্য ভালো নয়। সংখ্য়াগুরুদের কখনই বলার অধিকার নেই সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। তাহলে গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে আসলে। আম্বেদকরের বক্তব্য নিয়ে বিস্তর বিতর্ক তৈরি হয়।
দুই বছর পর বক্তব্যের কারণ চাওয়া হয়েছে
এই বিতর্কের ঠিক দুই বছর পরে, ১৯ মার্চ ১৯৫৫-এ এই বিষয়টি আবার রাজ্যসভায় উত্থাপিত। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী সংক্রান্ত বিল নিয়ে আলোচনা চলছে তখন। পাঞ্জাবের সাংসদ ডঃ অনুপ সিং, যিনি হাউসে আলোচনায় অংশ নিতে এসেছিলেন, তিনি বাবা সাহেবকে প্রশ্ন করেন কে তিনি আগেরবার সংবিধান পোড়ানোর কথা বলেছিলেন। সে প্রশ্নের উত্তরে বাবা সাহেবের জবাব ছিল, 'শেষবার তিনি তাড়াহুড়ো করে সম্পূর্ণ উত্তর দিতে সক্ষম হননি। আমি খুব ভেবেচিন্তে বলেছিলাম যে আমি সংবিধান পোড়াতে চাই।' ডাঃ আম্বেদকরের কথায়, আমরা মন্দির তৈরি করি যাতে ঈশ্বর এসে সেখানে বাস করতে পারেন। যদি অসুররা এসে ভগবানের সামনে থাকতে শুরু করে, তাহলে মন্দির ধ্বংস করা ছাড়া আর কি উপায় থাকবে। কেউ মন্দির তৈরি করে না এই ভেবে যে সেখানে রাক্ষস বাস করতে শুরু করবে। সবাই চায় মন্দিরে দেবতারা বাস করুক। এ কারণেই সংবিধান পোড়ানোর কথা উঠেছিল।'
সংখ্যালঘুদের কিছুতেই উপেক্ষা করা যাবে না
বাবা সাহেবের এই জবাবে একজন সাংসদ বলেছিলেন, মন্দির ধ্বংস না করে কেন অসুরকে নির্মূল করার কথা বলেন না। এতে বাবা সাহেবের উত্তর ছিল আমরা এটা করতে পারি না। আমাদের এত শক্তি নেই। অসুররা সর্বদা দেবতাদের পরাজিত করত। অসুরদের হাত অমৃত রক্ষা করতে দেবতাদের তা নিয়ে পালাতে হয়েছিল। আমাদের যদি সংবিধানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তবে একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু উভয়ই রয়েছে সমাজে। সংখ্যালঘুদের একেবারেই উপেক্ষা করা যাবে না।
আসলে সেই সময় সংবিধানের অনেক ধারায় সংশোধনী নিয়ে খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন বাবা সাহেব ডাঃ ভীমরাো আম্বেদকর। তিনি বিশ্বাস করতেন, সংবিধান যতই ভালো হোক না কেন, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে তা কার্যকর হবে না। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে দেশের জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশেরও কম অভিজাত শ্রেণি দেশের গণতন্ত্রকে হাইজ্যাক করবে এবং বাকি ৯৫ শতাংশ তার সুফল পাবে না।'