• Kolkata Metro : সবার আগে ঘুমায়, ওঠেও সবার পরে! মেট্রোর সময় বাড়াতে হাইকোর্টে মামলা
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
  • অমিত চক্রবর্তী

    কথায় আছে, রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মা-বাবারা বার বার বলেন, বেশি রাত জাগিস না! কলকাতা মেট্রোও কি স্বাস্থ্যসচেতন বলেই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে? প্রশ্নটা উঠছে। আর সেটা তুলছেন কলকাতার লক্ষ লক্ষ নিত্যযাত্রীরা। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরি-ব্যবসা আর মোটেও দশটা-পাঁচটার কাজ নয়। কর্মব্যস্ত কলকাতার রাত ক্রমশ ছোট হচ্ছে।মধ্যরাতেও রমরমিয়ে ধাবা, ফুড জয়েন্টে ডাইন ইন চলছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে। অথচ কলকাতার সাবেক মেট্রো লাইন এবং মুকুটের নতুন পালক ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-সহ চালু মোট চারটি লাইন (গ্রিন, ব্লু, পার্পল, অরেঞ্জ) ধরলে শেষ মেট্রো ছাড়ে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে — হাওড়া ময়দান টু এসপ্ল্যানেড! অথচ দেশের আর কোনও মেট্রো সিটিতে এত তাড়াতাড়ি রাতের মেট্রো সার্ভিস বন্ধ হয় না। কমপক্ষে রাত ১১টায় ছাড়ে লাস্ট ট্রেন।

    মহানগরের মেট্রো শুধু আগে ঘুমোতে যাচ্ছে এমন নয়, ঘুম থেকে উঠছেও সবার থেকে দেরিতে। চেন্নাইয়ে প্রথম মেট্রো ছাড়ে ভোর সাড়ে ৪টে, দিল্লিতে সাড়ে পাঁচটা। আর কলকাতার লাইফলাইনের ঘুম ভাঙে সকাল ৬টা ৫০-এ! অথচ ভোরের লোকালে শহরতলির প্রচুর মানুষ কলকাতা-হাওড়ায় ঢোকেন কাজের তাগিদে। তাঁরা মেট্রোর সুবিধাই পান না। দেশের অন্য শহরগুলির সঙ্গে কলকাতার মেট্রো সার্ভিসের এই বৈষম্য নিয়ে ভার্চুয়াল মঞ্চে সমালোচনা চলছিলই। এ বার আদালতের দরজাতেও কড়া নাড়লেন এক নাগরিক।

    সবার আগে ঘুমায়, ওঠেও সবার পরে

    কলকাতায় মেট্রোর সার্ভিসের সময় এত কম হওয়ায় নাগরিকরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন, এই অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। পেশায় আইনজীবী আকাশ শর্মা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে জানিয়েছেন, কাজের থেকেও প্রতি মুহূর্তে মাথায় রাখতে হয়, রাতের শেষ মেট্রো যেন বেরিয়ে না যায়। আপাতত দেশের যে ১৫ শহরে মেট্রো রেল চলছে, তার নথি বলছে, শুধুমাত্র আমেদাবাদ, পুনে আর নাগপুরের থেকে একটু বেশি সময় যাত্রী পরিষেবা দেয় কলকাতা মেট্রো। কানপুর, কোচির মতো তুলনায় ছোট শহরেও নাগরিকরা কলকাতার থেকে বেশি সময় ধরে মেট্রো পরিষেবা পান।

    কলকাতা মেট্রো চালু হয়েছে ১৯৮৪ সালে। এখন সে চল্লিশে। সে তুলনায় বাকিরা নেহাতই শিশু। অথচ যাত্রী পরিষেবার সময়ের ক্ষেত্রে কলকাতা রীতিমতো পিছনের সারিতে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সকাল সাতটার আগে কলকাতার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যাওয়া ঝক্কির। কারণ বাস খুব কম। রাতেও সাড়ে ৯টার পরে নিশ্চিন্তে, কম খরচে বাড়ি ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ ফের সেটাই, বাস খুব কম।

    এখন রাত ৮টার পরে সরকারি তো দূর, বেসরকারি বাসেরও দেখা পাওয়া দায়। সেখানে ভরসার জায়গা হতেই পারত মেট্রো। কিন্তু সে-ও সাড়ে ৯টার পর ঘুমে ঢলে পড়ে! ফলে বেসরকারি সংস্থার কর্মী হোক বা স্টুডেন্ট— সবাইকেই ফিরতে হয় বেশি টাকা খরচ করে, অ্যাপ ক্যাব বা অটোয়। হাওড়া ও কলকাতা মিলিয়ে বর্তমানে চারটি রুটে মেট্রো চলছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫ কিলোমিটারে সার্ভিস দিচ্ছে তারা। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ব্লু লাইন। নিউ গড়িয়া (সকাল ৬টা ৫০) থেকে দমদম (রাত ৯টা ৪০) হয়ে দক্ষিণেশ্বর ( সকাল ৭ টা ও রাত ৯টা ২৮) পর্যন্ত এই লাইনে মেট্রো সর্বাধিক।

    দেশে এখন যে ১৫টি শহরে মেট্রো চলছে, তার মধ্যে দিল্লি ১২ রুটে সার্ভিস দিয়ে কলকাতাকে পিছনে ফেলেছে অনেক আগেই। মুম্বই-চেন্নাই মেট্রো কলকাতার থেকে অনেক পরে চালু হলেও দূরত্ব এবং সময়ের দিক থেকে বেশি সার্ভিস পান সেইসব শহরের নাগরিকরা। হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় তাই এই বঞ্চনা দূর করে কলকাতার নাগরিকদের জন্য রাতে মেট্রো সার্ভিস বাড়াতে হস্তক্ষেপ করার আবেদন করা হয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)