Lok Sabha Election 2024 : বাংলা-বিহার-মহারাষ্ট্র, কোন অঙ্কে লোকসভায় BJP-র ভাগ্য বদলাবে তিন রাজ্য?
এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৪
দেশের তিনটি এমন রাজ্য রয়েছে যেখান থেকে মোট ২৫ শতাংশ প্রার্থী সংসদ নির্বাচিত হয়ে পৌঁছন লোকসভায়। কিন্তু, এই তিন রাজ্য যে কোনও দিকে ঝুঁকে মুহূর্তেই বদলে ফেলতে পারে লোকসভা ভোটের সমস্ত সমীকরণ। এই তিন রাজ্য হল বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং মহারাষ্ট্র। জানেন এই তিন রাজ্যের ফলাফল নিয়ে কোনওরকম ইঙ্গিত কেন বাস্তবে মেলে না?মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট সাতটি স্যুইং স্টেট রয়েছে। যারা কখন যে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন জানায় আর কখন রিপাবলিকানদের, ধরতে পারবেন না। ভারতেও এই তিন রাজ্যের ফলাফলের উপরই নির্ভর করবে আদৌ NDA ৪০০ আসন পাবে কি না। তিন রাজ্যের মোট ১৩০ জন সাংসদ লোকসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। যা সংসদের নিম্নকক্ষের প্রায় এক চতুর্থাংশ।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের লড়াই জমে উঠেছে ইতিমধ্যেই। এখানে লড়াইটা কেন্দ্রের শাসকদলের সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলের। লোকসভা ভোটের মাত্র কয়েকমাস আগে বিহারে বড়সড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল ইউনাইটেড ফের একবার NDA-তে যোগ দেয়। এই রাজ্য বরাবরই অনিশ্চিত ফলাফল দেয়। লোকসভা ভোটের আগে এই পালাবদল সেই অনিশ্চয়তার তালিকায় এক্সট্রা পয়েন্ট যুক্ত করেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে মহারাষ্ট্রেও মহানাটক দেখা গিয়েছে। দু'টি বড় দল আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে। দুই দলেরই একটি করে অংশ NDA এবং অপরটি INDIA-তে রয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে মারাঠা রাজনীতির সমীকরণ রীতিমতো ঘুম ওড়াচ্ছে প্রার্থীদের।
বাংলায় BJP ফের আশাহত হবে?বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ২০১৯ সালে BJP সাফল্যের মুখ দেখেছিল বাংলায়। এবার আসন সংখ্যা বাড়াতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। যদিও বেশ কিছু পকেটে সংগঠনের অভাব শাসকদলের সামনে ধরাশায়ী করতে পারে পদ্ম শিবিরকে। আবার প্রশান্ত কিশোর, তৃণমূলের প্রাক্তন ভোটকুশলী মনে করছেন, 'BJP এবার বাংলায় এক নম্বর দল হবে। সারপ্রাইজিং ফল করবে তারা।' উল্লেখ্য, পাঁচ বছর আগে লোকসভায় ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসন জিতেছিল BJP। জঙ্গলমহল এবং উত্তরবঙ্গে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করেছিল তারা। ২০১৪ সালের ১৭ শতাংশ থেকে রাতারাতি ২০১৯ সালের ভোটের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪০ শতাংশে। কংগ্রেস এবং বামেদের ভোটের একটি বড় অংশ গেরুয়া শিবির পকেটস্থ করেছিল। বাংলায় এসে মোদীর প্রচারগুলি এবারেও বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও সাত দফার ভোটে, তিন মাসে অনেক হিসেব-নিকেশ উলটে যেতে পারে বলেও অনুমান। ফলে প্রতিটি আসন গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল যদি গতবারের থেকে দু'তিনটি আসন বেশি পায় তাহলেও সব পাশা বদলে যেতে পারে বলেও জানাচ্ছেন তারা। কারণ ২০২৪ সালের ভোট গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলায় তা ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের জমি তৈরি করবে। বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ৩০ শতাংশ অ্যাডভানটেজে রয়েছে তৃণমূল, ৩০ শতাংশ ডিসঅ্যাডভানটেজে BJP।
বিহারের ফলাফল চমকে দেবে ২৪-এ?২০১৯ সালে ৪০টির মধ্যে ৩৯টি আসনে জয় পেয়েছিল NDA। তবে বরাবরই এই রাজ্যের ফলাফল চমকে দেয়। ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে BJP সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে বলে মনে করা হয়েছিল তবে গণনার দু'ঘণ্টার মধ্যে দেখা যায় নীতীশ-লালুর মহাগঠবন্ধন চমকে দেওয়ার মতো রেজাল্ট করে। ২০২০ সালে NDA-তে থেকে বিধানসভায় জয়ী হয় JDU। এরপর ২০২০ সালে নীতীশ দলবদল করে লালু এবং তেজস্বীর সঙ্গে জোট তৈরি করে সরকার গঠন করেন। ফলে পালটি খেয়ে ২০২৪ সালে তিনি NDA-তে যোগদান করেন। ফলে এবারের লোকসভা নির্বাচনে কার্যত একাধিক আসন নিয়ে কোনও সঠিক ইঙ্গিত মিলছে না।
মহারাষ্ট্রে দুই পার্টির আড়াআড়ি ভাগে বড় প্রভাবলোকসভা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী নির্বাচিত হয় মহারাষ্ট্র থেকেই। ২০১৪ সাল থেকে এই রাজ্য NDA প্রার্থীদেরই জিতিয়ে আসছে। তবে তার মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালেও NDA ৪৮টির মধ্যে ৪১টি আসনে জয়লাভ করেছিল। সে সময় BJP-র সঙ্গে জোটে ছিল উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা। এবার তাদের সঙ্গে শিন্ডেসেনা। উদ্ধব রয়েছেন INDIA জোটে। আবার শরদ পাওয়ারের NCP রয়েছে বিরোধীদের সঙ্গে। অজিত পাওয়ারের NCP শাসক শিবিরে। এই আড়াআড়ি বিভাজনে ভোটাররাও বিভ্রান্ত। ফলে এবারের নির্বাচনী ফলাফলে মহারাষ্ট্রে অনেক সমীকরণ বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রাজ ঠাকরে NDA শিবিরে যোগ দেওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছে। সেটিও অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে লোকসভায়।