• Iran Israel War: ২০০ মিসাইল ছোড়ার পরও কাঁচকলা! কোন জাদুবলে ইরানি হামলা ঠেকাল ইজরায়েলি আয়রন ডোম?
    এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৪
  • জল্পনা সত্যি করে ইজরায়েলে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান। আইডিএফ (ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স) সূত্রের খবর, ২০০-এর বেশি ড্রোন দিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারেনি।ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলেছে, 'ইরান থেকে ছোড়া কয়েক ডজন ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ভূ-পৃষ্ঠে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ইসরায়েলের ভূখণ্ডের দিকে আসে। ইজরায়েলি ভূখণ্ড অতিক্রম করার আগে কৌশলগত মিত্রদের সঙ্গে যৌথভাবে অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা এর ৯৯ শতাংশকে প্রতিহত করেছি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সাফল্য।'

    ইজরায়েল আরও জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়নি। এই হামলায় তাদের তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইরানের এই হামলা প্রায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কীভাবে ইরানের এই হামলা প্রতিহত করলো ইজরায়েল? আসুন জেনে নেই কী ছিল ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়।

    ইজরায়েলের তর্কাতীতভাবে বিশ্বের যে কোনও স্থানে পাওয়া সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাল্টিলেয়ার ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (IADS) রয়েছে। এ কারণেই ইরানের বিমান হামলা ঠেকিয়েছে ইসরাইল। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইজরায়েলের ক্ষতি করতে পারেনি সেভাবে। তবে ইরানের হামলা নস্যাৎ করার জন্য ইজরায়েলকে মোটা মূল্য চোকাতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জেনে নিন ইজরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা সম্পর্কে।

    অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম কী?

    অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থার সহযোগিতায় ইজরায়েলের অ্যারো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এটি হল ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি ইজরায়েলের বহু স্তরযুক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরের স্তর। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টা হিসাবে এই প্রযুক্তির আরও উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল। ১৯৯০ এর দশকে কমপক্ষে সাতটি ফ্লাইট পরীক্ষা করা হয় অ্যারো ওয়ান সিস্টেমের। চলে গবেষণা। এরপর ২০০০ সালে হালকা ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় যুক্ত করা হয় অ্যারো-২ নামে আরেকটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ২০১৫ সালে অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন করে ইজরায়েল । গত বছর এটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। সেবার এটি সফলভাবে হুতিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।

    বিমান প্রতিরক্ষা অস্ত্রাগারে অ্যারো-২ ক্ষেপণাস্ত্রের সংযোজন ইজরায়েলকে উপরের বায়ুমণ্ডলে হিট অ্যান্ড কিল পদ্ধতির সঙ্গে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিরোধের ক্ষমতা দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল শত্রুর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তার অবতরণ পর্যায়ে পৌঁছনোর আগেই সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া।

    আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং অ্যারো ডিফেন্সের সমন্বয়ে ত্রি-স্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে ইজরায়েল । বহুল পরীক্ষিত আয়রন ডোম সিস্টেম সক্রিয়ভাবে ড্রোন ও স্বল্প পরিসরে শত্রুদের হামলা আটকাতে মোতায়েন করা হয়েছিল। ডেভিডস স্লিং নামে পরিচিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করে মাঝারি থেকে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায়।

    যেভাবে কাজ করে অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম

    অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে সেগুলোর রকেটে রয়েছে দ্বি-পর্যায়ের সলিড প্রপেলান্ট বুস্টার। এটি শব্দের চেয়ে নয়গুণ বেশি গতিতে লক্ষ্যবস্তুর দিকে আঘাত হানতে সক্ষম। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইএল/এম-২০৮০ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার গ্রিন পাইন ফায়ার কন্ট্রোল রাডার (এফসিআর), একটি হ্যাজেলনাট ট্রি লঞ্চ কন্ট্রোল সেন্টার (এলসিসি) এবং একটি সিট্রন ট্রি যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র রয়েছে। গ্রিন পাইন রাডার দূরপাল্লার লক্ষ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রও আটকাতে পারে এটি। ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ ধ্বংস করতে পারে ১৪টি লক্ষ্যবস্তুকে। এছাড়াও এফসিআর সিস্টেমের ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রতিরোধেরও ক্ষমতা রয়েছে। গ্রিন পাইন রাডারের কার্যকর পরিসীমা ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।

    এই রাডারটি ক্রমাগত অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসা আক্রমণকে চিহ্নিত করে আগে থেকে। একবার একটি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত হওয়ার পর, এর আনুমানিক গতিপথ, গতি এবং ক্ষেপণাস্ত্রটি শহর বা সামরিক স্থাপনার মতো কৌশলগত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হলে সেই সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সরবরাহ করে রিয়েল টাইম তথ্য ।

    ক্ষেপণাস্ত্রটি উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। বুস্টার রকেটটি শব্দের চেয়ে নয় গুণ বেশি শক্তিতে উড়ে যায়। রকেটে থাকা ফিনড কিল ভেহিকেলটি ক্ষেপণাস্ত্র অনুসন্ধানকারীর নির্দেশিত দিকে ফোকাস করতে পারে তার বিস্ফোরণকে। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হলে এটি ফ্র্যাগমেন্টেশন ওয়ারহেড টার্গেটের ৪০ মিটারের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়।

    অ্যারো রকেট ধ্বংসের অস্ত্র হিসাবে এটি তৈরি হয়েছে গতিশক্তি ব্যবহার করার নীতির উপর ভিত্তি করে। অ্যারো রকেটের হাইপারসনিক গতি এটিকে সুযোগ দেয় স্যাটেলাইট বিরোধী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের। এই অ্যারো ডিফেন্স সিস্টেমের মিল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের সঙ্গে।
  • Link to this news (এই সময়)