এই সময়: নবরাত্রির সময়ে আমিষ খাওয়া নিয়ে মন্তব্য করে প্রথম তোপটা শুক্রবার দেগেছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সেই বক্তব্যের পাল্টা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, বাংলার কোথাও জিতলে মাছ খাওয়াই বন্ধ করে দেবে গেরুয়া ব্রিগেড।জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরের জনসভায় শুক্রবার মোদীর মন্তব্য ছিল, নবরাত্রির সময়ে আমিষ খেলে মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়। এটা মুঘল মানসিকতার পরিচয় বলেও মন্তব্য তাঁর। আর শনিবার পাল্টা মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে সতর্ক করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
কোচবিহারের সিতাইয়ে জোড়াফুলের প্রার্থীর সমর্থনে শনিবার রোড-শো করেন তিনি। রোড-শো শেষে জনসভায় অভিষেক বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীরে সভা করে বলেছেন, যারা মাছ খায়, তারা হিন্দু-বিরোধী। তারা মুঘল। আপনারা একবার হাত তুলে বলুন তো কারা মাছ খান? হাত তুলে বলুন। আমি নিজেও মাছ খেতে ভালোবাসি। আপনাদের সবাইকে দেশ-বিরোধী বলছে। কে বলছে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’
কেন মোদী ওই মন্তব্য করেছেন, তার নিজস্ব ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘কেন বলছেন (মোদী)? কারণ, আপনারা মাছ খান। এই নিশীথ প্রামাণিক যদি জেতে, প্রথমেই কোচবিহারে মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেবে। কারণ, তাঁর নেতা বলছেন, যে মাছ খাচ্ছে, সে দেশ-বিরোধী। সে দেশের শত্রু। তাঁদের (উনি) মুঘলদের সঙ্গে তুলনা করছেন। আমি তো সকাল-বিকেল মাছ খাই। আমাদের দুর্গাপুজো, কালীপুজোতে মাছ-মাংস ছাড়া মায়ের ভোগ হয় না।’
উধমপুরের নির্বাচনী জনসভায় কী বলেছিলেন মোদী? মূলত রাহুল গান্ধী ও লালুপ্রসাদ যাদবকে ইঙ্গিত করে নমো বলেন, ‘যখন মুঘলরা আক্রমণ করত, তখন তারা কোনও রাজাকে পরাজিত করে সন্তুষ্ট হতো না। যতক্ষণ মন্দির না ভাঙা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা সন্তুষ্ট হতো না। সে ভাবেই সাওন মাসে (শ্রাবণ মাস) এরা (আমিষ খাওয়ার) ভিডিয়ো দেখিয়ে মুঘলদের মানসিকতা দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করতে চাইছে। এরা নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক শক্ত করতে চায়। নবরাত্রির সময়ে আমিষ খাওয়ার ভিডিয়ো দেখিয়ে মানুষের ভাবাবেগে আঘাত দেয়।’
বেশ ক’মাস আগে একটি ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে কংগ্রেস। সেখানে দেখা যায়, লালুপ্রসাদের বাড়িতে রান্না করছেন রাহুল। সে দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, ‘আদালত যাঁকে সাজা দিয়েছে, যিনি জামিনে রয়েছেন, সেই অপরাধীর বাড়িতে গিয়ে মাটন রান্না করে মজা করছে।’
বিজেপির প্রার্থীরা পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের মোদীর প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরে প্রচার চালাচ্ছেন। তাই মোদীর ভাবনার সঙ্গে তাঁর দলের প্রার্থীদের ভাবনার কোনও পার্থক্য থাকবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ভারতের মতো দেশের বহুমাত্রিক বৈচিত্রকে গেরুয়া ব্রিগেড অস্বীকার করতে চায় বলে তাঁদের বক্তব্য। অভিষেক এ দিন বলেন, ‘মোদীকে বলব, বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা আপনি জানেন না। আমাদের মনের কথা বোঝে না, আমাদের ভাষা বোঝে না, পড়তে পারে না, লিখতে পারে না। আবার দেখুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে বালুরঘাটকে বলেছেন বেলুরঘাট। এঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জানেন না। এ জন্যই এঁদের আমরা বাংলা-বিরোধী বলেছি।’
যদিও বঙ্গ-বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধেই পাল্টা বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ করছে। কোচবিহারে এ দিন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিভাজনের রাজনীতি করতে তৃণমূল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কোচবিহার-সহ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের ভাবতে হবে, তাঁরা কতদিন শুধু ভোটার হয়ে থাকবেন? কতদিন তৃণমূলের মিথ্যাপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন?’
নবরাত্রির সময়ে আমিষ খাওয়া মুঘল মানসিকতার পরিচয় বলে মন্তব্য করলেও মোদী এ-ও বলেছেন যে দেশের আইনে খাদ্যাভ্যাসে কোনও বাধা নেই। শমীকের কথায়, ‘কানুন কিসিকো ভি কুছ ভি খানে সে নেহি রোকতা। অউর নাহি মোদী রোকতা হ্যায়। সবকো স্বতন্ত্রতা হ্যায়, যব মন করে, ভেজ খায়ে, অউর নন-ভেজ খায়ে।’