Sarabjit Singh: পাক জেলেই লোহার রড-ইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা! ২২ বছর বন্দি থাকা কে এই সরবজিৎ সিং?
এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৪
পাকিস্তানের লাহোরে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজদের গুলিতে মৃত্য়ু হয়েছে পাক জেলে বন্দি থাকা ভারতীয় নাগরিক সরবজিৎ সিং খুনের অন্যতম অভিযুক্ত আমির সরফরাজ তাম্বার জন্য। অভিযোগ ছিল, পাকিস্তানের জেলে বন্দি থাকাকালীন ভারতীয়, সরবজিতের উপর চড়াও হয়েছিল সহবন্দিরা। সেই সময় হামলার অন্যতম অভিযুক্ত আমির আমির লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠা হফিজ সইদেরও ঘনিষ্ঠ ছিল বলে অভিযোগ। রবিবার লাহোরে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজকে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় আমিরের দেহ।কে এই সরবজিৎ সিং?
> পঞ্জাবের ভিখিউইন্ডের বাসিন্দা সরবজিৎ সিং অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ভুল করে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েছিলেন। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় পাক সরকার। যদিও ভারত সরকার বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সরবজিৎকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়। লাহোরের কড়া নিরাপত্তাবেষ্ঠিত কোট লাখপত জেলে বন্দি সরবজিতকে ইট ও রড দিয়ে নৃশংসভাবে সহবন্দিরা আক্রমণ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এক সপ্তাহ কোমায় থাকার পর ২০১৩ সালে ২ মে ভোটের লাহোরের জিন্নাহ হাসপাতালে মৃত্য়ু হয় তাঁর।
> পঞ্জাবের তারণ তারণ জেলার ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত ভিখিউইন্ডের বাসিন্দা ছিলেন সরবজিৎ। ১৯৯০ সালে সরবজিৎ সিং অপ্রকৃত অবস্থায় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীদের হাতে গ্রেফতার হন। তাঁর স্ত্রী দাবি করেছিলেন, সরবজিৎ ওয়াঘা সীমান্তের কাছে কাজ করতে গিয়েছিলেন মাঠে। তারপর আর ফিরে আসেননি।
> প্রথমে সরবজিতের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাকিস্তানে প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়। পরে ফয়সালাবাদ এবং লাহোরে চারটি বোমা হামলায় জুড়ে দেওয়া হয় তাঁর নাম। পাক সরকারের অভিযোগ ছিল, ওই হামলায় জড়িত ছিলেন সরবজিত। হামলায় সেবার পাকিস্তানে ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
> ১৯৯১ সালে, পাকিস্তানের একটি আদালত তাকে সন্ত্রাসবাদের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং পাকিস্তান সেনা আইনের অধীনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে উচ্চ আদালতের রায় বহাল থাকে। পরবর্তীকালে, সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেও তাঁর আবেদন খারিজ হয়।
> ২০১২ সালে সরবজিৎ পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্টরপতি আসফ আলী জারদারির কাছে আরও একবার প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। এরপর তাঁর মৃত্য়ুদণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বদলে যায়।
> একই বছর পাকিস্তানি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ভারতের সাথে বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে সরবজিতকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। তবে সরবজিতের জায়গায় এক অন্য ব্যক্তির মুক্তি মেলায় ক্ষুব্ধ হয় ভারত সরকার।
> ২০১৩ সালে লাহোরে একদল সহবন্দি জেলের মধ্য়েই হামলা চালায় সরবজিতের উপৎ। ইট লোহার দিয়ে মারধর করা হয় সরবজিতকে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। তাঁকে চিকিৎসার জন্য ভারত বা তৃতীয় কোনও দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত সরকারে আবেদনও পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান রে।
> ২০১৮ সালে পাকিস্তানের একটি আদালত প্রমাণের অভাব উল্লেখ করে তাম্বা এবং সহ-অভিযুক্ত মুদাসারকে
সরবজিতের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।
> বাবার খুনে অভিযুক্তের এমন মৃত্য়ুতে মোটেও সন্তুষ্ট নন সরবজিতের মেয়ে স্বপনদীপ কউর। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অন্য রকম হলেও স্বপনদীপের মতে, এটি ন্যায়বিচার হল না। বলেন, 'প্রথমে স্বস্তি পেলেও পরে মনে হয়েছে ন্যায়বিচার হল না এটা। আমার বাবাকে কেন খুন করা হয়েছিল সেই সংক্রান্ত একটা শুনানি চেয়েছিলাম।' এতেই অবশ্য থেমে থাকেননি স্বপনদীপ। তাঁর ধারণা, আমিরের হত্যার নেপথ্য়ে পাক সরকার রয়েছে। আমার বাবার খুনের পিছনে যদি তিন চার জন জড়িত থেকে থাকে তাহলে মনে হয় পাকিস্তান সরকারই আমিরকে মেরে সেই ষড়যন্ত্র ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।'