ভোটের আগে VIP-দের উপর হামলার ছক আইএস জঙ্গিদের! গোয়েন্দা নজরে নির্দেশক ‘ভাই’
প্রতিদিন | ১৫ এপ্রিল ২০২৪
অর্ণব আইচ: ভোটের আগে আইএস জঙ্গিদের টার্গেটে ছিলেন কয়েকজন ভিআইপি ও ভিভিআইপি। কোনও সমাবেশে তাঁদের উপর হামলা চালানোর ছক কষতে শুরু করেছিল আইএস জঙ্গিরা। বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও এনআইএ-র হাতে। তবে কোন রাজ্যে এই হামলা তথা নাশকতা ঘটানোর ছক কষা হচ্ছিল ও কোন কোন ভিআইপি জঙ্গিদের টার্গেটে ছিলেন, সেই তথ্যই জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা জেনেছেন, এই ব্যাপারে জঙ্গি সদস্যদের মদত যোগাচ্ছিল এমন এক আইএস জঙ্গি নেতা, যে তাদের কাছে ‘ভাই’ নামে পরিচিত। এবার এই ‘ভাই’কে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
বেঙ্গালুরুর বিস্ফোরণের ঘটনায় কাঁথি থেকে ধৃত আব্দুল মতিন আহমেদ তাহা ও মুসাভির হুসেন শাজিব নামে দুই আইএস জঙ্গিকে জেরা করে কলকাতা ও রাজ্যের অন্য জেলায় তাদের লিংকম্যানের সন্ধান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ‘ভাই’ নামে ওই ব্যক্তি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা, এমন সম্ভাবনাও গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এমনকী, গোয়েন্দাদের কাছে খবর, কোনও সমাবেশে নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানোর পর ‘এসকেপিং রুট’ বা পালানোর রাস্তাও খোঁজা শুরু করে দিয়েছিল ধৃত জঙ্গি নেতা আবদুল মতিন। নাশকতার পর তারা বাংলাদেশ বা নেপাল হয়ে পালানোর ছক কষে। ‘এসকেপিং রুট’ খুঁজতে তারা কয়েকদিনের জন্য ত্রিপুরায় যায়, এমন খবরও এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে। এই তথ্যগুলি তাঁরা যাচাই করছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুর ক্যাফেতে বিস্ফোরণের পর থেমে থাকেনি দেশের আইএস জঙ্গি সংগঠন। লোকসভা ভোটের আগে প্রত্যেকটি রাজ্য়ে যাতায়াত বেড়েছে ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের। বহু জায়গায় তাঁরা সমাবেশ করছেন। সেই সুযোগই নিতে চায় জঙ্গিরা। তারা কোনও ভিআইপি বা ভিভিআইপিকে টার্গেট করে সমাবেশেই বিস্ফোরণের ছক কষে। তার জন্য এই রাজ্য-সহ উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানার মতো কয়েকটি রাজ্যকে বেছে নিয়েছিল তারা। ভোটের আগে ভিআইপিদের সভা ও সমাবেশ নিয়ে জঙ্গিরা খোঁজখবর নিতে শুরু করে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের। আবদুল মতিন বেঙ্গালুরুরও আগে মেঙ্গালুরুতেও অটোর ভিতর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গি আবদুল মতিন।
আইএস জঙ্গি সংগঠনের ‘অ্যাসেট’ আবদুল মতিন ও সঙ্গী মুসাভির হুসেন কোনও জায়গায় আইইডি বা বিস্ফোরক বসিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে অত্যন্ত দক্ষ। তাই তাদের সাহায্যেই ঘটানো হত বিস্ফোরণ। কোনও সমাবেশের লাউডস্পিকার বা মঞ্চের কাছে থাকা যন্ত্রপাতির মধ্যে তারা বিস্ফোরক ‘প্ল্যান্ট’ করতে পারত, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অন্য জঙ্গি নেতা মোজাম্মেল শেরিফ এনআইএ-র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে আইএস নেতারা বিস্ফোরক সংগ্রহ করার ভারও আবদুল মতিনের উপর দেয়। সেই তদন্ত করতে গিয়েই গোয়েন্দারা জানতে পারেন, টর্ক ও টেলিগ্রামে ‘ভাই’ নামে একজনের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ ছিল আবদুল মতিন, মোজাম্মেলদের। তার কাছ থেকেই বিভিন্ন নির্দেশ নিত তারা। সেই ‘ভাই’য়ের নির্দেশেই তারা বিপুল ক্রিপ্টোকারেন্সি নগদ টাকায় পরিবর্তন করে। আবার তার নির্দেশমতো বেঙ্গালুরু থেকে ন’হাজার টাকায় দু’টি পুরনো মোবাইল কিনেছিল আবদুল মতিনরা। মোজাম্মেল সেই মোবাইল দু’টি মতিনদের হাতে তুলে দেয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, ঝাড়খণ্ডের রাঁচি ও ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্তে তিন আইএস নেতার সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ‘ভাই’ এই তিনজনের মধ্যে কোনও ব্যক্তি, না কি অন্য কেউ, গোয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছেন। এদিকে, রাঁচি থেকেই ভায়া কলকাতা বিমানে আবদুল মতিন ও মুসাভির হুসেন আগরতলা পৌঁছয়। ত্রিপুরায় গিয়ে তারা এক আইএস জঙ্গির সঙ্গে দেখাও করে বলে খবর। নাশকতা ঘটানোর পর তারা কোন রাস্তায় চোরাপথে বাংলাদেশ পালাবে, সেই রুট দেখতেই ত্রিপুরায় গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।