এই সময়: আততায়ীর ছুরির আঘাতে তিনি ও তাঁর ৯ মাসের মেয়ে, দু’জনে ততক্ষণে জখম। ছুরি নিয়ে শপিং মলে সেই দুর্বৃত্ত তাণ্ডব চালাচ্ছে উন্মত্তের মতো। বেশ কয়েক জন লুটিয়ে পড়েছেন ফ্লোরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই মা ও তাঁর কোলে ধরা শিশুর দিকে ফের তেড়ে এল আততায়ী। মা, ৩৮ বছরের যুবতী অ্যাশলি গুড বুঝলেন, এ বার আর রক্ষা নেই। আরও একবার ছুরির আঘাত মানে মৃত্যু অনিবার্য দু’জনেরই।নিজের যা হয় হোক, অন্তত মেয়েটাকে তো বাঁচাই— ঝটিতি এটা ভেবে এক আগন্তুককে অনুরোধ করে মেয়ে হ্যারিয়েটকে তাঁর হাতে তুলে দিলেন অ্যাশলি। তার পর যেটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটাই হলো। শনিবার দুপুরে সিডনির ওয়েস্টফিল্ড বন্ডাই জাংশন শপিং মলে অ্যাশলিকে আবারও ছুরির কোপ দিল ওই যুবক। ওটাই ছিল মারণ আঘাত। ওই যুবতীর দেহে তার পরেও কিছুক্ষণ প্রাণ ছিল। শেষমেশ তিনি হাসপাতালে মারা যান।
তবে নিজের জীবন দিয়ে অ্যাশলি গুড বাঁচিয়েছেন তাঁর মেয়েকে। ছুরিকাহত হ্যারিয়েটের কয়েক ঘণ্টা অস্ত্রোপচার হয় হাসপাতালে। তার বিপদ এখনও কাটেনি, তবে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। সিডনির ওই শপিং মলে মাত্র এক জন আততায়ীর ছুরি নিয়ে হামলায় নিহত পাঁচ মহিলা-সহ ছ’জন। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে ৯ মাসের হ্যারিয়েট-সহ ৮ জনকে। আততায়ীর মোটিভ এখনও সামনে আসেনি।
তবে ওই ঘটনায় উঠে আসছে দুই সুপার উওম্যানের বীরত্বের কথা। এক জন অবশ্যই অ্যাশলি গুড। আর অন্য জন এমি স্কট। সেই সিনিয়র পুলিশ ইনস্পেক্টর, যাঁর পিস্তলের গুলিতে দুর্বৃত্ত প্রাণ হারায়। একা তিনি মোকাবিলা করেন ওই আততায়ীর সঙ্গে। এমি স্কটের উপস্থিতবুদ্ধি, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সাহসী পদক্ষেপের ফলে হতাহতের সংখ্যা আর বাড়তে পারেনি।
ঘটনার পর পরই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ় পুলিশ ইনস্পেক্টর স্কটের প্রশংসা করে তাঁকে হিরো বলে অভিহিত করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, গুলি চালানোর আগে ইনস্পেক্টর স্কট ওই হামলাকারীকে ছুরি ফেলে দিয়ে ধরা দিতে বলেছিলেন। সেই সময়ে মলে থাকা এক মধ্যবয়সির কথায়, ‘ভয়ে তখন রীতিমতো কাঁপছি। হঠাৎ মহিলা কণ্ঠে শুনলাম, ওটা ফেলে দাও। কিন্তু লোকটা ছুরি না-ফেলে লেডি পুলিশ অফিসারের দিকে এগোতে গেল। তখনই তিনি গুলি করলেন। গুলি না-করলে আরও অনেকে মারা যেত।’
পুলিশ সূত্রের খবর, শপিং সেন্টারের কাছেই ছিলেন ইনস্পেক্টর স্কট। হামলার খবর পেয়ে তিনি আগে লোকজনের কাছ থেকে হামলাকারীর অবস্থান জেনে নিলেন, তার পর এগোলেন একা। শপিং মলের লেভেল ফাইভে। নিউ সাউথ ওয়েল্স পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অ্যান্থনি কুকের কথায়, ‘ইনস্পেক্টর স্কট একা জীবন বাঁচালেন বহু মানুষের।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ় প্রশংসা করেছেন মলে থাকা সেই অস্ট্রেলিয়ানদেরও, হামলার সময়ে যাঁরা শপিং মলে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। জখম শিশু হ্যারিয়েটকে যাঁরা আগলে রেখেছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন হ্যারিয়েটের নিহত মা অ্যাশলি গুডের পরিবার।