• নজিরবিহীন শর্তের
    বর্তমান | ২৫ নভেম্বর ২০২২
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বঞ্চনার বিকল্প ‘বিরল’ শর্ত। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে দুয়োরানি সুলভ আচরণের অভিযোগ কিছুতেই খণ্ডাতে পারছে না কেন্দ্র। এবার খবরের শিরোনামে এসেছে আবাস যোজনা। চলতি অর্থবর্ষের আট মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্রকল্পের বরাদ্দ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু নেপথ্যে রাজ্যের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে বেনজির কিছু শর্তের বোঝা। 

    বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক চিঠি দিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরকে জানিয়েছে, গ্রামীণ এলাকায় ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকাভুক্ত ৫০ লক্ষ নয়, মাত্র ১১ লক্ষ উপভোক্তা এই দফায় মাথার উপর ছাদ পাবেন। এর জন্য খরচ হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর কেন্দ্র দেবে, ৮ হাজার ২০০ কোটি। একইসঙ্গে রাজ্যে এসেছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব নগেন্দ্রনাথ সিনহার স্বাক্ষরিত ছ’দফা নির্দেশিকাও। তাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, এক মাস অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রামসভার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে ফেলতে হবে এই ১১ লক্ষ উপভোক্তার নাম। শুধু তাই নয়, সঙ্গে সঙ্গে প্রথম কিস্তির টাকাও পাঠিয়ে দিতে হবে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। নির্ধারিত এই একমাসের মধ্যে উল্লিখিত কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারলে বরাদ্দ বাতিল করে দেবে কেন্দ্র। সেই কারণে ট্রেজারি থেকে রাজ্যের এবং কেন্দ্রের অংশের টাকা সময় মতো একটি নোডাল অ্যাকাউন্টে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপশি কেন্দ্রের সাফ কথা, চালিয়ে যেতে হবে সোশ্যাল অডিটও। গাইডলাইন অনুযায়ী এই প্রকল্পের নাম এবং লোগো ব্যবহার করতে হবে আবাস যোজনা প্রকল্পের অধীন তৈরি প্রত্যেক বাড়িতে। অন্য কোনও নাম বা লোগো চলবে না। এর সঙ্গে এরিয়া অফিসার্স মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নজরদারি চালাতে হবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা ধার্য হয়েছে ২০২৪ সালের মার্চ মাস। অর্থাৎ, প্রতি ধাপের কাজ তিন মাসে শেষ করতেই হবে। না হলে প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে না। আর সেই সুযোগে বরাদ্দ বাতিল করবে কেন্দ্র।

    রাজ্যের রাজনৈতিক মহল বলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্র বাংলার মানুষকে লোকদেখানো বার্তা দিল, আমরা উন্নয়নের পক্ষে। কিন্তু নিঃশব্দে নজিরবিহীন শর্ত চাপিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল তৃণমূল সরকারকে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে লোকসভা ভোটে তার ডিভিডেন্ড তুলবে বিজেপি। আর একমাসের মধ্যে এই কঠিন কাজ রাজ্য করতে না পারলে গেরুয়া শিবির প্রচার চালাবে, কেন্দ্র টাকা দিয়েছিল, কিন্তু রাজ্য ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্যের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। রাজ্যের প্রশাসন অবশ্য ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে। সেই মর্মে পদক্ষেপ নেওয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। এদিন বিকেলে সব ডিএমের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী চূড়ান্ত অনুমোদনের ১০০ দিনের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

    আবাস যোজনায় রাজ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪০টি বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে, অর্থাৎ ২০১৮ সালে ফের একটি সমীক্ষা চালিয়ে প্রায় ৫০ লক্ষ নতুন উপোভোক্তার নাম নথিভুক্ত করে রাজ্য। মাঝে চার বছর অতিক্রান্ত। কোভিডের জন্য কাজ থমকে গিয়েছিল। তাই এই তালিকাভুক্তদের মধ্যে অনেকেরই এখন বাড়ি বা গাড়ি রয়েছে, বা অন্য কোনও কারণে তাঁরা আর এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। এঁদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। ২৫ ডিসেম্বর থেকে জিও ট্যাগিংয়ের পর বাড়ি তৈরিতে অনুমোদন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। কিন্তু ১০০ দিনের কাজের টাকা? বহু দাবি এবং অনুরোধ উপরোধ সত্ত্বেও সেই টাকা এখনও ছাড়েনি কেন্দ্র। এদিনও তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। সেই টাকা ছাড়লেও কি বেনজির শর্ত চাপাবে কেন্দ্র? সেই অপেক্ষাতেই আছে বাংলা।
  • Link to this news (বর্তমান)