গরমে গলা শুকিয়ে এলেও বোর্ডের লেখা খাতায় তুলতে গিয়ে জল খাওয়ার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে তাপমাত্রা ৪০-এর ঘরে আর ক্লাসের ভিতরে আরও চল্লিশ জন সহপাঠীর সঙ্গে গল্পগুজব করতে করতে জল সেই বোতলেই পড়ে থাকে। কিন্তু শরীর জল চাইছে, ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ছে। বেশিদিন এ ভাবে চললেই শরীর খারাপ হওয়া অনিবার্য।তাই এই গরমে ক্লাস চলাকালীন নিয়ম করে জল খাওয়ার রিমাইন্ডার দিতে অভিনব উদ্যোগ নিল রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্থান কেবল্স ডিএভি পাবলিক স্কুল। ওডিশা সরকারের ‘ওয়াটার বেল’-এর মতো মনে হলেও রূপনারায়ণপুর ডিএভি পাবলিক স্কুলের নিজস্ব উদ্যোগ পশ্চিম বর্ধমান জেলায় প্রথম বলেই জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর আগে কেরালায় শুরু হয়েছিল ‘ওয়াটার বেল’।
অর্থাৎ জলের জন্য বিরতি। ওডিশাতেও সম্প্রতি সেই একই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। বাংলার প্রতিবেশী রাজ্য ওডিশার স্কুলগুলিতে দিনের নির্দিষ্ট সময় ‘ওয়াটার বেল’ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। এই নিয়ম অনুযায়ী দিনের তিন সময়ে বেল বাজানো হবে। সেই বেল বাজলেই পড়ুয়াদের জল খেতে হবে। তারা ঠিক সময় জল খাচ্ছে কিনা তা দেখভাল করবেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
প্রায় ১৭৫০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে রূপনারায়ণপুর ডিএভি পাবলিক স্কুলে। অধ্যক্ষ সঞ্জয় মজুমদার জানান, ক্লাস চলাকালীন অন্তত দুই থেকে তিনবার তাঁর ঘর থেকেই স্কুলের ক্লাসে ক্লাসে জল খাওয়ার ঘোষণা করা হবে। সোমবার থেকেই তা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন তামপাত্রা ৪০-৪১ ছুঁইছুঁই। আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। গরম আরও বাড়তে পারে।
লোয়ার কেজি, আপার কেজি, ওয়ান, টু, থ্রি ক্লাসে আমাদের স্কুলে যথেষ্ট সংখ্যায় খুদে পড়ুয়ারা রয়েছে। তাদের সঙ্গে পানীয় জল থাকলেও তারা নিজে থেকে সব সময় জল খায় না। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয় সেজন্য শুধু তাদের নয়, আমরা আমাদের সমস্ত ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের জন্যই আমার ঘর থেকেই মাইকে করে নির্দিষ্ট সময় পরপর একাধিকবার ঘোষণা করব যাতে ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গে থাকা জল খেতে পারে।’
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘এছাড়াও আমি আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে সোমবার বৈঠক করে বলেছি তাঁরাও এই বিষয় ক্লাসে ক্লাসে যাতে নজর রাখেন। আমাদের স্কুলে ৭টি কুলার আছে যেখান থেকে ঠান্ডা জল পাওয়া যায়। পড়ুয়ারা যাতে পুরোটাই ঠান্ডা জল না-খায় এবং ঠান্ডার সঙ্গে যাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল মিলিয়ে খায় সেদিকেও নজর রাখার জন্য আমাদের কর্মীরা থাকবেন।’
ডিএভি স্কুলের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ ইউনুস খান বলেন, ‘গরমের সময় যাতে পুরোটাই এমন উদ্যোগ বজায় থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।’ এই বিদ্যালয়ের অভিভাবক অপূর্ব মাজি এবং অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই অভিনব ভাবনায় অবশ্যই ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে।’
আসানসোলের বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক এবং ইএসআই হাসপাতালের সুপার অতনু ভদ্রর বক্তব্য, ‘স্কুলে যাওয়া প্রত্যেক পড়ুয়ার কাছে অন্তত ১ লিটার জল রাখা উচিত। এই এক লিটারের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ আলাদা করে যদি তারা ওআরএস গুলে বাড়ি থেকে আনে তা হলে আরও ভালো। টাইট বা ফুল স্লিভ শার্ট না পরাই ভালো।’