বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া দেওয়াল লিখন নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। তা মেনে চলতে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশিকাও বের করা হয়। সব দলের প্রতিনিধিদের ডেকে কমিশন এ ব্যাপারে পইপই করে সাবধানও করে দেয়। কিন্তু কোথায় কী! নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোটের অনেক আগে থেকেই দেওয়ালের দখল নিতে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি। ২০২৪-এও সেই ছবি এতটুকু বদলায়নি।কমিশন সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর বেআইনি ভাবে দেওয়াল লেখার জন্য এ পর্যন্ত গোটা রাজ্যে প্রায় ৭,৮৮,৪৭৮টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্র তার সিংহভাগই মুছে দিয়েছে প্রশাসন। যদিও এই অপরাধের জন্য একজনও গ্রেপ্তার হয়নি। বেআইনি দেওয়াল লিখন মোছার জন্য বেশ কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ভোটের সময় এলেই প্রতিবার এই হ্যাপা পোহাতে হয় প্রশাসনকে।
কিন্তু যাঁরা জেনেবুঝে এই অপরাধ করছেন, তাঁদের গায়ে কোনও আঁচ লাগছে না। এ নিয়ে যারপরনাই বিরক্ত সরকারি আধিকারিকদের একাংশ। তাঁরা মান্ধাতার আমলের আইনকেই দায়ী করছেন। কলকাতা পুর এলাকায় বেআইনি দেওয়াল লিখন আটকাতে ১৯৮০ সালের কলকাতা পুর-আইনে নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। ২০২ ধারায় কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা রুজু করতে পারে পুরসভা। অপরাধ প্রমাণিত হলে জরিমানা দিতে হয় মাত্র হাজার টাকা। জরিমানার টাকা জমা না দিলে বড়জোর ১৫ দিনের কারাবাস হতে পারে।
কলকাতা পুরসভার আইন বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘জরিমানার পরিমাণ এতটাই কম যে, সেটা দিতে কারও অসুবিধে হয় না। পুরসভা কারও বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলেও বেশিরভাগ সময়ে অভিযোগকারী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেন না। তার থেকেও বড় কথা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে চান না।’ কলকাতা পুরসভার নথি বলছে, বেআইনি দেওয়াল লিখনের জন্য আজ পর্যন্ত কারও জেল-জরিমানা হয়নি। গ্রামের দিকে এ নিয়ে কোনও অভিযোগই দায়ের হয় না। ফলে অপরাধ ঘটলেও শাস্তির সংখ্যা শূন্য।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাড়ার ছেলে-মেয়েরাই দেওয়াল লেখেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পাড়ার লোকেরা সহজে অভিযোগ করতে চান না। বিচার পেতে গেলেও আদালতে যেতে হয়। পুলিশের দিক থেকে খুব একটা সহযোগিতা মেলে না। ফলে মামলাকারীর একার পক্ষে দোষ প্রমাণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা সত্ত্বেও বলব আইনটা একেবারে উঠিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। বলতে পারেন, এটা এক ধরনের আইনের চোখরাঙানি।’