• কেন্দ্রের CAA বিজ্ঞপ্তির জেরে রক্তক্ষরণ সাবেক ছিটমহলে
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়, কোচবিহার: নতুন করে সিএএ বিজ্ঞপ্তির পরে এখন নতুন আশঙ্কা! ফের রক্তক্ষরণ। দেশ বদলের পুরোনো যন্ত্রণা নতুন করে ফিরে এসেছে সাবেক ছিটমহলে। নব্য নাগরিকদের কী হবে? এই প্রশ্ন কোচবিহারের মধ্য মশালডাঙার বাসিন্দাদের। ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে যাঁরা এ দেশে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্বের কথা বলা হলেও সাবেক ছিটমহলের কোনও প্রসঙ্গ নেই। তাঁরা তো ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই। তাহলে?

    সোমবার দুপুরে চাঁদিফাটা রোদে মাঠের কাজ শেষ করে ঝুপড়ি দোকানে বসেছিলেন সাদ্দাম, জয়নাল, সেলিমরা। বয়স মধ্যগগনে হলেও জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁদের কম নয়। নিজভূমে পরবাসী হয়ে কেটেছে যৌবন। দীর্ঘ আন্দোলন করে সবে পেয়েছেন ভারতের নাগরিকত্ব। অথচ কেন্দ্রের সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তির সময়কালের সঙ্গে তাঁদের হিসেব মিলছে না। সাদ্দামদের মতো একই চিন্তা সাবেক ছিটমহলের অন্য বাসিন্দাদের।মনে হাজার প্রশ্ন চেপে রেখেই এ বছর ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেবেন তাঁরা। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা সেলিম শেখ বলেন, ‘ছিটমহল বিনিময়ের পরে গ্রামে পাকা রাস্তা হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটিও বসেছে৷ বেশ কিছু দাবি মিটিয়েছে সরকার। সব চেয়ে বড় দাবি মিটেছে নাগরিকত্ব। তবে চিন্তা বাড়ছে সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি নিয়ে৷ স্বাধীনতা পেয়েও কি আবার দেশ হারাতে হবে?’

    ভারতের অন্য সাবেক ছিটমহলের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নাগরিক আছেন কোচবিহারের মশালডাঙায়। ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল এই গ্রাম থেকেই। এরপরে তা ছড়িয়ে পড়েছিল অন্য ছিটমহলে। ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময়ের সময়ে দু’দেশের সমীক্ষায় থাকা প্রতিনিধিরা তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশের দিকে থাকা ভারতের ছিটমহল থেকে মূল ভূখণ্ডে ফিরতে চান কিনা।

    সাদ্দাম, জয়নালরা কেউ বাংলাদেশের দিকে যেতে আগ্রহ দেখাননি। বরং কোচবিহারে মূল ভূখণ্ডে ফেরার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন প্রায় এক হাজার মানুষ। তাঁদের একজন সেলিম শেখ। গাল ভরা সাদা দাড়ি। রোদে পোড়া কালচে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। ভুট্টার জমিতে কাজ করতে করতে বললেন, ‘এ বার কী হবে?’

    ছিটমহল আন্দোলনের নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘যেহেতু বিজ্ঞপ্তিতে ছিটমহলের প্রসঙ্গ আলাদা করে কিছু নেই তাই সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক৷ তড়িঘড়ি সিএএ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এমনটা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যে ৫৫টি বাংলাদেশের ছিটমহল যুক্ত হয়েছে ভারত ভুখণ্ডের সঙ্গে তার মধ্যে ১৩ হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটার আছেন৷ এছাড়াও ভারতীয় ছিটমহল থেকে এদেশে এসেছিলেন ৯২১ জন। সব মিলিয়ে সাবেক ছিটমহল বাসিন্দাদের ভোট প্রায় ১৪ হাজার।’

    রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ভয় ঢোকানো ও বিপদের মধ্যে ফেলা কেন্দ্রীয় সরকারের একমাত্র কাজ। সত্যিই তো ছিটমহলের বাসিন্দারা যাঁরা ২০১৫ সালের পরে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাঁদের কী হবে? এটা তো অবশ্যই চিন্তার ব্যাপার।’ কোচবিহার জেলা বিজেপির সভাপতি সুকুমার রায় অবশ্য বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগ নিয়ে ছিটমহলগুলি বিনিময় করেছে। তাই বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হওয়ার ব্যাপার নেই।’

    সাবেক ছিটমহলবাসীদের কিছুদিন ক্যাম্পে রেখে পরে ফ্ল্যাট বানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কেউ আবার কোচবিহার শহরে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছেন নিজের মতো করে। তেমনই একজন দিনহাটার নাজিরহাটের বাসিন্দা আব্দুল গনি। সিএএ নিয়ে কি এবার আন্দোলনের পথে হাঁটবেন? তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হবেন তাঁদেরই কোমর ভেঙে দেওয়া হবে। আন্দোলন করে কী হবে?’
  • Link to this news (এই সময়)