উনিশ নয়, ভোটযুদ্ধে ৯ বার হেরেই ময়দান থেকে বিদায়, প্রার্থী হলেন না রাহুল সিনহা
প্রতিদিন | ১৬ এপ্রিল ২০২৪
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ম্যাট্রিকে উনিশবার ফেল করে তবে ঘায়েল হয়েছিল গঙ্গারাম। বাংলা ছড়ার জগতে সকলের চেনা সেই ?সৎ পাত্র?র শেষ পরিণতি কী হয়েছিল, তা বোধহয় স্রেফ সুকুমার রায়ই জানতেন। কিন্তু আমরা জানি ভোটবঙ্গের ?সৎ পাত্র?র কথা। তিনি অবশ্য ১৯ বার ভোট-পরীক্ষায় বসার মতো অধ্যবসায় দেখাতে পারেননি। ৯ বার হেরেই বিদায় নিয়েছেন। তবে এবার আর প্রার্থী না হওয়ায় বিশেষ আক্ষেপ নয়, কিছুটা স্বস্তিতেই রয়েছেন তিনি। বলা হচ্ছে বাংলার নির্বাচনী পরীক্ষায় ৯ বার ?ফেল? করা বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার (Rahul Sinha)কথা। এর আগে বহু বিধানসভা, লোকসভা ভোটে লড়াই করা রাহুল সিনহার চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) প্রার্থী হননি। তবে বিজেপির তারকা প্রচারকের তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। ফলে এখন শুধুই সহকর্মীদের জেতানোর জন্য দলের হয়ে ভোট চাইবেন রাহুল সিনহা। এটাই আপাতত রুটিন।
সেই কবে আটের দশকে গেরুয়া রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন রাহুল সিনহা। তখন সবে বিজেপির জন্ম হয়েছে। রাহুল সিনহার কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের দোরগোড়ায়। ১৭ বছর বয়সে আরএসএস (RSS) অর্থাৎ সংঘের হাত ধরে পদ্মশিবিরে পদার্পণ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন শুধু দলের জন্য। রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে যোগাযোগ বেশ ভালো। কিন্তু সে অর্থে এখনও কোনও পদ নেই রাহুল সিনহার। তবে ২০০৯ থেকে ২০১৫, এই ছবছর তিনি ছিলেন বিজেপির (BJP) রাজ্য সভাপতি।
কখনও দার্জিলিং, তো কখনও মেদিনীপুর। আবার কখনও কলকাতা, তো পরেরবার হাবড়া। বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে বাংলার যে কোনও প্রান্ত থেকেই রাহুল সিনহাকে লড়াইয়ে নামিয়েছে গেরুয়া শিবির। তার অন্যতম কারণ, রাহুল নিজেও সংগঠন করতেন সর্বস্তরে গিয়ে। দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে দলের সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ায় প্রতি প্রান্ত তাঁর চেনাও। কিন্তু ভাগ্যের কী নিঠুর পরিহাস! একটিবারও রাহুল সিনহার ভাগ্যে জয়ের শিকে ছেঁড়েনি। কোনও ভোটে তিনি জিততে পারেননি। আর এই সংখ্যা এক, দুই, পাঁচ নয়। একেবারে ৯ বার! শেষবার ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে হাবড়া থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাস্ত। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সেই জ্যোতিপ্রিয় এখন রেশন দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে পদ্মশিবির প্রার্থী বাছাইয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে, কাটাছেঁড়া করেও বাংলার ৪২ আসনে প্রার্থী ঠিক করতে প্রায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলার দশা, তখনও কেউ রাহুল সিনহার নাম প্রস্তাব করেছিলেন কি না, জানা নেই। তবে প্রস্তাবনায় থাক বা না থাক, রাহুল সিনহা যে এবারের নির্বাচনে পদ্মশিবিরের সৈনিক হয়ে সরাসরি মাঠে নামছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবারই বাংলার শেষ আসন হিসেবে ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি অভিজিৎ দাস ওরফে ববি। অবশ্য তাতে নাকি তেমন আক্ষেপ নেই রাহুলের। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ভালোই হয়েছে একদিক থেকে। এবার আর জেতার চাপ বা হারের ভয় নেই। শুধু কি আর ভোটে জেতাই সাফল্য? এই যে এতগুলো বছর ধরে শ্রম দিয়ে, মন দিয়ে সংগঠন করেছেন, দলের অসময় একা কুম্ভ হয়ে গড় রক্ষা করেছেন, এসবই বা কম কীসে? আর রাহুল সিনহার এই মনোভাবের কারণেই তিনি দলের কাছে বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র।