অর্ণব আইচ: বেঙ্গালুরু (Bengaluru) বিস্ফোরণে অভিযুক্ত দুই আইএস জঙ্গি কলকাতায় (Kolkata) ঘাঁটি গেড়ে ছিল অন্তত ১৩ দিন। অথচ তাঁদের সম্পর্কে কোনও তথ্য পায়নি কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। ?ভুল? থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করার সিদ্ধান্ত নিল লালবাজার (Lal Bazar)। শহরের হোটেলে বা অতিথিশালায় আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পেতে বিশেষ পোর্টাল তৈরির পরিকল্পনা করল কলকাতা পুলিশের।
শহরে জঙ্গি যোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শহরের বহু হোটেল ও অতিথিশালা আন্তঃরাজ্য ‘অতিথি’দের সম্পর্কে তথ্য পুলিশকে জানাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় ফর্মও ভরছে না হোটেল কর্তৃপক্ষ। শুধু পরিচয়পত্রর কপি জমা দিয়েই হোটেলে থাকছেন ভিনরাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিরা। ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যার জেরেই শহরের প্রতিটি হোটেলের অতিথিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেতে আনা হচ্ছে এই পোর্টাল। যেখানে আন্তঃরাজ্য বা বিদেশি, প্রত্যেক অতিথিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রাখা হবে। তাঁদের নাম, আধার নম্বর, বিস্তারিত ঠিকানা, মোবাইল ও আরও বেশ কিছু তথ্য এবং সঙ্গে ছবি নথিভুক্ত করা হবে পোর্টালে। যাতে কোনও ব্যক্তির সম্পর্কে খোঁজ করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তথ্য পুলিশের হাতে চলে আসে, সেই ব্যবস্থাই নিচ্ছে লালবাজার।
পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, গত ১০ থেকে ১৪ মার্চ ও ২১ থেকে ২৮ মার্চ, অন্তত এই দু’দফায় কলকাতায় ছিল দুই আইএস জঙ্গি আব্দুল মতিন ও মুসাভির হুসেন। ধর্মতলা, খিদিরপুর ও একবালপুর অঞ্চলের অন্তত আটটি হোটেলে ছিল তারা। কিন্তু এর মধ্যে গোটা দু’য়েক হোটেল মাত্র তাদের সম্পর্কে তথ্য পুলিশকে পাঠিয়েছিল। গত ১০ মার্চ ও ১৩ থেকে ১৪ মার্চ তারা দু’জন যে দু’টি হোটেলে ছিল, তারা তাদের পরিচয়পত্রের কপি নিয়েছিল মাত্র। এস এন ব্যানার্জি রোডের একটি হোটেল শুধু তাদের দিয়ে ‘ফর্ম এ’ ভরানো হয়েছিল। মুসাভির হুসেন নামে আইএস জঙ্গি ইউশা শাহনওয়াজ ভুয়ো নামে ওই ‘ফর্ম এ’ ভর্তি করে। সেখানেও তারা শিলিগুড়ি থেকে পর্যটনের জন্য কলকাতায় এসেছে বলে জানায়। সেই সঙ্গে ভুয়ো আধার কার্ডের নম্বর, মহারাষ্ট্রের থানের পালঘরের ভুয়ো ঠিকানা ও ৩৫টি সিমকার্ডের মধ্যে থেকে নেওয়া একটি সিমকার্ডের নম্বরও মুসাভির লিখে দেয়। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই পরিচয় ভুয়ো কি না, তা তাদের কাছে যাচাই করার কোনও রাস্তা নেই। তাই বোর্ডাররা যে তথ্য দেন, সেই তথ্যই তাঁরা ‘এ ফর্ম’-এর মাধ্যমে পুলিশকে জানান। ওয়াটগঞ্জ বা একবালপুরের বেশিরভাগ হোটেলই পুলিশকে ‘এ ফর্মে’র মাধ্যমে বোর্ডারদের তথ্য জমা দেয়নি।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি অতিথি বা আন্তর্জাতিক বোর্ডারদের ক্ষেত্রে হোটেলগুলি বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ‘সি ফর্ম’ ভরে পুলিশকে জমা দেয়। কিন্তু আন্তঃরাজ্য অতিথিদের ক্ষেত্রে ‘এ ফর্ম’ ভরানো হয় না। তাই এনআইএ আধিকারিকরা যখন হোটেলগুলিতে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন, তখন তাঁরা ভুয়ো নামে থাকা দুই জঙ্গিকে সহজে শনাক্ত করতে পারেননি। যাবতীয় বোর্ডারদের নামের তালিকা ও পরিচয়পত্রের কপি তুলে নিয়ে গিয়ে দুই জঙ্গিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেন তাঁরা। বেশিরভাগ হোটেলই আধার কার্ডের ফটোকপি নিয়ে অতিথিদের থাকতে দেয়। দুই আইএস জঙ্গি গ্রেপ্তারির পর আরও কোনও ঝুঁকি নিতে চান না লালবাজারের কর্তারা। সম্প্রতি এই ব্যাপারে লালবাজারের পুলিশকর্তা নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছেন। নতুন পোর্টাল কীভাবে তৈরি করা যায়, সেই ব্যাপারেও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।