• Unnao Crime Case : সেই গণধর্ষিতার গ্রামে এখনও প্রবেশ নিষেধ
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৪
  • অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, উন্নাও

    আগে নহি যা সকতে আপ! কিঁউ নহি যা সকতে হ্যায় আগে? আরে বোলা না, আপ আগে নহি যা সকতে হ্যায় — জো পুছনা হ্যায়, ইঁয়া সে হি পুছিয়ে- আপকো আগে জানে নহি দেঙ্গে!উন্নাও লোকসভা আসনের অন্তর্গত একটি বিশেষ এলাকায় ঢুকতে গিয়েই প্রবল বাধার মুখে পড়তে হলো। মুখে গামছা বাঁধা জনা দশেক লোক হাতে বড় বড় লাঠি নিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন, কোনও ভাবেই ‘ওই তরুণীর’ পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া যাবে না। কোন তরুণী? অনেকেই ভুলে গেছেন সাত বছর আগে এই এলাকাতেই গণধর্ষণ করা হয়েছিল এক দলিত তরুণীকে। পরে তিনি যখন কোর্টে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছিলেন, তাঁকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছিল অভিযুক্তরা। তবে ভোলেননি ‘গ্রাম-রক্ষকরা।’ তাই এমন ‘হুকুম!’

    ২০১৭ সালের উন্নাও গণধর্ষণের এই ঘটনা গোটা দেশের মানুষের মনে প্রবল ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল৷ তারপর কেটে গিয়েছে সাত সাতটা বছর৷ এর পরেও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মনের আশঙ্কা, যদি উন্নাও গণধর্ষণের পুরোনো ঘটনা প্রভাব বিস্তার করে ভোটযুদ্ধে! সেই আশঙ্কা থেকেই সাংবাদিকদের বাধা, কোনওভাবেই নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা যাবে না, এমনকী তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন করাও এখানে গর্হিত কাজ৷

    কী ভাবে উন্নাও-র ধর্ষিতার পরিবারের দুই সদস্যকে লরিতে চাপা দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনাই চায় না এখনকার উন্নাও৷ উত্তরপ্রদেশ সরকারের দেওয়া ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, বিভিন্ন স্বেচ্ছসেবী সংস্থার তরফে কার সাহায্য — সব কিছুই পেয়েছিল ওই নির্যাতিতার পরিবার৷ তার পরেও দিন কাটছিল আতঙ্কের মধ্যে৷ এলাকার অত্যন্ত প্রভাবশালী বিজেপি নেতা ও এক সময়ের বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার উন্নাও ধর্ষণের জেরে জেলে যাওয়ার পরেই এখানকার নির্যাতিতার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র, এমনই দাবি সূত্রের৷

    এই পটভূমিতে বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ প্রত্যাবর্তনের লড়াই লড়ছেন — ভগবান শ্রীরাম-এর উপরে৷ এই রাম-মাহাত্ম্যই যে তাঁর প্রধান নির্বাচনী হাতিয়ার, তা গোপন করলেন না সাক্ষী মহারাজ৷ সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রচার করার ফাঁকে সাক্ষী মহারাজের সোজাসাপ্টা যুক্তি, ‘দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন কী ভাবে করতে হয়, তা হাতে কলমে শিখিয়ে গিয়েছেন খোদ রামচন্দ্র৷ বর্তমান সময়েও ওঁর বাণী সমান ভাবে প্রযোজ্য৷ এখানে বিরোধীরা যতই অপপ্রচার করুন না কেন বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারের আমলে হওয়া সার্বিক উন্নয়ন তা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে৷’

    এই আসন থেকে পরপর দু’বার জয়ী সাক্ষী মহারাজও মোদীর মতো হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন দেখছেন৷ লোকে তাঁকে কট্টরবাদী বললেও তিনি ‘সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়’ নীতি নিয়েই চলতে পছন্দ করে বলে দাবি এই বিজেপি প্রার্থীর৷

    যে উন্নাও একদিন মহিলাদের জীবনযাপন আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছিল এখন সেখানকার মহিলারা সম্পূর্ণ নিরাপদ, দাবি করছেন সাক্ষী মহারজের সমর্থক ও বিজেপির প্রমীলা শাখার নেত্রী উর্মিলা ‘বহেন’৷ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘মহিলাদের দিন প্রতি ৩০০ টাকা মজুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সাক্ষী মহারাজ৷ আর তাঁর প্রত্যক্ষ নজরদারিতে এখানে মহিলাদের আত্মসম্মান আজ অটুট৷ রাত বিরেতেও আমরা আজ সম্পূর্ণ নিরাপদ৷ এর পরে ভোটে অন্য রকম ফলের কোনও সম্ভাবনাই নেই৷’

    উন্নাওয়ের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অধিকাংশও দাবি করছেন বিজেপি প্রার্থীই জয়ী হবেন, পুরো হাওয়াটাই বিজেপির পক্ষে৷ এখানকার সপা প্রার্থী অন্নু ট্যান্ডন৷ ৬৬ বছর বয়সী অন্নু ট্যান্ডন উন্নাওয়ের প্রাক্তন সাংসদ, আগে কংগ্রেসে ছিলেন৷ ২০২০ সালে দল বদলে সপাতে যোগ দেন৷ তিনি মহারাজজিকে কড়া চ্যালেঞ্জ জানাবেন, তবে তা যথেষ্ট হবে না, দাবি উন্নাওবাসীদের একটা বড় অংশের৷
  • Link to this news (এই সময়)