এই সময়: তীব্র তাপের আবহে মঙ্গলবার ভোট-প্রচারের উত্তাপ বাড়িয়ে দিল রামনবমী-তরজা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই এ দিন প্রচারে বেরিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রামনবমী-প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আজ, বুধবার, রামনবমীর দিন বিজেপির প্ররোচনায় পা-দিতে নিষেধ করেন মমতা। জলপাইগুড়ির নির্বাচনী সভা থেকে রামনবমীর আগের দিন মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তাই দিয়েছেন তিনি।আর বালুরঘাট এবং রায়গঞ্জের সভা থেকে মোদীর স্পষ্ট বার্তা — তৃণমূল যতই বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করুক, এ বছর ধুমধাম করে রামনবমী পালন হবে রাজ্য জুড়ে। অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এ বছরের রামনবমী বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে প্রধানমন্ত্রীর মত। এই পরিস্থিতিতে আজ রামনবমী উদ্যাপন ঘিরে শাসক-বিরোধীর তরজার ঝাঁজ দেখে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করছে প্রশাসনও।
ক’দিন ধরেই রামনবমীর দিন দাঙ্গার আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর ধারণা, রামনবমীতে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করবে বিজেপি। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি লোকসভার অন্তর্গত ময়নাগুড়ির নির্বাচনী সভা থেকে সে কথা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। বলেন, ‘বিজেপির প্ল্যান আছে দাঙ্গা বাধানোর। ১৯ তারিখ প্রথম দফার ভোট। তাই অনেকদিন আগেই ওরা ১৭ তারিখ দাঙ্গা করার প্ল্যান করে রেখেছে। আমরা দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই। দাঙ্গা করে ভোট দখল করতে চায় ওরা।’
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, ‘কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না। সব উৎসবই আমাদের উৎসব। সব ধর্মই আমাদের ধর্ম। বিজেপি এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। সংখ্যালঘুদের কাছে হাত জোড় করে বলব, দাঙ্গা করতে দেবেন না।’ রামনবমী ইস্যুতে তৃণমূলের আক্রমণের জবাব এ দিন বালুরঘাট ও রায়গঞ্জের জনসভা থেকে দিয়েছেন মোদী। দু’টি সভা থেকেই তিনি ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, রামনবমীকে সামনে রেখে সংখ্যাগুরু ভোট এককাট্টা করার চেষ্টা বিজেপি করবেই। মঙ্গলবার বালুরঘাটে মোদী বলেন, ‘এ বছরের রামনবমী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অযোধ্যার রামমন্দিরে রামলালা বিরাজমান হওয়ার পর এটাই প্রথম রামনবমী।
আগামিকাল পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে রামনবমীর শোভাযাত্রা বের করা হবে। আমি জানি, এ বারও তৃণমূল রামনবমী উদ্যাপনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, ‘বাংলায় রামনবমীর মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয় না। এ জন্য আদালতে যেতে হয়। এ বারও আদালতের অনুমতি নিয়ে রামনবমী পালন করতে হচ্ছে বাংলায়।’ রায়গঞ্জের সভা থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে তোষণের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘যারা রামনবমী ও দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রায় পাথর ছোড়ে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি দিয়ে দেয় বাংলার সরকার। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সত্যেরই জয় হয়।’
এমনকী, এ দিন দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূলকে বিঁধতে গিয়ে সুকুমার রায়ের ‘চোর ধরা’ কবিতার দু’টি লাইন বাংলায় বলেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘বাংলার জনপ্রিয় কবি সুকুমার রায় লিখেছিলেন - আরে ছি ছি! রাম রাম! ব’লো নাহে ব’লো না, চলছে যা জুয়াচুরি, নাহি তার তুলনা!’ তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ‘রাম’ শব্দটি আছে, সুকমার রায়ের এমন কবিতাই মোদী বেছে নিয়েছেন তৃণমূলকে আক্রমণ করার জন্য।
এ দিকে রাজ্যে প্রথম দফার ভোটের মুখে বিজেপির ঘটা করে রামনবমী উদ্যাপনের কৌশলকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন তিনি ছিলেন আলিপুরদুয়ারে ভোট-প্রচারে। সেখানে অভিষেক বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া, তারাই ধর্মকে ঢাল করে রাজনীতি করে।’
তৃণমূলনেত্রীর মতো তিনিও দলীয় কর্মীদের প্ররোচনা এড়ানোর বার্তা দিয়ে মঙ্গলবার বলেন, ‘কাল রামনবমীর শোভাযাত্রা যদি বের হয়, প্রভু রামের কাছে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে জয় সিয়া রামের জয়ধ্বনি দেবেন। কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন, ২০১৯-এ আমাদের সঙ্গে যাঁরা প্রতারণা করেছেন, আগামী ১৯ এপ্রিল কড়ায়-গণ্ডায় তাঁদের জবাব দেবো। ’১৯-এর জবাব ১৯ এপ্রিল।’
মোদীর বিরুদ্ধে ভোট-প্রচারে রামকে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে এ দিনই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত বছরও রাজ্যের কিছু জায়গায় গোলমাল হয়েছিল। এ বার অশান্তি এড়াতে আজ জিটি রোডে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শোভাযাত্রায় অনুমতি দিতে চায়নি পুলিশ। তবে আদালত সেই আপত্তি খারিজ করে দিয়ে জিটি রোডে ২০০ জনকে নিয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রা বের করার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে। এ ছাড়াও আজ বিভিন্ন জেলায় নানা ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত রামনবমীর শোভাযাত্রায় যোগ দেবেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
রামনবমীকে এড়িয়ে যাচ্ছে না তৃণমূলও। রাজ্যের বহু জায়গায় দলের নেতাদের উদ্যোগে শোভাযাত্রা বেরোবে বলে জানা গিয়েছে। যেমন, আজ সকালে হাওড়ায় রামনবমীর শোভাযাত্রায় হাঁটতে দেখা যাবে সায়নী ঘোষ, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ রায়, মনোজ তিওয়ারির মতো নেতানেত্রীদের।