বিস্ফোরক জোগাড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা কাঁথি থেকে ধৃত জঙ্গিদের! প্রকাশ্যে নয়া তথ্য
প্রতিদিন | ১৭ এপ্রিল ২০২৪
অর্ণব আইচ: কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কাঁথি থেকে ধৃত দুই আইএস জঙ্গি। পূর্ব মেদিনীপুরে (Purba Medinipur) গা ঢাকা দেওয়ার সময় পাঁচজন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে দুই জঙ্গি আবদুল মতিন আহমেদ তাহা ও মুসাভির হুসেন শাজিব দেখা করেছিল বলেই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কোনও নাশকতার জন্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক বা আইইডি তৈরির জন্য ব্যাটারি বা তারের মতো বস্তু জোগাড় করার জন্য তারা ওই শ্রমিকদের সাহায্য নিচ্ছিল কি না, সেই তথ্যই গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন। যদিও বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম কাফেতে বিস্ফোরণের জন্য বিস্ফোরক তৈরির কাঁচামাল জঙ্গিরা ডার্কওয়েব থেকে কিনেছিল, এমন তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মার্চ কলকাতা থেকে হাওড়ার বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছয় দুই আইএস জঙ্গি আবদুল মতিন ও মুসাভির হুসেন। সেখান থেকে তারা বাসে করে কোলাঘাট হয়ে পৌঁছয় কাঁথিতে। এনআইএ-র সূত্র জানিয়েছে, কাঁথিতেও একাধিক হোটেলে ছিল তারা। ওই সময় এগরায় আইএস-এর এক পাণ্ডার সঙ্গে তাদের অনলাইনে যোগাযোগ হয়। কাঁথি থেকে বাসে করে এগরায় গিয়ে তারা ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে। পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় ওই ব্যক্তিই। ওই শ্রমিকরা কর্ণাটক ও হায়দরাবাদে বিভিন্ন রকমের কাজ করে। ভিনরাজ্যে থাকাকালীনই অনলাইন তথা সোশাল মিডিয়ায় তাদের মগজধোলাই করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এগরার ওই চাঁইকে বলা হয় আবদুল মতিনদের ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে। এপ্রিলের প্রথমেই বাড়ি ফিরেছিল ওই শ্রমিকরা। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ ও দেখা করে দুই জঙ্গি।
গোয়েন্দাদের কাছে খবর, যেহেতু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক হলেও সারের কাজে ব্যবহার করা হয়, তাই এই বস্তু ও আইইডির সার্কিট তৈরির জিনিসপত্র কীভাবে জোগাড় করা যাবে, ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুই জঙ্গি তা জানার চেষ্টা করে। ওই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। এই ব্যাপারে এনআইএ ধৃত আবদুল মতিনকে জেরা করলেও সে স্পষ্টভাবে তাদের নাম বা পরিচয় বলতে পারেনি। জেরার মুখে ধৃতদের দাবি, ওই বিস্ফোরক সংগ্রহ করার কারণও শ্রমিকদের তারা জানায়নি। উল্লেখ্য, তারা যে ভোটের আগে ভিআইপিদের উপর হামলার ছক কষেছিল, তা জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। বেঙ্গালুরুতে বিস্ফোরণের আগে কর্নাটকের আইএস জঙ্গি সংগঠনের মাথা মোজাম্মেল শেরিফ ডার্ক ওয়েবে বিস্ফোরক ও আইইডি তৈরির কাঁচামাল কেনে। আবার আপাতনিরীহ কিছু বস্তু অনলাইনেও কেনে। সেগুলি কুরিয়ারে আবদুল মতিনকে পাঠিয়ে দেয়। আব্দুল মতিন আইইডির সার্কিট তৈরি করে তার সঙ্গী মুসাভির হোসেনের হাতে তুলে দিয়েছিল। মুসাবির হোসেন বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু গত ২৭ মার্চ মোজাম্মেল গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে পরের নাশকতার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কারণেই ওই দুই জঙ্গি পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।