এই সময়: এবারের লোকসভা ভোটেই সব বুথে ভিভিপ্যাট ব্যবহার করা নিয়ে আগেই সরব হয়েছিল কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলি। তাদের দাবি ছিল, যাতে কোনওভাবেই ভোটপ্রক্রিয়ায় জালিয়াতির সুযোগ না-থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে অভিযোগ জানানোর মতো নতুন কোনও সূত্র দিতে পারেনি বিরোধীরা। তাই এই দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি কমিশন।কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলল, যদি কোনওভাবে কোনও আধিকারিক ইভিএম জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তাঁর সাজার জন্য কি কোনও আইন আছে? বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ এদিন বলেছে, কঠোর শাস্তির ভয় না-থাকলে তো ইভিএমে ম্যানিপুলেশনের সম্ভাবনা সব সময়েই থেকে যায়।
আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এটা খুবই গুরুতর বিষয়। কোনও অন্যায় হলে যে শাস্তির ব্যবস্থা আছে, এই ভয়টা থাকা দরকার।’ কমিশনের আইনজীবী যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, সরকারি নির্দেশিকা ভঙ্গের জন্য সেক্ষেত্রে সাজা হতে পারে। যদিও এই জবাবে খুব সন্তুষ্ট হতে পারেনি বেঞ্চ। বিচারপতি খান্না বলেন, ‘কোনওরকম জালিয়াতি হলে সাজার নির্দিষ্ট বিধান যে নেই, এটা পরিষ্কার।’ তবে আদালত এটাও স্পষ্ট বলেছে, ইভিএমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করা উচিত নয়।
ভিভিপ্যাটের সব স্লিপ গণনা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আবেদনের ভিত্তিতে এদিন শুনানি চলছিল শীর্ষ আদালতে। আবেদনকারীদের দাবি ছিল, প্রতিটি বিধানসভায় পাঁচটি করে ইভিএমের ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনার পরিবর্তে সব স্লিপ গুনতে হবে। আদালত বলে, ‘সাধারণত মানুষের হস্তক্ষেপ না-থাকলে যন্ত্র সঠিক তথ্য দিতে পারে। তবে যেখানে সফটওয়্যার বা যন্ত্রে মানুষের হস্তক্ষেপ অথবা কোনও ধরনের বদল করার সুযোগ আছে, সেখানে সমস্যা হতেই পারে।’
এটা বন্ধ করার জন্য কোনও পরামর্শ থাকলে সেটা মামলাকারীরা দিতে পারেন বলে জানায় আদালত। আবেদনকারীদের তরফে ইভিএমের পরিবর্তে আবার পেপার ব্যালটে ভোটগ্রহণ ফেরানোর আর্জি জানানো হলেও তাতে সায় দেয়নি শীর্ষ আদালত। এনিয়ে আদালত যে এই মুহূর্তে বিতর্ক চাইছে না, সেটাও জানিয়ে দেয় বেঞ্চ। তবে কোনও স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ সংস্থার টেকনিক্যাল টিমকে দিয়ে ইভিএম পরীক্ষা করানো যায় কি না, সেটাও আদালত বিবেচনা করে দেখতে বলেছে।
সব পোলিং বুথে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি আছে কি না, আদালত তা-ও জানতে চায়। কমিশন জানায়, সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ বুথ সিসি ক্যামেরার নজরদারির আওতায় রয়েছে। আগামী ১৮ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য রয়েছে। মামলার অন্যতম আবেদনকারী আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে যুক্তি দেন, ‘আমরা পেপার ব্যালটে ফিরে যেতেই পারি। আর একটা অপশন হলো ভিভিপ্যাট স্লিপ ভোটারদের দিয়ে দেওয়া যাতে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন, তাঁরা যাঁকে ভোট দিয়েছেন, সেখানেই ভোট পড়েছে কি না।’ এ প্রসঙ্গে তিনি জার্মানির উদাহরণ দেন।
বিচারপতি দত্ত জানতে চান, ‘জার্মানির জনসংখ্যা কত?’ প্রশান্ত ভূষণ জানান, ছ’কোটি। তখন বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। সেখানকার জনসংখ্যাই জার্মানির থেকে বেশি। আমাদের কোথাও একটা আস্থা ও ভরসা রাখতে হবে।’ বিচারপতি খান্নার বক্তব্য, ‘৯৭ কোটি হলো এ দেশের রেজিস্টার্ড ভোটারের সংখ্যা। আমরা জানি, ব্যালট পেপারের সময়ে কী হতো!’