• কবিগানে জঙ্গল রক্ষার বার্তা আউশগ্রামের লবণধারে
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মানকর: জঙ্গলে আগুন লাগা রুখতে সচেতনতা প্রচারে গান বাঁধলেন কবিয়ালরা। আউশগ্রামের লবণধার গ্রামে অন্নপূর্ণা পুজোয় বসেছিল কবিগানের আসর। সেখানেই কবিয়ালরা জঙ্গল রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

    লবণধার গ্রামের মাঝে রয়েছে অন্নপূর্ণা মন্দির। প্রতি বছর পুজো দেখতে স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও ভাতকুন্ডা, দেবশালা, ত্রিলোকচন্দ্রপুর থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন। পুজোর সঙ্গে যুক্ত কার্তিক ঘোষ, নবকুমার ঘোষ জানান, এখানে দেবীর সঙ্গে মহাদেব ও কুবের উপস্থিত থাকেন। প্রাচীন এই পুজো একসময়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে ঘোষ পরিবারের সদস্যরা ফের শুরু করেন। তারপর থেকে পুজো নিয়মিত চলছে। এবারে পুজোয় কবিগানের আয়োজন করা হয়। কবিয়ালরা সেই আসরেই জঙ্গলে আগুন না লাগানোর বার্তা দিয়েছেন। কবিয়াল অরুণ চট্টোপাধ্যায় ও সাধন বৈরাগ্য বলেন, জঙ্গল আমাদের মা। যেদিন প্রকৃতি রুষ্ট হবে সেদিন এই মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রকৃতি ধ্বংস করে আমরা নিজেদের ধ্বংস করছি। নিজেদের স্বার্থে গাছে আগুন লাগাচ্ছি। এটা কখনওই কাম্য নয়। জঙ্গলকে ভালোবাসুন।   

    উল্লেখ্য, গরম পড়লে প্রায়ই আগুন লাগে জঙ্গলে। কিছু অসচেতন মানুষ স্বার্থসিদ্ধির জন্য আগুন লাগায়। আগুন লাগানো উচিত নয়, এই সচেতনতার পাঠ দিতেই গ্রামের কয়েকজন মিলে তৈরি করেন একটি সংগঠন। তাঁদের উদ্যোগেই শুরু হয় দেওয়ালে ছবি এঁকে প্রচার। ধীরে ধীরে গোটা গ্রাম ভরে উঠেছে ছবিতে। লবণধার গ্রাম বর্তমানে আলপনা গ্রাম নামেও পরিচিতি লাভ করেছে। তবে এই নাম কে বা কারা দিয়েছে তা অজানা গ্রামবাসীদের কাছে। সংগঠন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা আসেন এই গ্রামে। বাড়ির দেওয়ালগুলিতে ছবি আঁকেন। 

    পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরল, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্য থেকেও শিল্পীরা আসেন। কিন্তু কবিগানের আসরে জঙ্গল রক্ষার পাঠ কেন? পুজোর অন্যতম আয়োজক ধনঞ্জয় ঘোষ বলেন, একটা সময় ছিল যখন ভাদু, টুসু, কীর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষকে সচেতন করা হতো। এখন সেই ধারা হারাতে বসেছে। মোটর সাইকেল  র‌্যালি, লিফলেটে প্রচার, ছবি আঁকা প্রভৃতি নানা উপায়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এবার কবিগানের মাধ্যমেও করা হল। সচেতনতা প্রচারের ক্ষেত্র বিস্তার করা হচ্ছে। সংগঠনের সদস্য অর্ণব ঘোষ, সুমন মণ্ডলরা জানান, অনেকেই জঙ্গলে নানা কারণে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে বনজ সম্পদ শুধু নয়, বনে থাকা প্রাণীদের জীবন সংশয় হয়। সম্প্রতি লবণধার গ্রাম থেকে শুরু করে আউশগ্রাম ও গুসকরা রেঞ্জের প্রায় সব জঙ্গলেই বাইক র‌্যালি করা হয়েছে। ভালো সাড়াও পেয়েছি। সংগঠনের সদস্য বা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কবিয়ালরাও চাইছেন জঙ্গল রক্ষা করতে সচেতন।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)