• সরকার গড়বে 'ইন্ডিয়া'ই, লিড করবে তৃণমূল: মমতা
    এই সময় | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • এই সময়: নরেন্দ্র মোদী নিজেই স্লোগান দিয়েছেন, 'অব কি বার চারশো পার'। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় মোদীর নেতৃত্বাধীন গেরুয়া শিবির চারশো না-হলেও অন্তত সাড়ে তিনশোর বেশি আসনে এগিয়ে রয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। এমনকী তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে আগামী একশো দিনে এনডিএ সরকার কী করবে, তার রূপরেখাও আগেভাগে ছকে ফেলছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী-সহ 'ইন্ডিয়া' নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপির ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দিল্লিতে 'ইন্ডিয়া'র সরকার গঠিত হলে সেখানে তৃণমূলই নেতৃত্ব দেবে বলে বুধবার অসমের শিলচরে নির্বাচনী জনভায় মন্তব্য করেছেন মমতা।

    বিজেপি সারা দেশে দু'শো আসন পাবে কি না, তা নিয়েও এদিন ফের সংশয় প্রকাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। অসমে এবার জোড়াফুল চারটি লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই করছে। শিলচরে রাধেশ্যাম বিশ্বাসের সমর্থনে জনসভায় মমতা এ দিন বলেন, 'এজেন্সি দিয়ে (মিডিয়াকে) ভয় দেখাচ্ছে। বলছে, চারশো পার হবে। আমি বলছি, আগে তো দু'শো পার করো। আগের বার (বিজেপি) পিকে উঠে ৩০৩ হয়েছিল। এবার তো আরও হারবে। গো-হারা হারবে।'

    দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতে ব্যর্থ হলে 'ইন্ডিয়া' জোটের যে বিকল্প সরকার তৈরি হবে, সেই সরকারে তৃণমূল গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে মঙ্গলবার একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন মমতা। এদিন শিলচরের সভায় তিনি বলেন, 'আপনাদের অনুরোধ করব, জোট বাঁধুন। জোট মানেই তৃণমূল কংগ্রেস। আমরাই ইন্ডিয়াকে পথ দেখাব। আমরা বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে একা লড়াই করছি। কংগ্রেস ও সিপিএম নেই। ওরা বিজেপিকে সাপোর্ট করে ওখানে। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে আমরা ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দেবো।'

    বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলের জনমত সমীক্ষায় মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে অ্যাডভান্টেজ দেখানো হয়েছে। ৯টি জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতে করা 'পোল অফ পোলস' বলছে, তৃতীয়বারের জন্য দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ফিরবে। তবে বিজেপি যে ৪০০ আসনে জয়ের কথা বলছে, সেটা সম্ভবত হবে না। 'পোল অফ পোলস' অনুযায়ী, ৫৪৩ লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেতে পারে ৩৬৫ আসন।

    লোকসভা নির্বাচন

    কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন 'ইন্ডিয়া' শিবিরের ঝুলিতে আসতে পারে ১২২টি আসন। বাকি ৫৬টি আসন কোনও জোটেই না থাকা দলগুলোর হাতে যেতে পারে। ৩৬৫টি আসন পেলে এনডিএ-র আসন সংখ্যা ২০১৯-এর (এনডিএ পেয়েছিল ৩৫৩) থেকে ৩.৪ শতাংশ বাড়বে। অন্যদিকে, ইউপিএ ২০১৯-এ পেয়েছিল ৯০টি আসন। সেই হিসেবে এ বার আসন সংখ্যা ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, অরুণাচল প্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, চণ্ডীগড়, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন-দিউতে এনডিএ-র জেতার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে।

    বাংলা এবং মহারাষ্ট্রে জোরদার টক্করের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। 'পোল অফ পোলস' বলছে, বাংলায় ৪২টি আসনের মধ্যে গতবার বিজেপি জিতেছিল ১৮টিতে, এবার সেটা বেড়ে ১৯ হতে পারে। দক্ষিণের তামিলনাড়ু এবং কেরালায় ২০১৯-এ একটাও আসন জিততে পারেনি বিজেপি। এবার তামিলনাড়ুতে দু'টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সমীক্ষায়।

    কর্নাটকে ২৮টি আসনের মধ্যে ২৩টি পেতে পারে এনডিএ জোট। অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভোটে বিজেপির ভাগ বসানোর সম্ভাবনা কম। তেলঙ্গানায় বিজেপি, কংগ্রেস এবং বিএরআসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে।

    যদিও এই জনমত সমীক্ষা নিয়ে রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, 'আমি আসন সংখ্যা নিয়ে কোনও অনুমান করতে চাই না। তবে ১৫-২০ দিন আগে মনে হচ্ছিল, বিজেপি ১৮০-এর মতো আসন জিতবে। এখন মনে হচ্ছে, ১৫০টা আসন পেতে পারে। প্রতিটা রাজ্য থেকে খবর পাচ্ছি, আমাদের দলের মাটি মজবুত হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশেও আমাদের জোট খুব মজবুত, আমরা ভালো ফল করবই।'

    বিজেপির এই চারশো পার হওয়ার স্লোগান নিয়ে মমতাও ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। একটি সাক্ষাৎকারে মঙ্গলবার তিনি বলেন, 'ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পর কংগ্রেস চারশোর বেশি আসনে জিতেছিল। এছাড়া এমন ফল কখনও হয়নি। যদি কোনও দল তাদের সাফল্য নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকে, তা হলে কেন এজেন্সিকে এভাবে চারিদিকে ব্যবহার করবে? বিজেপিকে দেখে নার্ভাস লাগছে।' এ দিন শিলচরের সভাতেও ভোটের সময়ে এজেন্সির ব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, 'এই যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা ভয়ঙ্কর। এত কলুষিত নির্বাচন আগে কখনও দেখেননি।

    গভর্নমেন্ট অফ দ্য এজেন্সি, বাই দ্য এজেন্সি, ফর দ্য এজেন্সি। গভর্নমেন্ট মিডিয়াকে যা বলছে, মিডিয়া তাই-ই করছে।' 'ইন্ডিয়া' জোটে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশপাশি এই জোট ক্ষমতায় এলে সিএএ থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি-র মতো পদক্ষেপকে বাতিল করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, 'আমরা জিতলে এনআরসি হবে না, তুলে দেবো। সিএএ হবে না, তুলে দেবো। ইউসিসি হবে না, তুলে দেবো। আজও যারা ডি-লিস্টে আছেন, ভবিষ্যৎ জানেন না। তাঁদের ভবিষ্যৎ করে দেবো। এই কথা বড় গলায় বলে গেলাম।'

    তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারেও সিএএ বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে মমতার নেতৃত্বে বাংলায় জোরদার আন্দোলন হয়েছিল। এ দিন অসমের জনতাকে সেই ইতিবৃত্তের বর্ণনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, 'আমি ওখানে আন্দোলন করছিলাম, তখন যে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিল আমার বিরুদ্ধে এফআইআর করল। আমার কী দোষ ছিল? আন্দোলন করছি বাংলায় আর বিজেপি এফআইআর করেছে অসমে। আমি কিন্তু এটা ভুলিনি। ছ'-সাতটা কেস করেছিল ওরা। কী করবে আমায়? গলা কাটবে? জেলে ভরবে? কতজনকে জেলে ভরবে।'

    এই লোকসভা নির্বাচনে অসমে জোড়াফুল চারটি আসনে লড়াই করলেও আগামী দিনে এই রাজ্যে তৃণমূল আরও জোরদার লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, 'আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস সব আসনে লড়াই করবে...। এটা তো আমার ট্রায়াল। ফাইনাল এখনও বাকি রয়েছে। অসমে আমি ট্রায়াল দিতে এসেছি, ফাইনাল খেলতে আসব আবার।'
  • Link to this news (এই সময়)