• ঘর নন-এসি, হাতপাখার হাওয়াই সম্বল এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট জলির
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • প্রীতেশ বসু, কোচবিহার: দিনভর তল্লাশিতে ব্যস্ত থাকে। তাই বিশ্রাম যাতে ঠিকঠাক নিতে পারে, তার জন্য একটি এয়ার কুলার বরাদ্দ তার। ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুরটির এর থেকে বেশি কিছু চাহিদা নেই। তবে কোচবিহারে আসার পর তার ভাগ্যে কুলারের ঠান্ডাটুকুও জুটছে না। ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবল গরমে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছে। কিন্তু রাত কাটাতে হচ্ছে নন এসি ঘরে। সিলিং ফ্যানের গরম হাওয়ায় ওর অস্বস্তি কাটছে না। ফলে খানিক স্বস্তি দিতে ওকে হাত পাখার বাতাস করে চলেছেন পুলিস কর্মীরা। 

    রাজ্য পুলিসের অন্যতম সদস্য ল্যাব্রাডরটির নাম জলি। বয়স সাড়ে তিন বছর। এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট হিসেবে ওর বেশ নামডাক হয়েছে। দক্ষ এবং বাধ্য কুকুরটিকে নিয়ে প্রবল গরমে বেজায় সমস্যায় পড়েছে ওর প্রভুরা।

    জলির বর্তমান ঠিকানা কোচবিহারের আপনজন হোটেলের ৩০৩ নম্বর রুম। ঘরটি নন-এসি। কুলার পর্যন্ত নেই। এখন তীব্র তাপপ্রবাহ। তা মাথায় নিয়ে দিনভর কাজ করছে ও। ১০ মার্চ থেকে একটানা ছুটে চলেছে। বিস্ফোরক রয়েছে কি না তা গন্ধ শুঁকে জানিয়ে দিতে পারে জলি। নরেন্দ্র মোদি থেকে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে অন্যান্য হেভিওয়েট নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কায়েম রাখার অনেকটা গুরুদায়িত্ব জলিরও কাঁধে। এই ভিভিআইপিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সে দৌড়চ্ছে জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

    রাজ্যে প্রথম পর্যায়ের ভোট ১৯ এপ্রিল। তার আগে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তরবঙ্গে চলছে তৃণমূল-বিজেপির হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীদের প্রচার। এঁদের অধিকাংশই জেড প্লাস সিকিউরিটির নিরাপত্তার আওতায় রয়েছেন। তাঁদের সভামঞ্চ সহ সংলগ্ন এলাকা মুড়ে ফেলা হয় কড়া নিরাপত্তার চাদরে। সেই কাজেই এখন চূড়ান্ত ব্যস্ত জলি। এর আগেও মোদি-মমতার সভার নিরাপত্তার অনেকটা দায়িত্ব ছিল ওর কাঁধে। এবারও দায়িত্ব একই রয়েছে। জলির হ্যান্ডলার কনস্টেবল পাণ্ডব মণ্ডল সর্বক্ষণ তার সঙ্গে সঙ্গে থাকেন। 

    পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে কীভাবে কাজ করতে হচ্ছে জলিকে এবং কেমন পরিস্থিতিতে থাকতে হচ্ছে। তিন মাস বয়সে মুর্শিদাবাদের পুলিস লাইনে এসেছিল জলি। নামকরণ করেছিলেন মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি। সেই থেকে ওই পুলিস লাইনই জলির ঘর-বাড়ি। এবারের নির্বাচনে ওর ডিউটি কোচবিহারে। আপাতত কোনও ছুটি নেই। মুর্শিদাবাদ পুলিস লাইনে জলি কুলারের হাওয়া পেতে অভ্যস্ত। কিন্তু কোচবিহারের হোটেলের ঘরে কুলার নেই। ঘরটি এসিও নয়। একটি মাত্র পাখা রয়েছে শুধু। ফলে গরমে ওর কষ্ট হচ্ছে। তা বুঝে রাতবিরেতে হাতপাখার বাতাস করে শরীর ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। 

    তবে জলির মতো দুর্ভাগ্য জিকলির নয়। জলপাইগুড়ি জেলায় ডিউটি করতে এসেছে মালদা স্টেশনের জিআরপির পুলিস কুকুর জিকলি। সে একটি এসি ঘর পেয়েছে। বর্তমানে জিকলির অস্থায়ী ঠিকানা জলপাইগুড়ির অতিথি লজ। মঙ্গলবার তাকে দেখা গেল জলপাইগুড়ি জেলার পশ্চিম শালবাড়ি ফুটবল মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাস্থলে ফ্রিস্কিংয়ের কাজে। রাজ্য পুলিসের এক পদস্থ কর্তা জানান, ওরা ‘অ্যাসেট’। ডাইরেক্টর সিকিউরিটির অফিস থেকে ওদের সকলের জন্য এসি ঘর দেওয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে তার পরের বিষয়টি নির্ভর করে জেলা পুলিসের উপর। ফলে জিকলির ভাগ্যে স্বস্তি জুটলেও জলির প্রবল অস্বস্তিই সম্বল।
  • Link to this news (বর্তমান)