• গোটা দেশকে মোদি ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়ে দিয়েছেন: মমতা
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • দেবাঞ্জন দাস, শিলচর: বিরোধিতার মানে ‘ডিটেনশন’! বিরোধিতার মানে হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো আরও অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জেলবন্দি দশা। ডিটেনশন। এটাই এখন দেশের রাজনৈতিক বাতাবরণ। গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষ ক্রমেই বদলে যাচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে—এমনটাই মনে করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উদ্বেগজনর পরিস্থিতিই বরাক উপত্যকার শিলচরের প্রচার সভা থেকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেন তিনি। বললেন, ‘আর কতজনকে জেলে পুরবেন? এনআরসি পর্বে অসমে করেছিলেন। এখন তো গোটা দেশটাকেই ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়ে ফেলেছেন!’ ‘স্বদেশি’ নাকি ‘বিদেশি’—নাগরিকত্ব যাচাই পর্বে ডিটেনশন ক্যাম্পের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে দক্ষিণ অসমের কাছাড় জেলার। সেই জেলার সদর শিলচরের টাউন ক্লাব ময়দানের ভিড়ে ঠাসা জমায়েতে নাম না করে যেভাবে মমতা তোপ দেখেছেন, তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 

    ভোট প্রচারে এদিনই অসমের অপর প্রান্ত নলবাড়িতে ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে যখন প্রধানমন্ত্রী ‘গ্যারান্টি’র ফিরিস্তি দিচ্ছেন, শিলচরে যেন নির্বাচনী ফলের দেওয়াল লিখনই সেরে ফেললেন বাংলার অগ্নিকন্যা। তাঁর প্রত্যয়ী বার্তা—‘মহাজোট ইন্ডিয়া ক্ষমতায় আসছে। এই জোটকে নেতৃত্ব দেবে তৃণমূল। ক্ষমতায় এসেই আমরা এনআরসি, ডিটেনশন ক্যাম্প, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি—সব তুলে দেব।’ এবারের ভোটপর্বে নিজের উপলব্ধি সবার সঙ্গে ভাগ করে মমতা বলেছেন—‘এমন কলুষিত নির্বাচন কখনও দেখিনি। এজেন্সির জুজু দেখানো চলছেই। একটা সরকার, বাই দ্য এজেন্সি, ফর দ্য এজেন্সি, অব দ্য এজেন্সি। কেন্দ্রে দাঙ্গাবাজ, ভাঁওতাবাজ, লুটেরা আর ধান্ধাবাজদের সরকার চলছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘গোটা দেশ রক্তাক্ত, গুজরাত থেকে অসম। মণিপুরের মেয়েরা আজও বিচারের প্রতীক্ষায়। কে দেবে তাঁদের জাস্টিস? মোদি?’ এবার কটাক্ষের সুর মমতার গলায়—‘মোদি জাস্টিস দেবেন, বিশ্বাস করেন? করবেন না। আমি মারা গিয়েছি শুনলে, বিশ্বাস করে নেবেন। কিন্তু মোদি সুবিচার করবেন, একদম বিশ্বাস করবেন না!’ 

    দলীয় প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাসের সমর্থনে এদিন শিলচর এসেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। দাপুটে কংগ্রেস নেতা প্রয়াত সন্তোষমোহন দেবের কন্যা রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেবের কাঁধেই বরাক উপত্যকায় জোড়াফুল চাষের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা। একজন পঞ্চায়েত সদস্যও নেই গোটা জেলায়। এহেন কাছাড়ে যে জমায়েত এদিন হয়েছিল, তাতে দৃশ্যত তৃপ্ত তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেও। স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে বিহু ও ধামাইল নাচে পা মিলিয়েছেন, তালিও দিয়েছেন। আবেগ, উচ্ছ্বাস আর হর্ষধ্বনিতে যোগ্য সঙ্গত করেছেন বরাকবাসী। জনতার সাহচর্যে ভরসা পেয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘বিজেপি হটাও, দেশ বাঁচাও। কারণ, এবার ক্ষমতায় ফিরলে মোদি আর ভোট করতে দেবেন না। জিতলে গণতন্ত্র থাকবে না। উনি একাই বেচে দেবেন দেশ।’ কীভাবে বিজেপি হটানো সম্ভব, সেই ফর্মুলাও দিয়েছেন নেত্রী। বলেছেন, ‘ওরা (বিজেপি) ভয় দেখায়, আরও দেখাবে। কখনও ধর্মের নামে, কখনও আবার এজেন্সি দিয়ে। এটাই ওদের একমাত্র উপায়।’ মমতার নিদান—‘রোজ রোজ ভয় পাওয়া কেন? কাকে ভয়! জীবনে একবারই মৃত্যু হবে। তাই এবার সবাই একজোট হোন। ভয় কাটিয়ে রুখে দাঁড়ান। গণতন্ত্র ফিরবেই!’
  • Link to this news (বর্তমান)