• এনআরসিতে নাম নেই! মেয়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে সংশয়ে সহদেব, পাসপোর্ট হচ্ছে না নয়ন আলির
    বর্তমান | ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • রাহুল চক্রবর্তী, বঙ্গাইগাঁও: অসমের বহু মানুষের কাছে এনআরসি এক বিভীষিকার নাম! কোনও পরিবারের চারজনের মধ্যে দু’জনের নাম বাদ গিয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে আবার পরিবারের ১০ জন সদস্যের মধ্যে একজনের নাম ওঠেনি এনআরসিতে। সেই থেকে সমানে ভোগান্তি আর হেনস্তার শিকার হয়ে চলেছেন তাঁরা। সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাঁচতে গিয়ে প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে তাঁদের। দেশজুড়ে সাধারণ নির্বাচনের দামামার মধ্যে অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই নিজেদের মতো করে লড়ছেন উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের বহু মানুষ। 

    বঙ্গাইগাঁও জেলার ঢালিগাঁওয়ের নিতান্ত দরিদ্র পরিবারের সদস্য নয়নউদ্দিন আলি। তাঁর জন্ম এই জেলাতেই। ভোটার তালিকায় নামও রয়েছে। পরিবারের ১০ জন সদস্যের মধ্যে ন’জনেরই নাম উঠেছে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসিতে। একমাত্র ‘হতভাগ্য’ সদস্য তিনি, যাঁর নাম ওঠেনি। চাঁপাগুড়ি স্টপেজের সামনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘আমি কাজ করতে যাব বাইরে। পাসপোর্ট করাতে পারছি না। সরকারি অফিসে গেলে বলছে, এনআরসির কাগজপত্র দেখান। আমার ভোটার কার্ড তো আছে। তখন সরকারি অফিসাররা বলছেন, এনআরসিতে নাম বাদ পড়েছে। কবে এই সমস্যার সমাধান হবে, জানি না।’ 

    গুয়াহাটির বাসিন্দা সহদেব দাস। তাঁর পরিবারের দু’জন সদস্যের নাম বাদ পড়েছে এনআরসিতে। তাঁর মেয়ে বছর আঠারোর কোয়েল দাস দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। সেই স্কুলপড়ুয়া কিশোরীর নামই বাদ পড়েছে এনআরসিতে। তাঁদের পরিবারের আরও এক সদস্য, জ্যোতির্ময় দাস বিএসসি পড়ছেন এখন। তিনিও বাদ পড়েছেন। সহদেববাবু বললেন, ‘আমাদের ঘরে দু’টি ছেলে-মেয়ের উচ্চশিক্ষার পথ আটকে গিয়েছে এই এনআরসির জন্য। ওদের আধার কার্ড করাতে সমস্যা হচ্ছে, পার্মানেন্ট রেসিডেনসিয়াল সার্টিফিকেটও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে না ওদের নামে। ওরা পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে চায়। সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এনআরসি।’ সন্তানদের নাম কেন বাদ পড়ল, তা আজও জানেন না সহদেববাবু। তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী সবার সেই সামর্থ্য 

    নেই। যেমন নেই  নয়নউদ্দিনেরও। তাই তাঁর মতো বহু মানুষের কাছে একমাত্র উপায়, সরকারি অফিসের দিকে তাকিয়ে থাকা আর হতাশা ও গ্লানির জীবন!  

    স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একটা সময় গুয়াহাটির ভাঙাগড়ে এনআরসি অফিসে প্রতিদিন ভিড় জমাতেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বড় বড় হরফে নোটিস— অফিসের স্থান পরিবর্তন হয়েছে। নতুন অফিস বেলতলা-বশিষ্ঠ হাউসফেড কমপ্লেক্সে। অসমে এনআরসির প্রাক্তন স্টেট কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেবশর্মা বলেন, ‘৩ কোটি ৩০ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৬২ জন আবেদন করেছিলেন। তালিকার অন্তর্ভুক্ত হন ৩ কোটি ১১ লক্ষ ৪ হাজার ৮১১ জন। বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ ২২ হাজার ৮৫১ জন। মামলা-মোকাদ্দমায় এখনও অনেকের ভবিষ্যৎ ঝুলে রয়েছে।’ বর্তমান স্টেট কো-অর্ডিনেটর পার্থপ্রতীম মজুমদারের কথায়, ‘আগে এনআরসি নিয়ে রাজনৈতিক 

    দলের অনেক আন্দোলন হতো। এখন তো কিছুই নেই। মনে হচ্ছে ডেড ইস্যু হয়ে গিয়েছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)